জীর্ণ: মধুসূদনচক ভগবতীপুর মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্র। নিজস্ব চিত্র
মাথার উপরে খড়ের ছাউনি। বৃষ্টি হলেই চাল থেকে টুপ টুপ করে জল পড়তে থাকে। জোরে বৃষ্টি হলে ঘর ভেসে যায়। সামনের মাঠে জল থই থই করে।
পড়ানো বন্ধ রেখে শিক্ষকেরা অনেক সময়ে সাপ তাড়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। রান্নার কাজকর্ম চলে অফিস ঘরে। এমনই অবস্থা রায়দিঘির মথুরাপুর ২ ব্লকের মধুসূদনচক ভগবতীপুর মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্রের।
নন্দকুমারপুর পঞ্চায়েতের মধুসূদনচক ভগবতী গ্রামে কাছাকাছি কোনও হাইস্কুল ছিল না। দূরের স্কুলে গিয়ে পড়াশোনা করতে হত। মেয়েরা মাঝপথে পড়াশোনা ছেড়ে দিত। এলাকার ছেলেমেয়েদের কথা ভেবে ২০০৬ সালে স্থানীয় বাসিন্দারা গ্রামে একটি স্কুল চালু করেন। সেখানে পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হত। খড়ের চালের ঘরে পঠনপাঠন শুরু হয়। ২০০৮ সালে স্কুলটি সরকারি অনুমোদন পায়। এখন এই স্কুলে পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ১১৮ জন পড়ুয়া রয়েছে। তবে নবম ও দশম শ্রেণির অনুমোদন না পেলেও ওই দুই শ্রেণিতে ৫০ জন ছাত্রছাত্রী রয়েছে। অন্য স্কুলে তাদের মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
কয়েক বছর আগে পর্যন্ত সব ক্লাসই হত মাটির দেওয়াল ও খড়ের ছাউনি দেওয়া ঘরে। বছরখানেক আগে বিধায়ক তহবিল ও জেলা পরিষদের টাকায় পাকা ভবন তৈরি হয়। আরও টাকার অভাবে দরজা-জানলা, গেট কিছুই বসানো হয়নি। ফলে এখনও সেই খড়ের চাল ও মাটির ভাঙাচোরা দেওয়াল দেওয়া ঘরেই ক্লাস চলছে।
পড়ুয়ারা জানাল, খড়ের চাল ও মাটির দেওয়ালের ঘরে ইতিউতি ঘুরে বেড়ায় ইঁদুর। আর ইঁদুর ধরতে মাছে মাঝে সাপও ঢুকে পড়ে। সাপ তাড়াতে হাতের কাছে লাঠি জোগাড় করে রেখেছেন শিক্ষকেরা।
এই শিক্ষাকেন্দ্রে রয়েছেন স্থায়ী সম্প্রসারক (শিক্ষক), মুখ্য সম্প্রসারক (প্রধান শিক্ষক)-সহ তিনজন শিক্ষক এবং চার জন অস্থায়ী শিক্ষক। তাঁদের বসার আলাদা ঘর নেই। বাধ্য হয়ে রান্নাঘরেই অফিস চালাতে হচ্ছে। চেয়ার না থাকায় দাঁড়িয়ে ক্লাস নিতে হয় শিক্ষকদের। একটিমাত্র নলকূপ রয়েছে। তা-ও মাঝে মধ্যে খারাপ হয়ে যায়। মিড-ডে মিল খাওয়ার জন্য কোনও শেডের ব্যবস্থা নেই।
মুখ্য সম্প্রসারক সুভাষচন্দ্র প্রধান এবং সম্প্রসারক সত্যরঞ্জন জানাদের ক্ষোভ, ‘‘শিক্ষাকেন্দ্রের উন্নতির জন্য বহুবার পঞ্চায়েত সমিতি থেকে জেলা পরিষদে দরবার করা হয়েছে। কিন্তু কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।’’
কেন্দ্রের বেহাল পরিকাঠামোর কথা মেনে নিয়ে মথুরাপুর ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি পুতুল গায়েন বলেন, ‘‘অর্থ বরাদ্দের জন্য জেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন করা হয়েছে। টাকা মঞ্জুর হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy