Advertisement
১১ মে ২০২৪
হাওড়া-হুগলি

বিসর্জন-নিরাপত্তায় ভিন্ন মেরুতে দুই প্রতিবেশী জেলা

গঙ্গার পশ্চিম কোল ঘেঁষে রয়েছে প্রতিবেশী দুই জেলা। কিন্তু বিসর্জনের আয়োজনের নিরিখে দু’টির অবস্থান দু’দিকে! কলকাতার মতো পেশাদারি পথে হেঁটে এ বার বিসর্জনে কোনও গোলমাল ঘটতে দেয়নি হাওড়া। জলে ডুবে মৃত্যুর ঘটনাও নেই। কিন্তু হুগলিতে এ বারও মারা গিয়েছেন দু’জন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০১৬ ০২:৪৯
Share: Save:

গঙ্গার পশ্চিম কোল ঘেঁষে রয়েছে প্রতিবেশী দুই জেলা। কিন্তু বিসর্জনের আয়োজনের নিরিখে দু’টির অবস্থান দু’দিকে!

কলকাতার মতো পেশাদারি পথে হেঁটে এ বার বিসর্জনে কোনও গোলমাল ঘটতে দেয়নি হাওড়া। জলে ডুবে মৃত্যুর ঘটনাও নেই। কিন্তু হুগলিতে এ বারও মারা গিয়েছেন দু’জন। পুলিশ, বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর বদলে ব্যান্ডেলের চাঁদনি ঘাটে ডুবে যাওয়া ওই দু’জনের দেহ উদ্ধার করেন স্থানীয় মাঝিরাই।

কী ভাবে পারল হাওড়া? কেনই বা হুগলি পারল না?

হাওড়া পুরসভা ও পুলিশ কমিশনারেট সূত্রে খবর, বালি থেকে বটানিক্যাল গার্ডেন পর্যন্ত যে ন’টি ঘাটে বির্সজনের ব্যবস্থা ছিল, কোথাও পুজো কমিটির লোকেদের প্রতিমা বিসর্জন দিতে দেওয়া হয়নি। প্রতিমা জলে ফেলার জন্য ঘাটপিছু প্রায় ৪০ জন করে কুলির ব্যবস্থা করা হয়েছিল। পুজো কর্তাদের জল থেকে দূরে রাখতে বাঁশের ব্যারিকেড, প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। সব ক’টি ঘাটেই বসানো হয়েছিল চার-ছ’টি সিসিটিভি। বিপদ ঠেকাতে কলকাতা পুলিশের বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের প্রশিক্ষিত ডুবুরি, মোটরচালিত নৌকা এবং পুরসভার সাফাই দফতরের কর্মীরাও ছিলেন।

হাওড়া পুলিশের ডিসি (ট্রাফিক) সুমিত কুমার বলেন, ‘‘বিপদ এড়াতে আমরা হোমওয়ার্ক করে নিরাপত্তার ব্লু-প্রিন্ট তৈরি করেছিলাম। মানুষের সদিচ্ছাও আমাদের সাহায্য করেছে।’’ এ বার কন্ট্রোল রুম থেকে টানা নজরদারি করে হাওড়া শহরে যানজটও রুখে দিয়েছে পুলিশ। শোভাযাত্রার জন্য নির্দিষ্ট রুট ম্যাপও করে দেওয়া হয়েছিল। কোনও বিপদ ছাড়াই বিসর্জন-পর্ব মিটে যাওয়ায় পুলিশকে কৃতিত্ব দিচ্ছেন আমজনতা।

হাওড়া গ্রামীণ এলাকাতেও এ বার বিসর্জনে কোনও বিপদের খবর নেই। প্রশাসন জানিয়েছে, উলুবেড়িয়া পুরসভা তাদের ৮টি ঘাটে পুরসভার কর্মী, ভুটভুটি, বিপর্যয় মোকাবিলার দল রেখেছিল। লাগানো হয়েছিল প্রচুর আলো। কুলির ব্যবস্থা না থাকলেও নজরদারি ও পরিকাঠামোর সুবাদে বিপদ এড়ানো গিয়েছে বলে মনে করছেন প্রশাসনের কর্তারা। অন্য নদী বা খালগুলিতেও কেউ ডুবে যাননি।

হুগলির ঘাটগুলিতে অবশ্য প্রতিমা বিসর্জন করেছেন পুজো কমিটির আনকোরা লোকেরাই। এমনিতেই গঙ্গার ঘাটগুলি বিসর্জনের উপযুক্ত কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তার উপরে পুজো কমিটির আনকোরা লোকেরা প্রতিমা জলে ফেলতে গিয়ে সমস্যায় পড়েন। ফলে প্রায় ফি বছরই জলে ডুবে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এ বারও গত বৃহস্পতিবার ব্যান্ডেলের চাঁদনি ঘাটে বালির মোড়ের দু’জন ডুবে যান। এর বাইরে পড়ে গিয়ে চোট পাওয়া, হাত-পা কেটে যাওয়ার মতো বিপত্তি তো আছেই।

পুলিশ সূত্রের খবর, বিসর্জনে আসা বহু লোকই নেশাগ্রস্ত থাকেন। ফলে টাল সামলাতে না পেরে জলে পড়ে বিপদ ঘটে। অনেকে হুজুগেও জলে নেমে পড়েন। একমাত্র ব্যারিকে়ড করে লোকজনকে আটকানো এবং কুলি দিয়ে বিসর্জন দেওয়ার ব্যবস্থা হলেই এই বিপদ ঠেকানো সম্ভব। কিন্তু এত কিছু জানা সত্ত্বেও পুলিশ বা প্রশাসনের তরফে বন্দোবস্ত থাকে না। বহু ক্ষেত্রে সিভিক ভলান্টিয়ার দিয়েই কাজ চালানো হয়।

হুগলি-চুঁচুড়া পুরসভার চেয়ারম্যান গৌরীকান্ত মুখোপাধ্যায় জানান, তাঁদের অধীনস্থ ১০টি ঘাটে বিসর্জনের ব্যবস্থা করা হয়। পুরকর্মী থেকে আলো, সব ব্যবস্থা রাখা হয়। তবে পুজো উদ্যোক্তারাই যে প্রতিমা জলে ফেলার কাজ করেন, তা মেনে নিয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে তাঁর দাবি, দুর্ঘটনার আশঙ্কার কথা মাথায় রেখে সব ধরনের নজরদারি চালানো হয়। ‘‘তবে জেলায় নিরঞ্জনের ক্ষেত্রে কলকাতার মতো ওই ব্যবস্থা করা গেলে দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থাকে না,’’ বলছেন পুরপ্রধান। একই সুর চন্দননগর পুরসভার চেয়ারম্যান রাম চক্রবর্তীর গলাতেও। তিনি বলেন, ‘‘জগদ্ধাত্রী পুজোর বিসর্জনের জন্য রানিঘাটে বিসর্জনের উপযুক্ত করে ঘাট নির্মাণ করা হয়েছে। নজরদারিও থাকে।’’

উত্তরপাড়া পুর-কর্তৃপক্ষের অবশ্য দাবি, তাঁরা গঙ্গায় কুলির ব্যবস্থা রেখেছিলেন। তাঁরাই প্রতিমা বিসর্জন করেন। কিন্তু ফাঁক-ফোকর গলে পুজোকর্তাদের অনেকে জলে নেমেছিলেন, এ কথা অস্বীকার করেছেন তাঁরা। পুরপ্রধান দিলীপ যাদব বলেন, ‘‘কী ভাবে আরও নিরাপদে বিসর্জন করা যায়, তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Hooghly Security Not Arranged Idol Immersion
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE