E-Paper

সময়ের রেখা ধরে

ইতিহাসবিদ কেন হেঁশেলের খবর নিচ্ছেন, সেই উত্তর দিয়েই বই শুরু— “মানুষের জীবনে খাবার সংগ্রহের মতো জোরদার চালিকাশক্তি আর দুটি নেই।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০২৪ ১০:৪৩
—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

“অতীতকে ঘৃণা করতে শেখো, তবেই তোমরা ভাল বিপ্লবী হতে পারবে।” পুরনোকে ভেঙে নতুন যাত্রাপথের দিশা দিয়েছিলেন চারু মজুমদার, বাংলার সেই ইতিহাস এখন বিশ্বপাঠ্য। এই বই খানিক তাঁর জীবনী, খানিক বিশ্লেষণী ইতিহাস। বিপ্লবী নেতা, নকশালবাড়ির বিপ্লবভাবনা বিষয়ে ছড়িয়ে থাকা নানা তথ্য ও তত্ত্বের সমাহারে যোগ হয়েছে চারু মজুমদারের কিছু ভাষণ ও বক্তব্য— সব ক’টিরই স্থানকাল-নির্দেশ করেছেন লেখক। ভারে গুরু, কিন্তু রচনাগুণে নির্ভার— নির্মোহ না হলেও যত্নশীল এই পুনর্মূল্যায়ন।

সত্তরের স্বপ্নযোদ্ধা

চারু মজুমদার অশোক কুমার মুখোপাধ্যায়

৫০০.০০

আনন্দ

ইতিহাসবিদ কেন হেঁশেলের খবর নিচ্ছেন, সেই উত্তর দিয়েই বই শুরু— “মানুষের জীবনে খাবার সংগ্রহের মতো জোরদার চালিকাশক্তি আর দুটি নেই... [এ]কে আমাদের সামাজিক-সাংস্কৃতিক ইতিহাসের জানালা বললে আদৌ ভুল হবে না।” প্রবল আমিষাশী বাঙালির হেঁশেলেও নিরামিষের সগৌরব উপস্থিতি, ঘটি-বাঙালের রান্নার রেষারেষি, বাঙালিদের মধ্যে রেস্তরাঁয় খাওয়ার সংস্কৃতির বিবর্তন— ছোট-বড় নিবন্ধগুলি বইয়ের স্বাদ বাড়িয়েছে। নিম্নবর্গের খাদ্যাভ্যাস বিষয়ে দু’টি নিবন্ধ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন।

হেঁশেলদর্পণ: বাঙালির হাঁড়ির খবরজয়ন্ত সেনগুপ্ত

৪০০.০০

আনন্দ

চিঠি কী? স্মৃতি। লিখতেন কারা? যাঁরা বন্ধু, স্বজন, এবং দূরে আছেন, তাঁরা? না, সে এক সময় ছিল যখন কলকাতা শহরেই এখান থেকে ওখানে, ডাকে কিংবা না-ডাকে, কিংবা বাড়ি বয়ে এসে চিঠি দিয়ে যেতেন পরিচিত বা বন্ধুজন। এমনই তেরো জন মানুষের চিঠির সূত্রে তেরোটি লেখার সমন্বয় এ বই, চিঠিগুলি বুনে দেওয়া লেখার জমিতে। কল্যাণী দত্ত সন্দীপন চট্টোপাধ্যায় শঙ্খ ঘোষ পার্থপ্রতিম কাঞ্জিলাল নির্মল হালদার অরুণেশ ঘোষ জ্যোতির্ময় দত্ত নামগুলি শুনেই তাঁদের চিঠির বয়ান ও প্রতিরূপ চোখে দেখতে সাধ জাগে, তারও ইচ্ছাপূরণ এ বই। এমন সব মানুষ ও মনের কথা, চিঠিতে যাঁদের ছায়া পড়ে। এমন এক সময়ের কথা, বাঙালি যা হারিয়ে ফেলেছে চিরতরে।

চিঠিতে, স্মৃতিতে

একরাম আলি

২২৫.০০

ধানসিড়ি

মেয়েদের কথা যদি মেয়েরা সত্যিই লিখতে পারতেন! এ বইয়ের ছোট্ট ছোট্ট লেখায় ছড়িয়ে সেই সব মেয়েজীবনের কথা, ঘরে-বাইরে ‘সেন্সরড’ হতে হতে যাদের ‘নান্দনিক ঘেরাটোপে, আর্থসামাজিক কিছু কথাবার্তা লিখেই ক্ষান্ত থাকতে হয়’। দুই বান্ধবী তাই কফিশপের প্রকাশ্য নিভৃতিতে উজাড় করে সংসারের পিঞ্জরকথা: এক জন চাকরি না-করা ‘মহার্ঘ শো-পিস’প্রতিম, অন্য জন সারা দিন অফিস সেরে ঘরে ঢুকে দেখে, শাশুড়ি-সহ সারা বাড়ি অপেক্ষমাণ, বৌটি এসে চা বানালে খাবে! প্রেমাধীর ভ্যালেন্টাইন কখনও পাল্টে যায় ফ্রাঙ্কেনস্টাইনের বীভৎস দুর্দশায়, পুজোর দিনগুলোয় সকলের মধ্যে একা কোনও মেয়ের মনে পড়ে ‘বাপের বাড়ি’র কথা, কালশিটে নিয়ে পিসি বাড়ি ফিরলে মা ছোট্ট মেয়েকে পাঠিয়ে দেয় উপরে: ‘দেখছ না, পিসি রাস্তায় পড়ে গিয়েছিল!’ এ জীবনের মাপকাঠি পাল্টায়, জীবনটা পাল্টায় না।

রেলবাজার শপিংমল

চৈতালী চট্টোপাধ্যায়

১৫০.০০

দে’জ়

লাতিন আমেরিকার গল্পগুলির মধ্যে অবধারিত ভাবে উঠে আসে অস্থির রাজনীতি, টালমাটাল আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি। বইয়ের গল্পগুলিতে তারই ছায়া, অনুবাদে। দানিয়েল আভেরাঙ্গা মোন্তিয়েল, ক্রিস্তিনা পেরি রোসসি, আলেখান্দ্রো কার্পেন্তিয়ের, গ্লোরিয়া বের্নাল প্রমুখের গল্প স্থান পেয়েছে। সাধারণ মানুষের সংগ্রাম, অনুভূতি, ভাবনা রং পেয়েছে গল্পগুলোয়। অনূদিত গল্পগুলোর মধ্য দিয়ে এক ভিন্ন সংস্কৃতির মানুষের পরিচয় ঘটে আর এক ভিন্ন সংস্কৃতির সমাজমনের সঙ্গে। কিন্তু কোথাও যেন এই বইটিতে গল্পগুলির ভাষার মধ্যে সহজ সাবলীলতা কিছু কম। লাতিন আমেরিকার সাহিত্যকে বাংলায় প্রকাশ করা সহজ নয়। অনুবাদের মধ্যে অনেক জায়গাতেই সেই পেলব ছোঁয়ার অনুপস্থিতি বোঝা যায়।

লাতিন আমেরিকার প্রতিবাদের কাহিনি

অনুবাদ: জয়া চৌধুরী

১৬০.০০

সৃষ্টিসুখ

রবীন্দ্রসঙ্গীতের সঙ্গে কলিম শরাফীর নিবিড় পরিচয় রাজনীতির সূত্রে। ভারত ছাড়ো আন্দোলনে জড়িয়ে জেলে যান। এগারো মাসের জেলজীবনে সঙ্গে ছিলেন প্রণব গুহঠাকুরতা, যিনি ‘জেলে সব সময় রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইতেন’। সেখান থেকেই রবীন্দ্রগানে প্রবেশ তাঁর। যদিও রাজনৈতিক বন্দির পরিচিতি থাকায় বিশ্বভারতী তাঁকে সঙ্গীতভবনে ভর্তি নেয়নি। আইপিটিএ-র সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ ভাবে যুক্ত ছিলেন। ১৯৪৬-এর দাঙ্গায় আশ্রয় পেয়েছিলেন দেবব্রত বিশ্বাসের কাছে। কলিম শরাফীর নিজস্ব স্মৃতিকথনের সঙ্গে এই বইয়ে যুক্ত হয়েছে তাঁর সম্বন্ধে তেরো জনের স্মৃতিচারণ।

কলিম শরাফীর আত্মকথা: ভরা থাক স্মৃতি সুধায়

সম্পাদনা: মধুময় পাল

৩০০.০০

নয়া উদ্যোগ

একটি বইয়ের প্রয়োজন ছিল জন্মশতবর্ষ পেরোনো সোমনাথ হোরকে নিয়ে, তাঁর শিল্পজীবন, ভাবনা ও দর্শন যা ধরবে দু’মলাটে। সুসম্পাদিত বইটি দাবি পূরণ করেছে। রাজনীতির মাটি থেকে উঠে আসা এক জীবন যে বোধে শিল্পকে আশ্রয় করল, ক্রমে ছাপচিত্র ও ভাস্কর্যের পরিসরে আধুনিক ভারতীয় শিল্পকলাকে প্রতিষ্ঠা দিল বিশ্বে, তার মূল্যায়ন করেছেন বিশিষ্ট শিল্পী ও শিল্প-সমালোচকেরা। স্মৃতি, স্মরণ, জীবন ও শিল্প, শিল্পচিন্তা অংশগুলির নানা লেখায় তারই উজ্জ্বল উদ্ধার। আছে শিল্পীর লেখা চিঠি ও প্রবন্ধ; বিশেষ উল্লেখ্য কথোপকথন ও আলাপচারিতার ছলে শিল্পীর চারটি সাক্ষাৎকার। লেখার মাঝে মাঝে ছবিগুলি বইটিকে পূর্ণতা দিয়েছে।

শতবর্ষের আলোয় সোমনাথ হোর

সঙ্কলন ও সম্পা: সুতনু চট্টোপাধ্যায়

৫০০.০০

যাপনচিত্র

মনের স্বরূপ খোঁজার চেষ্টা করে চলেছেন দার্শনিকরা। কম্পিউটার, স্নায়ুবিজ্ঞান ও কৃত্রিম মেধার অগ্রগতি মনোদর্শন চর্চাকে নানা ভাবে প্রভাবিত করেছে। এই কালপর্বে মনোদর্শনের যে অগ্রগতি, তা-ই দর্শনের খ্যাতনামা শিক্ষক, বর্তমানে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক অমিতা চট্টোপাধ্যায়ের বইটির উপজীব্য। উদ্দেশ্য, মনোদর্শনের মূল বক্তব্য কল্পগল্পে ফুটিয়ে তোলা। বইয়ের গল্পগুলির কোনওটিই লেখকের নয়। প্রাথমিক প্রকল্প প্রমাণের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন দার্শনিক তাঁদের রচনায় কল্প-পরীক্ষণ চালিয়েছেন, তেমন বাইশটি কল্পগল্প। মন-বিষয়ক নানা সমস্যার সঙ্গে যুক্ত প্রশ্নের উত্তর পেতে এই সব ‘গল্প’-র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। মন নিয়ে সমস্যার দৃষ্টান্ত লেখক তুলে ধরেছেন রাজশেখর বসুর গল্প ‘দশকরণের বানপ্রস্থ’ অবলম্বনে। দেকার্ত অনুসারে লেখক দেখান, কী ভাবে আধুনিক দর্শনে জ্ঞানতাত্ত্বিক মোড় নেওয়া শুরু হল। আছে হ্বিটগেনস্টাইনের ‘বিটল ইন দ্য বক্স’, রবীন্দ্রনাথের ‘ইচ্ছাপূরণ’ গল্প-অনুষঙ্গ। মূল প্রবন্ধ বা বইগুলি পড়ে ফেলারও বন্দোবস্ত মজুত।

কল্পগল্পে মনোদর্শন

অমিতা চট্টোপাধ্যায়

২৫০.০০

সাহিত্য সংসদ

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy