প্রতীকী ছবি।
হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালের সুপার শঙ্করলাল ঘোষের বদলির নির্দেশ এসেছে। জানতে পেরে শনিবার স্থানীয় বহু মানুষ দাবি জানাতে থাকেন, সুপারকে তাঁরা ছাড়তে চান না। সুপার বলেন, ‘‘সরকার কিছু চিন্তাভাবনা করে আমাকে বদলি করেছে। সরকারি নির্দেশ আমাকে মানতে হবে।’’
সুপারের এই কথা অবশ্য এ দিন শুনতে কেউ রাজি হননি। হাসপাতাল চত্বরে এক ভ্যান চালক সুপারের পা জড়িয়ে ধরেন। বলেন, ‘‘আপনি আমাদের ছেড়ে যাবেন না।’’ সুপার তাঁকে শান্ত করার চেষ্টা করেন। সুপার নিজেও তখন আবেগতাড়িত হয়ে পড়েছেন।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, দিন কয়েক আগেই সুপারের বদলির নির্দেশ এসেছে। তাঁকে জলপাইগুড়ির মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের অফিসে বদলি করা হয়েছে। ২০১৫ সালের অগস্ট মাসে সুপার হিসাবে শঙ্কর হাবড়া হাসপাতালের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। ৪২ বছরের শঙ্করের বাড়ি গাইঘাটার হাঁসপুর গ্রামে।
তাঁর বদলির নির্দেশের কথা জানতে পেরে হাবড়া শহরের মানুষের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে। সকলেরই বক্তব্য, এই সুপারের আমলে হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবার অনেক উন্নতি হয়েছে।
এ দিন দুপুরে রীতিমতো পোস্টার-ব্যানার নিয়ে হাসপাতাল চত্বরে জড়ো হয়েছিলেন হাসপাতাল কর্মী, রোগীর আত্মীয়, অ্যাম্বুল্যান্স চালক থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ। সকলেরই দাবি, সুপারকে থেকে যেতে হবে এখানেই। মাস্ক পরে শারীরিক দূরত্ববিধি বজায় রেখেই সকলে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
সুপার তাঁদের সঙ্গে দেখা করতে আসেন। তখন অনেকেই কেঁদে ফেলেন। হাসপাতালের অ্যাটেন্ড্যান্ট শিবানী ব্রহ্ম বলেন, ‘‘স্যারকে আমরা যেতে দেব না। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্যার রোগী দেখেন। বেতনের টাকা থেকে রোগীদের ওষুধ কিনে দেন। আমরা ওঁকে যেতে দিতে পারি না। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন করছি, সুপারকে এখান থেকে যেন বদলি না করা হয়।’’
নদিয়ার নগরউখরা থেকে এসেছিলেন সুজয় মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘‘এত ভাল সুপার এই হাসপাতালে আগে আসেননি। রাস্তায় দাঁড়িয়েও ওঁকে রোগী দেখতে দেখেছি। করোনা পরিস্থিতিতে ওঁকে হাসপাতালে প্রয়োজন।’’
করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য কর্মী-চিকিৎসকদের বাড়ির কাছাকাছি কাজ করার সুযোগ দিচ্ছে রাজ্য সরকার। সেখানে শঙ্করকে জলপাইগুড়ি বদলি করা হল কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন হাবড়াবাসী। তা ছাড়া, এর আগে তিনি দু’বার উত্তরবঙ্গে কাজ করে এসেছেন।
সোশ্যাল মিডিয়ায় সুপারের বদলির প্রতিবাদ জানানো হচ্ছে। স্থানীয় অনেকেরই বক্তব্য, গত বছর হাবড়ায় ডেঙ্গির প্রকোপ ছড়িয়েছিল। সে সময়ে সুপারের কাজ মানুষকে ভরসা দিয়েছে। পরিকাঠামোর অভাব বুঝতে দেননি।
শঙ্কর বলেন, ‘‘মানুষ আমার প্রতি ভালবাসা থেকে এসেছেন। কিন্তু সরকারি নির্দেশ মানতে হবে। নতুন যিনি সুপার হিসাবে আসছেন, তিনি অবশ্যই আরও ভাল কাজ করবেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy