Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

বকেয়া বেতনের দাবিতে লরি আটকে বিক্ষোভ

কারখানায় লোহার যন্ত্রাংশ নিতে আসা দুটি লরি আটকে বিক্ষোভ দেখান কর্মরত ঠিকা শ্রমিকেরা। দুর্গাপুরের জেশপ কারখানার ওই কর্মীদের অভিযোগ, কারখানা পুনরায় খোলার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এর আগেও একাধিকবার লোহার যন্ত্রাংশ বের করা হয়েছে। কিন্তু কারখানা খোলার কোনও উদ্যোগ করা হয়নি। এ ছাড়া দীর্ঘদিনের বেতন বকেয়া রয়েছে বলেও অভিযোগ করেন ওই শ্রমিকেরা।

বিক্ষোভের জেরে আটক লরি। —নিজস্ব চিত্র।

বিক্ষোভের জেরে আটক লরি। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০০:৫৭
Share: Save:

কারখানায় লোহার যন্ত্রাংশ নিতে আসা দুটি লরি আটকে বিক্ষোভ দেখান কর্মরত ঠিকা শ্রমিকেরা। দুর্গাপুরের জেশপ কারখানার ওই কর্মীদের অভিযোগ, কারখানা পুনরায় খোলার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এর আগেও একাধিকবার লোহার যন্ত্রাংশ বের করা হয়েছে। কিন্তু কারখানা খোলার কোনও উদ্যোগ করা হয়নি। এ ছাড়া দীর্ঘদিনের বেতন বকেয়া রয়েছে বলেও অভিযোগ করেন ওই শ্রমিকেরা।

কারখানা সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার বেশ কিছুক্ষণ এ নিয়ে ঝামেলা চললেও শেষ পর্যন্ত লরিদুটি মালবোঝাই করে বেরিয়ে যায়। পুলিশ জানিয়েছে, লরিদুটির কাছে বৈধ কাগজপত্র ছিল। আর শ্রমিকদের বকেয়া বেতনের বিষয়টি মেটাতে কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগেরও আশ্বাস দিয়েছে পুলিশ।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৫৮ সালে জেশপ কারখানা চালু হয় দুর্গাপুরে। ফাউন্ড্রি, ক্রেন, রেলের বগি, রোলার তৈরি হতো ওই কারখানায়। কাজ করতেন প্রায় সাড়ে চার হাজার কর্মী। পরে ১৯৭১ সালে কেন্দ্রীয় সরকারের ভারি শিল্প মন্ত্রক কারখানাটি অধিগ্রহণ করে। নয়ের দশকে রুগ্ন হয়ে পড়ে সংস্থা। ১৯৯৯ সালে পাকাপাকি ভাবে কারখানাটি বন্ধ হয়ে যায়। চার বছর বন্ধ থাকার পরে ২০০৩ সালে প্ল্যান্ট সমেত কারখানার ১১৭ একর জমি মাত্র ১৮ কোটি টাকায় কিনে নেয় রুইয়া গোষ্ঠী। তখন রেলের বগি এবং কাপলিং তৈরি করা হবে বলে জানিয়েছিলেন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তা আর হয়নি। ২০০৮ সালে রুইয়া গোষ্ঠী কারখানার জমির একাংশের চরিত্র বদল করে আবাসন প্রকল্প ও তথ্যপ্রযুক্তি পার্ক গড়ার আর্জি জানায় আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদের (এডিডিএ) কাছে। কিন্তু এডিডিএ জানিয়ে দেয়, কারখানার জায়গায় কারখানাই গড়তে হবে। এ দিকে দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যুৎ ও জলের বিল বকেয়া থাকায় সংযোগ ছিন্ন করে দেয় ডিপিএল। পরের দিকে কারখানার ভারি যন্ত্রাংশ কর্তৃপক্ষ সরিয়ে নিতে শুরু করেন বলে অভিযোগ কর্মরত ঠিকা কর্মীদের।

কারখানার ঠিকা কর্মীরা জানিয়েছেন, এ দিন দুপুরে দুটি লরি ঢোকে কারখানায়। লরির লোকজন কারখানার যন্ত্রাংশ বোঝাই করার চেষ্টা করলে তাঁরা বাধা দেন। পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। পুলিশ জানায়, লরিদুটির কাছে বৈধ কাগজপত্র আছে। এরপরেই ফের যন্ত্রাংশ লরিতে তোলার কাজ শুরু হয়। বিকালে লরিদুটি বেরিয়ে যায়। কর্তব্যরত ঠিকা কর্মীদের অভিযোগ, এর আগেও বারবার লরি নিয়ে এসে যন্ত্রাংশ সরানো হয়েছে। তখন বলা হয়েছিল, কারখানা নতুন করে খোলার জন্যই এ সব সরাতে হয়েছে। কিন্তু কারখানা খোলার কোনও সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। তাঁদের আরও অভিযোগ, ২০০৮ সাল থেকে তাঁরা এখানে কাজ করছেন। কখনই মাসিক বেতন নির্দিষ্ট সময়ে হাতে পান না। টানা কয়েক মাস বাকি থাকার পরে বকেয়া মেটানো হয়। বর্তমানে প্রায় নয় মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে। যে তিন সংস্থা কারখানায় ঠিকাকর্মী সরবরাহের দায়িত্বে আছে তার একটির আধিকারিক মানস রায় বলেন, “বারবার কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। কিন্তু কোনও কাজ হয় না। নিয়মিত বেতন না হওয়ায় চূড়ান্ত আর্থিক অনিশ্চয়তায় দিন কাটছে ওই কর্মীদের।” পুলিশ জানিয়েছে, দ্রুত কারখানা কর্তৃপক্ষ ও নিরাপত্তা সংস্থার মধ্যে বৈঠক ডেকে সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ করা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

jessope salary workers' agitation durgapur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE