গৌরী সর্দার।
বাড়ির উঠোনে দাঁড়িয়ে ছিলেন সে দিন। হঠাৎ শুরু হয় বোমা-গুলির লড়াই। একটা গুলি এসে লাগে বৃদ্ধার গলায়। তারপরে জল গড়ায় বিস্তর। দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্য সহ্য করতে না পেরে রুখে দাঁড়ায় জনতা। এলাকার বুথে ইভিএম ভেঙে দেয়।
ঘটনাটি গত পঞ্চায়েত ভোটের। বাদুড়িয়ার ইছামতী-সংলগ্ন জগন্নাথপুর পঞ্চায়েতের শ্রীরামপুর গ্রাম। সেখানেই থাকেন বছর পঁচাশির গৌরী সর্দার। বাড়ি-সংলগ্ন ১৬৪ এবং ১৬৫ নম্বর দু’টি বুথে সে দিন ভোটগ্রহণ চলছিল। হঠাৎই অশান্ত হয়ে ওঠে গ্রাম। গুলি লাগে গৌরীর। বসিরহাট জেলা হাসপাতাল থেকে পাঠানো হয় আরজিকরে। অস্ত্রোপচারের পরে গুলি বের হয়। কয়েক দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে বাড়ি ফেরেন বৃদ্ধা।
সে দিনের আতঙ্কটা এখনও তাড়া করে তাঁকে। বললেন, ‘‘সবে ভোট দিয়ে এসে দাঁড়িয়েছি বাড়ির সামনে। বুড়ো মানুষটাকেও রেয়াত করেনি গুন্ডার দল। মরতে মরতে বেঁচেছি। এ বার আর ভোট দিতে যাব না।’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
ভোটের কথা শুনে চটে গেলেন গৌরীর ছেলে হারানও। বললেন, ‘‘কেন্দ্রীয় বাহিনী না এলে গ্রামের ক’টা লোক বুথমুখো হবে, সেটাই প্রশ্ন।’’
গৌরীর বৌমা অঞ্জনার কথায়, ‘‘গন্ডগোল হচ্ছে শুনে নাতিকে খুঁজতে যাবেন বলছিলেন শাশুড়ি। বাড়ির চত্বরে আমগাছ তলায় যেতেই দুষ্কৃতীরা বোমা মারতে মারতে বাড়ির মধ্যে ঢুকে পড়ে। ওঁকে তাক করে গুলি চালায়। একটা গুলি শাশুড়ির গলায় ঢুকে গেল। রক্তে ভেসে যাচ্ছিল মাটি।’’
গ্রামের অনেকেই জানালেন, এখনও পুলিশ কিংবা কেন্দ্রীয় বাহিনী— কাউকেই তেমন দেখা যায়নি এলাকায়। রুটমার্চও হয়নি। ভোটের দিন যত এগিয়ে আসছে, আতঙ্ক সকলের মনেই দানা বাঁধছে। রবীন্দ্রনাথ সর্দার, ফুলরানি মণ্ডল, প্রতাপচন্দ্র মণ্ডলদের কথায়, ‘‘যে সব দুষ্কৃতীরা ভোট লুঠ করতে এসে বোমা-গুলি ছুড়েছিল, তাদের কাউকে ধরেনি পুলিশ। এ বার কেন্দ্রীয় বাহিনী এসে কড়া পাহারা না দিলে ভোট দিতে যেতে সাহস পাবেন না কেউ।’’
বাদুড়িয়ার তৃণমূল নেতা তুষার সিংহের আশ্বাস, ‘‘এখানে সুশৃঙ্খল ভাবেই ভোট হবে।’’ অন্য দিকে, সিপিএম নেতা সুব্রত বিশ্বাস বলেন, ‘‘গত পঞ্চায়েত ভোটের মতো যাতে ফের সন্ত্রাস না হয়, সে জন্য প্রশাসনকে কড়া ভূমিকা নিতে হবে। সব রাজনৈতিক দলগুলিকেও তা নিশ্চিত করতে হবে।’’
গৌরী বলেন, ‘‘মানুষ নিজের ভোট নিজে দেবেন— এ নিয়ে এত অশান্তি কেন বুঝি না বাপু!’’
এই সহজ প্রশ্নের উত্তরটুকুই এখন খুঁজছে গোটা গ্রাম।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy