Advertisement
১১ মে ২০২৪

হাসপাতালে পৌঁছে দেখা গেল, মেয়ে মর্গে

ছ’মাস আগে বিয়ে হওয়া ওই তরুণীর এই অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় খুনের অভিযোগ তুলেছে তাঁর পরিবার। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতার নাম অনন্যা কোলে (১৯)।

কন্যাহারা: হাওড়া পুলিশ মর্গের সামনে শোকার্ত তাপসী কোলে। শুক্রবার। (ইনসেটে) স্বামী সঞ্জুর সঙ্গে অনন্যা। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

কন্যাহারা: হাওড়া পুলিশ মর্গের সামনে শোকার্ত তাপসী কোলে। শুক্রবার। (ইনসেটে) স্বামী সঞ্জুর সঙ্গে অনন্যা। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০১৯ ০০:৪৮
Share: Save:

মা রাতে মেয়েকে ফোন করে জন্মাষ্টমীর পুজোর জন্য বাড়িতে আসতে বলেছিলেন। আসবেন বলে জানিয়েছিলেন মেয়েও। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাত পৌনে একটা নাগাদ শিবপুর থানা থেকে ফোন করে জানানো হয়, তাঁদের মেয়ে গলায় কাপড়ের ফাঁস দিয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন। দেহ হাওড়া জেলা হাসপাতালে রয়েছে। এর পরে ওই তরুণীর বাড়ির লোকজন যখন হাসপাতালে পৌঁছন, তত ক্ষণে দেহ হাসপাতালের মর্গে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে।

ছ’মাস আগে বিয়ে হওয়া ওই তরুণীর এই অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় খুনের অভিযোগ তুলেছে তাঁর পরিবার। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতার নাম অনন্যা কোলে (১৯)। তিনি কলকাতার একটি কলেজে হিসাবশাস্ত্রে স্নাতকের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। অভিযোগ পেয়ে অনন্যার স্বামী সঞ্জু রায় ও শ্বশুর বাপি রায়কে আটক করেছে পুলিশ।

পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, তাদের অমতে গত ১০ ফেব্রুয়ারি শিবপুরের বৈষ্ণবপাড়া লেনের বাসিন্দা সঞ্জুকে বিয়ে করেন অনন্যা। অভিযোগ, বিয়ের পরেই ৫০ হাজার টাকা পণের দাবিতে শ্বশুরবাড়িতে অনন্যার উপরে মানসিক ও শারীরিক অত্যাচার শুরু হয়। টাকা না পেয়েই অনন্যাকে খুন করে, আত্মহত্যার ঘটনা বলে চালানোর জন্য গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে শিবপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে তাঁর পরিবার। তাঁরা জানিয়েছেন, অনন্যার শ্বশুরবাড়িতে একটিই মাত্র ঘর। সেখানেই শ্বশুর, শাশুড়ির সঙ্গে থাকতেন সঞ্জু ও অনন্যা। যেখানে সকলে একসঙ্গে থাকেন, সেখানে অনন্যা কী ভাবে আত্মহত্যা করলেন, সেই প্রশ্ন তুলেছে তাঁর পরিবার।

পুলিশ জানায়, শুক্রবার এক ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে মৃতদেহের সুরতহাল হয়েছে। ময়না-তদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পরে মৃত্যুর কারণ বোঝা যাবে।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত তরুণীর বাড়ি জগাছা থানা এলাকার ইছাপুর উত্তর-পশ্চিম পাড়ায়। ২০০৯ সালে স্বামীর মৃত্যুর পরে অনন্যার মা তাপসী কোলে নিজেদের কারখানা চালিয়ে এক ছেলে ও এক মেয়েকে বড় করেন। তাঁদের পরিবার সচ্ছল। সঞ্জু কোনও চাকরি করত না বলে তাঁরা বিয়েতে আপত্তি করেন।

শুক্রবার হাওড়া পুলিশ মর্গে মেয়ের মৃতদেহের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়ে তাপসীদেবী বলেন, ‘‘বিয়ের পর থেকেই টাকা দেওয়ার জন্য সঞ্জু চাপ দিচ্ছিল। মাঝেমধ্যেই টাকা চেয়ে পাঠাত। কিন্তু ওরা যে মেয়েটাকে মেরে দেবে বুঝতে পারিনি।’’

মৃতার দাদা অবিনাশের অভিযোগ, ‘‘বিয়ের পর থেকেই স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি ও এক খুড়তুতো ননদ বোনের উপরে অত্যাচার করত। প্রতিবাদ করায় আমায় এবং মাকে অ্যাসিড ছুড়ে খুন করার হুমকিও দিয়েছে সঞ্জু। আমরা ভয়ে ভয়েই থাকতাম।’’ অবিনাশ জানান, কয়েক মাস আগে অনন্যার পায়ে ফুটন্ত তেল ঢেলে দেয় সঞ্জু। ঘুষি মেরে মুখও ফাটিয়ে দেয়। এই ঘটনার পরে জগাছা থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল। কিন্তু শ্বশুরবাড়ির পক্ষ থেকে ক্ষমা চেয়ে অনন্যাকে ফের বৈষ্ণবপাড়ায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death Suicide Police Woman
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE