—ফাইল চিত্র।
পঞ্চায়েত ভোটে উত্তেজনার আঁচে উত্তপ্ত হয়েছিল ডায়মন্ড হারবার পুর এলাকাও। শান্ত জনপদে বোমা-পিস্তল হাতে দুষ্কৃতীদের দাপাদাপি দেখতে হয়েছিল নগরবাসীকে। শাসক দলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ উঠেছিল সে সময়ে। বিরক্ত পুরবাসী এ বার লোকসভা ভোটে সেই গায়ের ঝালই মিটিয়ে নিলেন বলে মনে করছে বিভিন্ন বিরোধী রাজনৈতিক দল। যার জেরে, ডায়মন্ড হারবার পুরসভার অধিকাংশ ওয়ার্ডে পিছিয়ে পড়ল তৃণমূল। ১৬ ওয়ার্ডের পুরসভার ১৪টিই আছে তৃণমূলের দখলে। তার মধ্যে সামান্য কিছু ওয়ার্ডে যৎসামান্য এগিয়ে আছে তারা। তবে সামগ্রিক ভাবে ডায়মন্ড হারবার লোকসভায় ভাল ফল করেছে তৃণমূল। লোকসভার প্রার্থী অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় গতবারের মার্জিন বাড়িয়ে নিয়েছেন এখানে। গতবার তিনি জিতেছিলেন ৭১,২৯৪ ভোটে। এ বার তিনি জিতেছেন প্রায় ৩ লক্ষ ২০ হাজার ভোট। জয়ের ব্যবধান সামগ্রিক ভাবে বাড়লেও পুর এলাকায় ফল খারাপ তৃণমূলের।
ডায়মন্ড হারবার পুরসভা ২০০৩ সাল থেকে তৃণমূলের দখলে। ২০১৩ সালের পুরভোটে শাসক দল ১৬টি ওয়ার্ডের মধ্যে একাই ১১টি দখল করেছিল। পরে সিপিএম থেকে ২ জন ও বিজেপির এক জন কাউন্সির তৃণমূলে যোগ দেন। ফলে পুরসভায় তৃণমূলের দখল বেশ পাকাপোক্তই বলা চলে।
বাসিন্দারা মনে করেন, উন্নয়নের নিরিখেও পুরসভা গত কয়েক বছরে যথেষ্ট করা করেছে। রাস্তাঘাট, পানীয় জল বা অন্যান্য সমস্যা আগের থেকে অনেকটাই সুরাহা হয়েছে। পুর এলাকাতেই গড়ে উঠেছে জেলা হাসপাতাল। ফলে মানুষ আগের থেকে পরিষেবা পাচ্ছেন বেশি। স্বাভাবিক ভাবেই শাসক দলের প্রতি মানুষের আস্থা বাড়ার কথা।
কিন্তু লোকসভা ভোটের ফলের নিরিখে দেখা যাচ্ছে, ৫, ১৫, ১৬ ছাড়া প্রায় বাকি সমস্ত ওয়ার্ডেই বিজেপির ভোট বেশি পড়েছে। সংখ্যালঘু ভোটার এখানে কম। পুরসভার ৩৫, ৬৪৪টি ভোটারের মধ্যে ২- ৩ শতাংশ মত্র সংখ্যালঘু ভোট।
তা হলে এমন ফল হল কেন?
ডায়মন্ড হারবার পুরসভার পাশেই ডায়মন্ড হারবার ১ বিডিও অফিস। তার ২০০ মিটার দূরে মহকুমাশাসকের কার্যালয়। কয়েক মাস আগে পঞ্চায়েত ভোটে ওই ব্লকের মনোনয়ন ছিল মহকুমাশাসকের অফিসে। সেখানে বিরোধী দলের প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র দাখিল করতে এলে সন্ত্রাসের কবলে পড়েন বলে অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ ওঠে, শাসকদলের-আশ্রিত বহিরাগতরা মুখে কাপড় বেঁধে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে দাপাদাপি করে বেড়ায় শহরের প্রাণকেন্দ্র পুরসভা চত্বরে। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করে বোমাবাজি হয়, গুলিও চলে। যা শান্ত শহরের মানুষ দেখতে অভ্যস্ত ছিলেন না। সে সময়ে সাধারণ মানুষকে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘‘বাম জমানার শেষের দিকে বুথজ্যাম বা ছাপ্পা ভোট হতে দেখেছি। এ সরকার এক ধাপ এগিয়ে বিরোধী প্রার্থীদের ভোটেই দাঁড়াতে দিচ্ছে না।’’
বিজেপি নেতা সুফল ঘাঁটুর দাবি, ‘‘মানুষ তৃণমূলকে আর চায় না। এই ধারাবাহিক সন্ত্রাস মানুষ আর মেনে নিচ্ছেন না। বিরোধীদের মুছে ফেলার ষড়যন্ত্র করেছে শাসক দল। বিরোধিতা করলেই গাঁজা, বোমা, আগ্নেয়াস্ত্র গুঁজে দিয়ে মিথ্যা মামলায় জেলে পোরা হচ্ছে। দেওয়াল লিখন মুছে ফেলা হচ্ছে, ব্যানার-ফেস্টুন ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। পঞ্চায়েতে ভোটে এই সব মানুষের অজানা নয়।’’ তাঁর দাবি, এ সব কারণে পুর এলাকার মানুষ লোকসভায় ঢেলে ভোট দিয়েছেন বিজেপিকে।
একই দাবি সিপিএম নেতা সমর নাইয়ার। তাঁর বক্তব্য, ‘‘মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিয়েছে শাসক দল। আমাকেও মিথ্যা মামলায় জড়ানোর চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তা জানতে পেরে গা ঢাকা দিই। তাই রেহাই পেয়েছি।’’
এ বিষয়ে ডায়মন্ড হারবার টাউন তৃণমূলের সভাপতি রাজর্ষি দাসের বক্তব্য, ‘‘ডায়মন্ড হারবার পুর এলাকায় ধর্মীয় সমীকরণে ভোট হয়েছে। ফলে বিজেপি বেশি ভোট পেয়েছে। আমরা সাংগঠনিক ভাবেও বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy