আজ থেকে প্রায় চার দশক আগে এক্ষণ পত্রিকায় পথের পাঁচালী ও অপরাজিত-র চিত্রনাট্য যখন প্রকাশিত হয়, তখন প্রোডাকশন ম্যানেজার অনিল চৌধুরী-কথিত ছবি দু’টির প্রস্তুতিপর্বের কাহিনিও ছাপা হয়েছিল। তার পর এত বছর ধরে অপু-ত্রয়ী সম্বন্ধে বিস্তর চর্চা হওয়া সত্ত্বেও অনিলবাবুর স্মৃতিচিত্রের মূল্য বিন্দুমাত্র হ্রাস পায়নি। পাবেই বা কেন? ব্যবস্থাপক, টেকনিশিয়ান বা সহকারীরা নিজেদের বিভিন্ন অবস্থান থেকে ছবি তৈরির যে সব দিক লক্ষ করেন, তার অধিকাংশই পরিচালক বা অভিনেতার নজরে পড়ে না। অথচ চলচ্চিত্র-নির্মাণের ইতিহাস জানতে আমরা শুধু শেষোক্তদেরই দ্বারস্থ হই। দু’-এক জন প্রখ্যাত ক্যামেরাম্যান ছাড়া বাংলা চলচ্চিত্রশিল্পের টেকনিশিয়ান ও সহকারীদের গবেষক, সাংবাদিক বা সমালোচকরা চিরকালই উপেক্ষা করেছেন। অনিল চৌধুরীর স্মৃতিচারণের পরও তাঁর কাছ থেকে সত্যজিতের অন্যান্য ছবির নেপথ্য কাহিনি সঞ্চয় করে রাখার প্রয়াস কেউ করেছিলেন বলে জানি না।
এই নির্দেশক ও অভিনেতা-সর্বস্ব চলচ্চিত্রচর্চার স্রোতে সহযাত্রীর কথা এক আশ্চর্য ব্যতিক্রম। তথ্যসমৃদ্ধ, উপাদেয় এ বইটিতে পশ্চিমবঙ্গের চলচ্চিত্রশিল্পের নানা স্তরের নানা কর্মীর বৈচিত্রময় জীবন ও কার্যকলাপের বর্ণনা দিয়েছেন সম্প্রতি প্রয়াত রমেশ (পুনু) সেন। তাঁর নাম চিরতরে জড়িয়ে আছে সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে— পথের পাঁচালী-র সম্পাদক দুলাল দত্তের সহকারী হয়ে সত্যজিতের বৃত্তে প্রবেশ করলেও নায়ক-পরবর্তী বহু ছবিতে ছিলেন পরিচালকের প্রধান সহকারী— কিন্তু শুধুই সত্যজিতের ছবিতে তিনি কাজ করেননি। সহকারী ছিলেন মৃণাল সেনের প্রথম ছবি রাত-ভোর-এ, কাজ করেছেন ঋত্বিক ঘটক ও তরুণ মজুমদারের বহু ছবিতেও। সুচিত্রা সেনের সঙ্গে ছিল ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব, উত্তমকুমারের সঙ্গেও; চিনতেন স্টুডিয়োপাড়ার প্রায় সবাইকে, চলচ্চিত্রকর্মীদের নানা আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন, এবং শেষ মুহূর্তে প্রযোজক বেঁকে না বসলে চিড়িয়াখানা-র যৌথ পরিচালক রূপেও অবতীর্ণ হতেন।
সহযাত্রীর কথা