Advertisement
০৭ মে ২০২৪
Coronavirus Lockdown

ঝড়ে ধ্বংস ফলের চাষ, দিশাহারা চাষিরা

বিধ্বংসী আমপান কার্যত ধবংস করে দিয়েছে বারুইপুরের ফলের চাষকে।

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

সমীরণ দাস
বারুইপুর শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০২০ ০৪:৩৭
Share: Save:

গাছে গাছে পাক ধরতে শুরু করেছিল ল্যাংড়া, হিমসাগর। ফলন শুরু হয়েছিল লিচুরও। গাছ ভরে উঠেছিল থোকায় থোকায় সাদা জামরুলে। আমপানের এক ধাক্কায় ঝড়ে গিয়েছে সব। কোথাও কোথাও ডালপালা ভেঙে উপড়ে গিয়েছে গাছও। মাথায় হাত বারুইপুর ও সংলগ্ন বিস্তীর্ণ এলাকার হাজার হাজার ফল-চাষির।

বিধ্বংসী আমপান কার্যত ধবংস করে দিয়েছে বারুইপুরের ফলের চাষকে। আম, লিচু, জামরুলের মতো মরসুমি ফলের পাশাপাশি ক্ষতি হয়েছে পেয়ারা চাষেও। বারুইপুর মহকুমা জুড়ে বছরভর পেয়ারার চাষ হয়। এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বহু মানুষের রুটিরুজি। লকডাউনেও বারুইপুর কাছারি বাজারের পাইকারি পেয়ারার বাজার চলেছে রমরম করে। ফল আনাজে ছাড় থাকায় পেয়ারা বা অন্য ফলচাষিরা তেমন ক্ষতির মুখ দেখেননি। তবে আমপানের জেরে বদলে গিয়েছে ছবিটা।

পেয়ারা বাগানে অধিকাংশ গাছই ঝড়ে পড়ে গিয়েছে বলে জানাচ্ছেন চাষিরা। বারুইপুরের পেয়ারা-চাষি প্রশান্ত দাসের কথায়, “বহু গাছে সবে ফলন এসেছিল। দিন দশেকের মধ্যেই সেই পেয়ারা তৈরি হয়ে বাজারে যাওয়ার কথা। কিন্তু তার মধ্যেই এই দুর্যোগ। বাগানের প্রায় সব গাছই পড়ে গিয়েছে। দু’একটাকে তুলে বাঁচানোর চেষ্টা করছি। তবে তা থেকে আর ফলন হবে বলে মনে হয় না। এত ঝড় হয়েছে। এ রকম ক্ষতি কোনও দিন হয়নি।”

প্রশান্ত জানান, পুরো বাগানের গাছ তুলে আবার নতুন করে গাছ বসিয়ে তা থেকে ফলন পেতে বছরখানেক লেগে যাবে। এই এক বছর কী ভাবে চলবে, নতুন করে চাষের খরচই বা কী ভাবে সামলাবেন, তা ভেবেই দিশাহারা বছর চল্লিশের এই পেয়ারা চাষি।

বারুইপুরের লিচু, জামরুল এই সময় দেশের বিভিন্ন জায়গায়, এমনকী দেশের বাইরেও রফতানি হয়। অনেক চাষি অন্যের গাছ কয়েকমাসের জন্য লিজ নিয়ে ফল ফলিয়ে রোজগার করেন। এই পরিস্থিতিতে সমস্যায় পড়েছেন তাঁরা। লিচুচাষি তপন মণ্ডলের কথায়, “পাঁচটা গাছ লিজ নিয়েছিলাম। লকডাউনে দাম কিছুটা কম পেলেও সমস্যা হচ্ছিল না। কিন্তু ঝড়ে সব লিচু পড়ে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। এ ক্ষতি কী ভাবে সামলাবো জানি না।” জামরুল চাষি প্রদীপ দাস বলেন, “খুব ভাল ফলন হয়েছিল এ বার। সব ঝড়ে গিয়েছে। গাছটাও ভেঙে পড়েছে। এই গাছে আর কোনও দিন ফলন হবে না।” চাষিরা জানান, লিচু বা জামরুলের একেকটা গাছে যা ফল ফলে, তা বিক্রি করে চাষের খরচ সামলে দশ-পনেরো হাজার টাকা পর্যন্ত লাভ হতে পারে। আম বিক্রি করেও এই সময়ে ভাল লাভের মুখে দেখেন চাষিরা। কিন্তু ঝড়ের দাপটে এ বার কার্যত পথে বসার উপক্রম তাঁদের। এই পরিস্থিতিতে বাজারে মরসুমি ফলের দাম বহুগুণ বাড়তে চলেছে বলেই চাষিদের আশঙ্কা।

বারুইপুরের গ্রামে গ্রামে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা নিষ্ঠার সদস্য মিনা দাস বলেন, “ঘরবাড়ির ক্ষতি তো হয়েইছে। পাশাপাশি ফলের বাগানগুলো কার্যত নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে। কৃষিজীবী মানুষগুলোর রুটিরুজির কী হবে, সেটাই বড় চিন্তা।”

অভিযোগ, প্রশাসনের তরফে এখনও ফলচাষিদের সাহায্যে এগিয়ে আসেনি কেউ। ব্লক দফতরের এক আধিকারিক জানান, ক্ষতির পর্যালোচনা চলছে। সেই মতো ক্ষতিপূরণের বিষয়টা বিবেচনা করা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Lockdown Cyclone Amphan Cyclone
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE