Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

সৎকারের তিন মাস পরে বাড়ি ফিরলেন ‘মৃতা’

পুলিশ সূত্রের খবর, দুর্বার গোষ্ঠীর সদস্য, নিমতা ঠাকুরতলা কালচার মোড়ের বাসিন্দা মিঠু গত ২১ মার্চ সংস্থার সল্টলেকের অফিসে যাচ্ছেন বলে বেরিয়ে আর বাড়ি ফেরেননি। যদিও তাঁর মেয়ের দাবি, প্রথমে ওই সংস্থার অফিস থেকে ফোনে তাঁদের জানানো হয়, বিকেলেই মিঠু বেরিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু পরে জানা যায়, ওই দিন অফিসেই জাননি তিনি।

ফেরা: নিমতা থানায় মিঠু কুণ্ডু। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়

ফেরা: নিমতা থানায় মিঠু কুণ্ডু। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়

নিজস্ব সংবাদদাতা
নিমতা শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০১৭ ১০:৪৫
Share: Save:

আগুনে পুড়ে গিয়েছিল গোটা শরীর। তাই পেট কাটা মৃতদেহটি দেখে কারও কিছু বোঝার উপায় ছিল না। শেষমেশ দেহের পাশে পড়ে থাকা টপ ও লেগিংসের টুকরো দেখে নিখোঁজ মায়ের দেহ শনাক্ত করা গিয়েছে বলে জানিয়েছিলেন তাঁর ছেলেমেয়েরা। কিন্তু গোটা ঘটনাটি নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছিল তদন্তকারীদের মনে। তাই দেহটির শেষকৃত্য হয়ে গেলেও হাল ছাড়েননি তিনি!

আর তাতেই বাজিমাত করেছে নিমতা থানা! এলাকার বাসিন্দা, বছর পঁয়ত্রিশের মিঠু কুন্ডুকে সুদূর পঞ্জাব থেকে উদ্ধার করে এনে তদন্তকারীরা প্রমাণ করেছেন, তিনি আসলে মরেননি! কিন্তু মিঠুর দেহ ভেবে তাঁর ছেলেমেয়েরা যাঁর সৎকার করলেন, তিনি আসলে কে, তা নিয়ে ফের প্রশ্ন থেকেই গেল।

পুলিশ সূত্রের খবর, দুর্বার গোষ্ঠীর সদস্য, নিমতা ঠাকুরতলা কালচার মোড়ের বাসিন্দা মিঠু গত ২১ মার্চ সংস্থার সল্টলেকের অফিসে যাচ্ছেন বলে বেরিয়ে আর বাড়ি ফেরেননি। যদিও তাঁর মেয়ের দাবি, প্রথমে ওই সংস্থার অফিস থেকে ফোনে তাঁদের জানানো হয়, বিকেলেই মিঠু বেরিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু পরে জানা যায়, ওই দিন অফিসেই জাননি তিনি। এর পরে ২৪ মার্চ নিমতা থানায় নিখোঁজ-ডায়েরি করা হয়। ২৭ মার্চ দেখা যায়, ওই মহিলার দু’টি ফোন নম্বরের একটি বন্ধ থাকলেও অন্যটি চালু রয়েছে। সেই নম্বরে ফোন করে নিমতা থানার বড়বাবু বলেন, ‘বাড়ির লোক আপনার খোঁজ করছে। কেন বাড়িতে ফিরছেন না? আমি থানা থেকে বলছি।’ থানার কথা শুনেই ফোনটা কেটে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। টাওয়ার লোকেশন দেখে পুলিশ জানতে পারে, সেই সময়ে ফোনটি ছিল বিহারের পটনায়।

৩ এপ্রিল একটি অপহরণের মামলা দায়ের হয়। এর পরে ১২ এপ্রিল খড়দহের উদয়শঙ্কর মাঠ থেকে অজ্ঞাতপরিচয় এক মহিলার দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরের দিন মিঠুর পরিজনেরা ও পাঁচ ছেলেমেয়ে গিয়ে দেহটি তাঁদের মায়ের বলেই শনাক্ত করেন। ওই মহিলার মেয়ে দাবি করেছিলেন, নিখোঁজ হওয়ার দিন তাঁরই গোলাপি রঙের লেগিংস ও সাদা-নীল টপ পরে মিঠু বেরিয়েছিলেন, যা দেখে তাঁরা শনাক্ত করেছেন। এর পরে ময়না-তদন্ত হয়ে দেহটি সৎকারও হয়ে যায়। কিন্তু কী ভাবে তাঁদের মায়ের মৃত্যু হল, তা জানতে চেয়ে পুলিশের কাছে সাতটি আবেদন জমা দেন মিঠুর সন্তানেরা।

দেহ শনাক্ত হলেও সন্দেহ থেকে যায় পুলিশের। যে ফোনটি নিয়ে মিঠু নিখোঁজ হন, তার আইএমইআই নম্বর ধরে টাওয়ার লোকেশন মেলে পটনায়। ইতিমধ্যে জোড়াবাগান এলাকায় মিঠুর এক পরিচিতের কাছ থেকে পুলিশ জানতে পারে, হরমন সিংহ নামে ১৯ বছরের এক যুবকের সঙ্গে ওই মহিলার ঘনিষ্ঠতা ছিল এবং নিখোঁজ থাকার সময়েও তাঁর ফেসবুক চালু ছিল। পুলিশের নজরে আসে, আচমকা মিঠুর একটি বন্ধ নম্বরও চালু হয়ে গিয়েছে। জানা যায়, ফোনটি ব্যবহার করছেন সোনু নামের এক যুবক।

সেই সূত্র ধরেই পুলিশ পৌঁছে যায় পটনায়। সেখানে সোনুর থেকে পুলিশ জানতে পারে, গত ২১ মার্চ ট্রেনে মিঠু ও হরমনের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। দু’জনে বিয়ে করে আশ্রয় খুঁজছেন জেনে সোনু তাঁদের নিজের বাড়িতে থাকতে দেন। কয়েক দিন থাকার পরে পঞ্জাবের বাটালার বাসিন্দা হরমন বাড়ির লোকজনকে রাজি করিয়ে মিঠুকে নিয়ে সেখানে চলে যান। ফোনটি দিয়ে যান সোনুকে। এর পরে গত বৃহস্পতিবার পঞ্জাবে হানা দিয়ে নিমতা থানার পুলিশ মিঠুর সন্ধান পায়। তার পরে নিয়ে আসা হয় তাঁকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Nimta Mithu Kundu নিমতা
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE