Advertisement
০৪ মে ২০২৪

কলকলিয়ে উঠুক গোটা পদ্মাই, চায় গ্রামবাসী

নাব্যতা কমে গিয়েছে। মূল স্রোতও নেই। দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে কচুরিপানায় ভরে গিয়েছিল। অবশেষে সেই কচুরিপানা পরিষ্কার করার কাজ শুরু হল। পাশাপাশি চলছে নদীবক্ষের পলি কাটার কাজও।

সংস্কার: শুরু হয়েছে পদ্মা নদীর মাটি কাটার কাজ। ছবি: সজলকুমার চট্টোপাধ্যায়

সংস্কার: শুরু হয়েছে পদ্মা নদীর মাটি কাটার কাজ। ছবি: সজলকুমার চট্টোপাধ্যায়

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য
দেগঙ্গা শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০১৭ ০২:১৪
Share: Save:

নাব্যতা কমে গিয়েছে। মূল স্রোতও নেই। দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে কচুরিপানায় ভরে গিয়েছিল। অবশেষে সেই কচুরিপানা পরিষ্কার করার কাজ শুরু হল। পাশাপাশি চলছে নদীবক্ষের পলি কাটার কাজও।

সেই মাটি দিয়ে তৈরি হবে তীর বরাবর প্রায় দেড় কিলোমিটার মাটির রাস্তা। এলাকার মানুষের দাবি, পাকাপাকি ভাবে পদ্মা নদী পুরোটাই সংস্কার করা হোক।

দেগঙ্গা ব্লকের কলসুর, চৌরাশি, বেড়াচাঁপা ১, আমুলিয়া ও সহায়-শ্বেতপুর পঞ্চায়েতের মধ্যে দিয়ে বয়ে গিয়ে পদ্মা মিশেছে বিদ্যাধরী নদীতে। দেগঙ্গা ব্লকের তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক আশাদুল সর্দার বলেন, ‘‘পদ্মা ভরে গিয়েছে পলি আর কচুরিপানায়। কিছুটা নদীর সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। নিকাশির অভাবে প্রতি বর্ষাতে প্লাবিত হয় দেগঙ্গার বিভিন্ন গ্রাম। আমরা চাই পুরো নদীই সংস্কার হোক।’’

দেগঙ্গার চৌরাশি গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা রতন মণ্ডল জানান, একসময় এই পদ্মা নদীতে খুবই স্রোত ছিল। দু-কুল ভরে থাকত টলটলে জল। কলসুর গ্রামের বাসিন্দা ফিরোজউদ্দিন বলেন, ‘‘এখন পদ্মার তীর দখল করে চলছে মাছ চাষ। মাটি ভরাট করে হয়েছে বাড়ি। ফলে নদীতে আর জোয়ার ভাঁটা হয় না। প্রায় ১২০ ফুট চওড়া নদীটি এখন কোথাও ২০, কোথাও ৩০ ফুট হয়ে গিয়েছে। জলের স্রোত না থাকায় ভরে যাচ্ছে কচুরিপানায়।”

দেগঙ্গা ব্লকের ভূমি ও ভূমি রাজস্ব উন্নয়ন দফতরের আধিকারিক আফতাব আলম বলেন, ‘‘৮টি মৌজার মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া পদ্মা এখনও কোথায় ৭০ ফুট দেখা যাচ্ছে। যারা পদ্মার পাড়ের জমি কেনা বেচা করছেন তা বেআইনি। সেই দখল জমির কোনও সরকারি রেকর্ড নথিভুক্ত করা হবে না।’’

দেগঙ্গার সংখ্যালঘু উন্নয়নের কার্যকরী সভাপতি সফর আলি জানান, এলাকার মানুষ দীর্ঘদিন ধরেই পদ্মা সংস্কারে আবেদন জানিয়েছেন। বিধানসভাতেও পদ্মা সংস্কারের প্রস্তাব ওঠে। কিন্তু কোনও কাজ হয়নি। উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের বিরোধী দলনেতা ইমতিয়াজ হোসেন বলেন, ‘‘পদ্মানদীকে দখল করে করে শাসকদলের লোকেরা ব্যক্তি মালিকানায় পরিণত করেছে। পদ্মাকে আগের রূপে ফিরিয়ে দিতে হবে। তারপর তো সংস্কার হবে।’’

এনআরজিএস প্রকল্পের তিন লক্ষ টাকায় দেগঙ্গার বেলপুর গ্রাম থেকে নন্দীপাড়া মানিকতলা হয়ে জীবনপুর বাজার পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার রাস্তা তৈরি শুরু হয়েছে। বেড়াচাঁপা ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান মুমতাজ বিবি বলেন, ‘‘আমরা রাস্তা তৈরির আবেদন জানিয়েছিলাম। রাস্তা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু এলাকাবাসীর দাবি পদ্মা নদী পুরোটাই সংস্কার করতে হবে। রাজ্য সরকারে কাছে সবকটি পঞ্চায়েত মিলে আবেদন জানালে হয়তো গোটা নদী সংস্কারের কাজ হবে।’’

দেগঙ্গার ব্লক উন্নয়ন আধিকারিক মনোজকুমার বলেন, ‘‘কয়েকটি পঞ্চায়েত থেকে প্রায় দশ কিলোমিটার নদীর পানা পরিষ্কারের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। শীঘ্রই সে কাজ
শুরু হবে।’’

তবে এ বার পদ্মা সংস্কার করা হচ্ছে দেখে আশাবাদী গ্রামের মানুষ। তাঁরা মনে করেন হয়তো বন্যার হাত থেকে এ বার গ্রামগুলি বাঁচবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Deganga Dredging Padma river
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE