উদ্যোগী: ফুটপাত থেকে প্লাস্টিক খুলে নিচ্ছেন হকারেরাই। মঙ্গলবার, হাতিবাগানে। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য
তাইল্যান্ডের আদলে সার দেওয়া অস্থায়ী ছাতা। তার তলাতেই চলবে বিকিকিনি। ভবিষ্যতে এমন দৃশ্যই দেখা যেতে পারে গড়িয়াহাট এলাকায়। প্লাস্টিকের পরিবর্তে হকারদের মধ্যে ওই ধরনের ছাতাকে জনপ্রিয় করে তোলার চেষ্টা করবে কলকাতা পুর প্রশাসন। মঙ্গলবার এমনই জানালেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম।
গড়িয়াহাট-অগ্নিকাণ্ডের প্রেক্ষিতে এ দিন হকার ইউনিয়নের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন মেয়র। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়েছে, প্লাস্টিকের পরিবর্তে ওই ধরনের ছাতা প্রাথমিক ভাবে গড়িয়াহাট এলাকার হকারদের দেওয়া হবে। তার পরে সারা শহরেই ওই ছাতা চালু করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ দিন মেয়র বলেন, ‘‘বর্ষার সময় একটা অসুবিধা হয় ঠিকই। কিন্তু তাই বলে প্লাস্টিক কোনও মতেই ব্যবহার করা যাবে না। তাইল্যান্ড বা বিদেশের রাস্তার পাশে যে রকম চৌকো ছাতা দেখা যায়, প্রয়োজন হলে হকারেরা সেই ছাতা ব্যবহার করবেন। ওই ছাতার নির্মাতাদের সঙ্গেও আমরা কথা বলব।’’
তবে আদৌ এই প্রকল্প কতটা বাস্তবায়িত হবে, তা নিয়ে পুর প্রশাসনের একাংশের মধ্যেই প্রশ্ন জেগেছে। কারণ, পুরসভারই নাকের ডগায় নিউ মার্কেটে প্লাস্টিক টাঙিয়ে অবাধে কেনাবেচা চলছে। বাগড়ি মার্কেটের অগ্নিকাণ্ডের পরে তা নিয়ে প্রশ্নও উঠেছিল। কিন্তু তাতেও সেখানকার হকার-রাজত্বে বিন্দুমাত্র প্রভাব পড়েনি। হকার বসার ক্ষেত্রে পুর আইন যে লঙ্ঘিত হচ্ছে তা মানছেন পুরকর্তারাও। এক পদস্থ কর্তার কথায়, ‘‘পুর আইনের ৪২৯ ধারা অনুযায়ী মার্কেটের সীমানার ৪৫ মিটারের মধ্যে কোনও হকার বসতে পারবেন না। কিন্তু কোন জায়গাতে সেই নিয়ম মানা হচ্ছে? পুরসভার সামনেই তো প্লাস্টিক বন্ধ করা যাচ্ছে না!’’
যদিও মেয়র এ দিন সার্বিক হকার নীতি প্রণয়নের কথা বলেছেন। সে কারণে রাস্তা ভিত্তিক হকার-সমীক্ষা, হকারদের বৈধ লাইসেন্স দেওয়া থেকে শুরু করে ফুটপাতের দুই-তৃতীয়াংশ জায়গা পথচারীদের জন্য ছেড়ে রাখা, অফিসযাত্রীদের সুবিধার্থে রাত্রিকালীন হকারি চালু করা, গুরুত্বপূর্ণ ট্র্যাফিক মোড়গুলিতে ৫০ ফুট জায়গা ছেড়ে দেওয়া-সহ ধাপে-ধাপে এক গুচ্ছ নীতি প্রণয়নের কথা বলেন মেয়র। তবে সেখানেও সংশয় প্রকাশ করেছেন পুর কর্তাদের একাংশ। এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘এ সব নতুন কিছুই নয়। গত চার বছর ধরেই এ সব শোনা যাচ্ছে।’’ এ দিনের বৈঠকে উপস্থিত হকার নেতা শক্তিমান ঘোষ বলেন, ‘‘প্লাস্টিক ব্যবহার সমর্থন করি না আমরা। কিন্তু কোথায় হকার বসবে, আর কোথায় বসবে না, হকার লাইসেন্স কারা পাবে—সবই টাউন ভেন্ডিং কমিটি ঠিক করবে।’’
এ দিনের ওই বৈঠকে গড়িয়াহাটের ক্ষতিগ্রস্ত হকাররাও ছিলেন। সে প্রসঙ্গে মেয়র জানান, গড়িয়াহাটে ক্ষতিগ্রস্ত হকারদের অনেকেরই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নেই। পুলিশের হকার-তালিকা যাচাই করে খুব দ্রুত নতুন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলে দিয়ে আরটিজিএস-এর মাধ্যমে তাঁদের ২০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। চাকা লাগানো স্টলও তাঁদের হাতে দ্রুত তুলে দেওয়া হবে বলে ফিরহাদ জানিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy