Advertisement
১১ মে ২০২৪

‘বাবা হয়ে কেউ এমন কাজ করতে পারে!’

বৃহস্পতিবার এসএসকেএম হাসপাতালে মৃত শিশুটির দেহের ময়না-তদন্ত হয়, যার প্রাথমিক রিপোর্ট থেকে জানা গিয়েছে, ওই শিশুকে খুনই করা হয়েছে। তার কাঁধ থেকে কনুই পর্যন্ত দু’টি হাতের ‘হিউমেরাস’ হাড় ভাঙা। মাথার খুলিতেও আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০১৯ ০১:২০
Share: Save:

কন্যাসন্তান হওয়ায় স্বামীর গঞ্জনা সইতে হত প্রায় নিয়মিত। মাস দুই আগে সেই স্বামী অ্যাসিড ছুড়ে স্ত্রীকে মেয়ে-সহ মেরে ফেলারও হুমকি দিয়েছিল বলে অভিযোগ। নিত্যদিনের এই নির্যাতন থেকে একরত্তি মেয়ে ও নিজেকে বাঁচাতে দক্ষিণ বন্দর থানায় অভিযোগও দায়ের করেছিল বছর ষোলোর কিশোরী বধূ।

পুলিশ অভিযুক্ত স্বামীকে থানায় ডেকে শোধরানোর পরামর্শও দিয়েছিল। কিন্তু সংসারে অশান্তি বন্ধ হয়নি। এর পরে শুধু মেয়ে হয়ে জন্মানোর ‘অপরাধে’ বুধবার সকালে নিজের বাবার হাতেই খুন হতে হল তিন মাস সতেরো দিনের একরত্তি শিশুটিকে। মৃতার মায়ের অভিযোগের ভিত্তিতেই বাবা শেখ রাজুকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃতকে বৃহস্পতিবার আলিপুর আদালতে তোলা হলে বিচারক ১৪ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন।

বৃহস্পতিবার এসএসকেএম হাসপাতালে মৃত শিশুটির দেহের ময়না-তদন্ত হয়, যার প্রাথমিক রিপোর্ট থেকে জানা গিয়েছে, ওই শিশুকে খুনই করা হয়েছে। তার কাঁধ থেকে কনুই পর্যন্ত দু’টি হাতের ‘হিউমেরাস’ হাড় ভাঙা। মাথার খুলিতেও আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে, পেশায় ভ্যানচালক শেখ রাজু বছর দু’য়েক আগে খিদিরপুরের বাবুবাজার এলাকার চোদ্দো বছরের এক কিশোরীকে বিয়ে করে। এটি তার দ্বিতীয় বিয়ে। আগের পক্ষের স্ত্রী মারা গিয়েছেন। তাঁর ও রাজুর একটি মেয়ে রয়েছে। সেই মেয়ে তার দিদিমার কাছে থাকে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, দ্বিতীয় বিয়ে করার পরে রাজু দক্ষিণ বন্দর থানা এলাকার কোল বার্থ রোডে একটি বাড়ি ভাড়া করে থাকতে শুরু করে। বৃহস্পতিবার দুপুরে ওই পাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, রাজুর ঘর তালাবন্ধ। এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, মেয়ে হওয়ার পর থেকেই ওই বাড়িতে অশান্তি লেগে ছিল। রাজু মত্ত অবস্থায় তার স্ত্রীর উপরে অত্যাচার করত।

এ দিন দুপুরে শিশুটির দেহ নিতে এসএসকেএমের মর্গে এসেছিল তার কিশোরী মা। তার কথায়, ‘‘রাজু আমাকে ভালবেসে বিয়ে করেছিল। কিন্তু মেয়ে হওয়ার পরেই ও আমার উপরে অত্যাচার শুরু করে। বলত, ছেলে হলে ভাল হত। মাস দু’য়েক আগে মেয়েকে আর আমাকে অ্যাসিড ছুড়ে মেরে ফেলারও হুমকি দিয়েছিল। ভয় পেয়ে আমি থানায় একটা জিডি (জেনারেল ডায়েরি) করেছিলাম। পুলিশও রাজুকে অনেক বুঝিয়েছিল। ও শুধরে যাবে, সেই আশায় ছিলাম। কিন্তু রাজু নিজেকে বদলাল না। মেয়েটাকে শেষে মেরেই ফেলল।’’

কথা বলার মাঝেই চোখ ছলছল করে ওঠে মায়ের। ওড়না দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে সে বলে, ‘‘টাকার অভাবে নিজেরা লেখাপড়া করতে পারিনি। তাই ভেবেছিলাম, মেয়েটাকে ভাল করে পড়াব। কিন্তু রাজু সব শেষ করে দিল। ওকে আমি কোনও দিন ক্ষমা করতে পারব না। বাবা হয়ে কেউ এ কাজ করতে পারে! ওর কঠোর সাজা হোক।’’

ওই কিশোরী বলে, ‘‘বুধবার সকালে মেয়ের দুধ কেনার জন্য স্বামীর কাছে টাকা চাইলাম। ও মত্ত অবস্থায় ছিল। আমার কথা শুনেই মেয়ের দুটো হাত মুচড়ে বিছানায় ছুড়ে ফেলে। বাধা দিতে গেলে আমাকেও মারধর করে। মেয়ের চিৎকার শুনেও আশপাশের কেউ কিন্তু এগিয়ে আসেননি। কিছু ক্ষণ পরে মাকে ফোন করে সব জানাই।’’ এর পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় শিশুটিকে প্রথমে দক্ষিণ কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ও পরে এসএসকেএমে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Murder Police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE