Advertisement
০৬ মে ২০২৪

বইখাতা ফসকে পড়ল খালের জলে

ন’মাসের ছেলে রাজকে কোলে নিয়ে বাঁশের সাঁকো পার হচ্ছিলেন মা পম্পা হালদার। পা ফসকে পড়ে গিয়ে তলিয়ে যায় শিশুটি। দু’দিন পরে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূর থেকে ছেলের পচাগলা দেহ উদ্ধার হয়। সে যাত্রায় মাকে উদ্ধার করেছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

এই সেতু দিয়েই চলে পারাপার। নিজস্ব চিত্র।

এই সেতু দিয়েই চলে পারাপার। নিজস্ব চিত্র।

দিলীপ নস্কর
ডায়মন্ড হারবার শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০১৬ ০১:৪৫
Share: Save:

ন’মাসের ছেলে রাজকে কোলে নিয়ে বাঁশের সাঁকো পার হচ্ছিলেন মা পম্পা হালদার। পা ফসকে পড়ে গিয়ে তলিয়ে যায় শিশুটি। দু’দিন পরে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূর থেকে ছেলের পচাগলা দেহ উদ্ধার হয়। সে যাত্রায় মাকে উদ্ধার করেছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

দুর্ঘটনার পরে বাঁশের সাঁকো থেকে কাঠের সেতু তৈরি হয়েছিল। ডায়মন্ড হারবার ২ ব্লকের সিংহলগঞ্জ ও কালীতলা গ্রামের সংযোগকারী খোলাখালি খালের উপরে তৈরি হওয়া কাঠের সেতুটি বছরখানেক আগে আবার ভেঙে বিপজ্জনক অবস্থায় ঝুলছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তার উপর দিয়েই চলছে পারাপার। বাসিন্দাদের অভিযোগ, এবার কি ফের কোনও প্রাণের বিনিময়ে কংক্রিটের সেতু মিলবে?

ডায়মন্ড হারবার ক্যানেল ডিভিশনের সহকারী বাস্তুকার আশিস দত্ত অবশ্য বলেন, ‘‘এখনও এ বিষয়ে কোনও অভিযোগ পাইনি। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেব।’’

পারুলিয়া পঞ্চায়েতের খোলাখালি খালটি নুরপুর হয়ে হুগলি নদীতে মিশেছে। গভীর ওই খালে জোয়ার-ভাটা খেলে। প্রায় দেড়শো ফুট চওড়া খালের মোহনার মুখেই ওই সেতু। বহু বছর আগে বাঁশের সাঁকো পারাপার চলত। শিশু তলিয়ে যাওয়ার পরে কয়েক বছর আগে জেলা পরিষদ থেকে প্রায় ৮ লক্ষ টাকা খরচ করে কাঠের সেতু তৈরি করা হয়েছিল। বছর খানেক আগে নদীর জোয়ারের তোড়ে ওই কাঠের সেতুর মাঝের অংশ তলিয়ে গিয়ে চলাচলের পথ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। স্থানীয় বাসিন্দারা তড়িঘড়ি ঝাউ গাছের মোটা গুঁড়ি ফেলে, নীচে বাঁশের ঠেকা দিয়ে কোনও ভাবে পরিস্থিতি সামাল দেন। সেই থেকে ও ভাবেই চলছে।

ভাঙা সেতু পার হতে গিয়ে স্কুলের কচিকাঁচারা পা ফসকে নীচে কয়েকজন পড়েও গিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা শিশুদের উদ্ধার করায় প্রাণহানি এড়ানো গিয়েছে।

ওই নড়বড়ে সেতু দিয়ে পারাপার করেন পারুলিয়া, নুরপুর, মাথুর— তিনটি পঞ্চায়েতের প্রায় ১৫টি গ্রামের মানুষজন। এ ছাড়াও, ওই সেতু পার হয়ে রায়চক ও কুলটুকারি হাটে বহু মানুষ সব্জি নিয়ে যান। গোবিন্দপুর হাইস্কুলে যাতায়াত করে পড়ুয়ারা। রোগী নিয়ে ডায়মন্ড হারবার জেলা হাসপাতাল বা সরিষা ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে আসতে হলেও ওই সেতু পার হতে হয়। বয়স্কেরা দিনের বেলায় হাতড়ে হাতড়ে বা হামাগুড়ি দিয়ে পারাপার করেন। কিন্তু সেতুর উপরে আলোর ব্যবস্থা না থাকায় সন্ধ্যার পরে পার হওয়াটা মৃত্যুর সঙ্গে বাজি ধরারই মতো ঝুঁকিপূর্ণ।

পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র সৌরভ হালদার, সৌম্য মণ্ডলেরা জানায়, পীঠে বইয়ের ব্যাগ নিয়ে সেতু পার হতে রীতিমতো ভয় করে। এই বুঝি জলে পড়তে হবে। এ দিকে, ঘুরপথে স্কুলে যেতে অনেক সময় লেগে যায়। তাই ভাঙাচোরা সেতুই ভরসা। সুমন হালদার নামে এক ছাত্র বলে, ‘‘ক’দিন আগে আমি পা ফসকে পড়ে গিয়েছিলাম। কাকুরা আমাকে উদ্ধার করেছে। তবে বই-খাতা জলে ডুবে যায়।

কালীচরণপুরের বৃদ্ধ কৈলাস হালদার জানালেন, সেতু ভেঙে পড়ায় মেয়ের বাড়িতে যেতে পারেননি বছরখানেক ধরে। অবিলম্বে সেতুটি সারানোর ব্যবস্থা করুক প্রশাসন, দাবি তাঁর।

ডায়মন্ড হারবার ২ ব্লক তৃণমূল সভাপতি অরুময় গায়েনের এলাকা পড়ে সেতুটি। তিনি সমস্যার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘‘কাঠের সেতুটি ভেঙে পড়ার পরে আমরা নিজেরা উদ্যোগ করে কাঠের গুঁড়ি ফেলে চলাচলের মতো ব্যবস্থা করেছি। কিন্তু ওই সেতুটি কংক্রিটের না হলে আবার ভেঙে পড়বে।’’ নদীর মোহনার কাছে হওয়ায় জোয়ারের জলের ধাক্কায় বার বার সেতু ভাঙছে বলে তাঁর অনুমান। সমস্ত বিষয় জেলা পরিষদ ও সেচ দফতরকে জানানো হয়েছে বলে দাবি তাঁর। যদিও কোনও ব্যবস্থা এখনও নেওয়া হয়নি বলেই জানাচ্ছেন ভুক্তভোগী মানুষজন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Diamond Harbour
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE