Advertisement
০৫ মে ২০২৪

ওঝার উপরে ভরসা, মৃত্যু বালিকার

হাসপাতালের সুপার শ্যামল হালদার বলেন, ‘‘এত প্রচার করা সত্ত্বেও এখনও অনেকে সাপে ছোবল মারলে রোগীকে নিয়ে ওঝা-গুনিনের কাছে ছোটেন। দ্রুত হাসপাতালে আনার পরিবর্তে ঝাড়ফুঁক করান। এর ফলে অকালে বহু মৃত্যু ঘটে।’’

নিজস্ব সংবাদদাতা
বসিরহাট শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০১৮ ০৮:২০
Share: Save:

ওঝা-গুনিনের বুজরুকির উপরে ভরসা রাখতে গিয়ে সাপের ছোবলে মৃত্যু হল এক বালিকার।

ঘটনাস্থল হাসনাবাদের পারভবানীপুর গ্রামে। নিকটবর্তী হাসপাতাল যেখান থেকে মাত্র ১৫ কিলোমিটার দূরে। অথচ, প্রায় বারো ঘণ্টা কাটিয়ে দেওয়া হল মেয়েটিকে সেখানে নিয়ে যেতে। শেষমেশ যখন স্বপ্না প্রামাণিককে (৯) নিয়ে যাওয়া হল বসিরহাট জেলা হাসপাতালে, চিকিৎসকেরা জানালেন, বড় দেরি হয়ে গিয়েছে। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে সেখানেই মারা যায় ছোট্ট মেয়েটি।

হাসপাতালের সুপার শ্যামল হালদার বলেন, ‘‘এত প্রচার করা সত্ত্বেও এখনও অনেকে সাপে ছোবল মারলে রোগীকে নিয়ে ওঝা-গুনিনের কাছে ছোটেন। দ্রুত হাসপাতালে আনার পরিবর্তে ঝাড়ফুঁক করান। এর ফলে অকালে বহু মৃত্যু ঘটে।’’ সুপার জানান, গত ছ’মাসে বসিরহাট জেলা হাসপাতালে ১২ জন সাপে কাটা রোগীকে আনা হয়েছে। ওঝার কাছে ঘুরে সময় নষ্টের জন্য মারা গিয়েছেন দু’জন। বাকিদের বাঁচানো গিয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, হাসনাবাদের মাখালগাছা পঞ্চায়েতের পারভবানীপুরে বাড়ি সুজিত প্রামাণিকের। তাঁর পোলট্রি আছে। কাপড় ব্যবসাও করেন। সুজিতের দুই ছেলে ও এক মেয়ে। মাটির মেঝে। ইটের গাঁথনির উপরে টালির চাল দেওয়া ঘর। বুধবার রাতে ওই ঘরে মা-বাবার সঙ্গে শুয়েছিল ছোট মেয়ে স্বপ্না। রাতে তার হাতে কিছু একটা কামড়ায়। ভোরে উঠে মেয়ের পেট ও ব্যথা ও বুক ব্যথা শুরু হয়। স্থানীয় এক চিকিৎসকের কাছ থেকে গ্যাসের ওষুধ এনে খাওয়ানো হয়।

অসুস্থতা না কমায় প্রতিবেশী ওঝা বিষ্টুপদ কর্মকারের কাছে স্বপ্নাকে নিয়ে যান পরিবারের লোকজন। তিনি জানান, বিষাক্ত সাপে ছোবল মেরেছে স্বপ্নাকে। গালে শিকড় পুরে শুরু হয় কেরামতি। এক সময়ে হাত তুলে দেন বিষ্টুপদ। শঙ্করপুর গ্রামে এক গুনিনের কাছে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন।

মৃতের কাকা হারান প্রামাণিক বলেন, ‘‘বিষ ঝাড়ার নাম করে শিকড়-বাকড় খাইয়ে দু’ঘণ্টার বেশি সময় নষ্ট করে ওঝা। এক সময়ে রণে ভঙ্গ দেয়। ততক্ষণে আরও নেতিয়ে পড়েছে স্বপ্না।’’

কিন্তু তখনও ওঝার উপরেই ভরসা করছে পরিবারটি। আর এক গুনিনের কাছে নিয়ে যাওয়ার তোড়জোড় শুরু হয়। পরে লোকজন ঠিক করেন, হাসপাতালেই যাওয়া হবে। বেলা ৩টে নাগাদ সেখানে ভর্তি করা হয় স্বপ্নাকে। ৪টে নাগাদ মারা যায় মেয়েটি।

বাড়ির কাছেই স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ত মেয়েটি। বাড়ি থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরেই ভবানীপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্র। ১৫ কিলোমিটারের মধ্যে পড়ে বসিরহাট জেলা এবং টাকি গ্রামীণ হাসপাতাল। তা সত্ত্বেও কেন হাসপাতালের পরিবর্তে ওঝা-গুনিনের উপরে ভরসা রেখে সময় নষ্ট করা হল, আফসোস চিকিৎসকদের।

গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্য মোসলেম মোল্লা বলেন, ‘‘সাপে কামড়ালে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য গ্রামে গ্রামে প্রচার করা হয়। শিক্ষিত পরিবারও যদি ওঝার কাছে যায়, আমরা কী করতে পারি।’’ আরও প্রচার হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death Shaman
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE