বাঁ দিকে, জখম পুলিশকর্মী। ডান দিকে, সুনসান দাঁইহাট মোড়, বন্ধ দোকানপাটও।—নিজস্ব চিত্র।
রাস্তায় একের পর এক গাড়ি আটকে তোলা তুলছে পুলিশ, অথচ দুর্ঘটনায় জখম সাইকেল আরোহীকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছে না এমনই অভিযোগে সরব হয়ে শনিবার রাতে এসটিকেকে রোডের দাঁইহাট মোড়ে অবরোধ শুরু করেছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা, দোকানদারেরা। পরে পুলিশ ওই জখম যুবককে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে ফিরতেই শুরু হয় গাড়ি ভাঙচুর। পুলিশকর্মীদের মারধর করা হয় বলেও অভিযোগ। রাতেই পুলিশ তল্লাশি চালিয়ে স্থানীয় চালকল শ্রমিক ও বিভিন্ন গ্রাম থেকে ১৫ জনকে গ্রেফতার করে। রবিবার ধৃতদের আদালতে তোলা হলে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত জেল হেফাজতের নির্দেশ হয়।
রবিবার দাঁইহাট মোড়ে গিয়ে দেখা যায়, দোকানপাট সব বন্ধ। জমজমাট এলাকা একেবারে সুনসান। তিন রাস্তার এই মোড়ের এক দিকে এসটিকেকে রোড, এক দিকে কাটোয়া-মেমারি রোড, আর এক দিকে রয়েছে দাঁইহাট শহর। গুরুত্বপূর্ণ এই মোড়ে সব সময় ব্যবসায়ী, যাত্রী, কিংবা বিভিন্ন গাড়ির জটলা লেগে থাকে। অথবা স্থানীয় চালকলের শ্রমিকেরা হাজির থাকেন। ভ্যান, মোটরভ্যান-সহ নানা গাড়িরও দেখা মেলে। কিন্তু এ দিন সকাল থেকে ওই এলাকায় যেন অঘোষিত বনধ্ নেমে এসেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “শনিবার রাত থেকে পুলিশ গ্রামের পর গ্রাম তল্লাশি চালাচ্ছে। ভয়ে গ্রাম থেকে অনেকে চলে গিয়েছেন। আমাদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। সে জন্যই এলাকা জনশূন্য।” তাঁদের আরও অভিযোগ, কয়েকজন ব্যবসায়ী দোকান খুললেও রবিবার সকালে পুলিশ এসে সেই দোকান বন্ধ করে দেয়।
এ দিকে, রাতের ঘটনা নিয়ে খানিকটা হতভম্ব পুলিশও। বর্ধমান জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “শনিবারের ঘটনা কাটোয়ার চরিত্রের সঙ্গে একদমই মেলে না। বড় বড় ঘটনা ঘটলেও পুলিশের উপর আক্রমণের কোনও ঘটনা আগে ঘটেনি। বুঝতে পারছি না কেন বা কাদের ইন্ধনে এমন হল?” পাঁচ বছর আগে মঙ্গলকোটের খুদরুন মোড়ে তত্কালীন বিরোধী দলের নেতা মদন মিত্র ও শুভেন্দু অধিকারীর সভায় হামলার অভিযোগ তুলে পুলিশের জিপ ও গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করার ঘটনা ঘটেছিল।
স্থানীয়দের দাবি, শনিবার দুর্ঘটনার পরে রাস্তায় পড়ে ছটফট করছিলেন কৃষ্ণ প্রধান নামে ওই চালকল শ্রমিক। কিন্তু পুলিশ কোনও উদ্যোগ করে নি। বেশ কিছুক্ষণ পরে স্থানীয়দের চাপে জখম ব্যক্তিকে কাটোয়া হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ। অভিযোগ, ফিরে আসতেই লাঠিসোঁটা নিয়ে পুলিশের উপর আক্রমণ করা হয়। পুলিশকে লক্ষ্য করে অবরোধকারীরা ইট ছুড়তে থাকে। তাতে কাটোয়া থানার এসআই শ্যামল দাস, কনস্টেবল দূর্গা সরকার ও লক্ষ্মীকান্ত ঘোষ জখম হন। আহতদের মধ্যে দুর্গাবাবুকে কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে কাটোয়া থানার এসআই প্রদীপ রায় স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে অভিযোগ করেন। এ দিকে, দুর্ঘটনায় জখম কৃষ্ণ প্রধানও বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।
ঘটনাটি নিয়ে সরব রাজনৈতিক দলগুলিও। সিপিএমের অভিযোগ, স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। চালকলে কর্মরত শ্রমিকদের মিথ্যা অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর জেরে দাঁইহাট মোড় এলাকায় দুটি চালকল রবিবার বন্ধ ছিল। সিপিএমের কাটোয়া জোনাল কমিটির সম্পাদক অঞ্জন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “পুলিশের উপর আক্রমণ বা গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা যেমন সমর্থন করি না, তেমনি পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।” তৃণমূলের বর্ধমান জেলার অন্যতম সহ সভাপতি কাঞ্চন মুখোপাধ্যায়ও বলেন, “পুলিশের গাফিলতি থাকলেও পুলিশের গাড়িতে হামলা চালানো অন্যায়।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy