Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

প্রতিকূলতা পেরিয়েই সফল ওরা চার

ভাতারের মাধব পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ৬৬৩ নম্বর পেয়ে নজর কেড়েছে প্রসন্ন বৈরাগ্য।

বাঁ দিক থেকে, সোমা, সৌরভ, প্রসন্ন ও অরিন্দম। —নিজস্ব চিত্র

বাঁ দিক থেকে, সোমা, সৌরভ, প্রসন্ন ও অরিন্দম। —নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০১৯ ০১:১৫
Share: Save:

ফুটিফাটা টিনের চালের বাড়ি। প্রতি বর্ষায় বইখাতা, জামাকাপড় ভিজে যায়। বাড়িতে আলো থাকলেও এতটাই ক্ষীণ যে সন্ধ্যায় রাস্তায় আলোতেই চলে পড়াশোনা। তবু হাল ছাড়েনি কাটোয়া পানুহাটের সোমা সেন। এ বছর মাধ্যমিকে পানুহাট রাজমহিষীদেবী হাইস্কুল থেকে ৬৪৩ পেয়েছে সে।

সোমবার বাবা শ্যামল সেন বিড়ির দোকানে দৈনিক মজুরিতে কাজ করেন। রবিবার দোকান বন্ধ থাকায় রোজগারও নেই। এক কামরার ঘরে ভাঙা খাটে বসে তিনি বলেন, ‘‘মেয়ের বিজ্ঞান নিয়ে পড়ার ইচ্ছে। কিন্তু আমার সামর্থ্য নেই পড়ানোর।’’ মা মনিকা সেন জানান, বইপত্র রাখার জায়গাটুকুও বাড়িতে নেই। দু’বেলা ভাতও তুলে দিতে পারি না মেয়ের মুখে। এরপরে মেয়েকে কিভাবে পড়াব সেটাই চিন্তার। সোমা অবশ্য বাড়ির কথা ভেবে কলা বিভাগে পড়তে রাজি। কিন্তু কোনও ভাবেই পড়াশোনা ছাড়তে চায় না সে। সোমা বলে, ‘‘বড় হয়ে শিক্ষিক হতে চাই।’’ স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কমলাকান্ত চক্রবর্তী জানান, ওর পড়াশোনার জন্য সমস্ত রকম সাহায্য করা হয়েছে। এর পরেও যা সাহায্য লাগবে করব।

আউশগ্রামের পল্লিশ্রী গ্রামের সৌরভ ভক্ত ছোটবেলায় মাথায় উপর দিয়ে উড়োজাহাজ গেলে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকত। বড় হয়ে মহাকাশবিজ্ঞানী হতে চায় সে। ছোড়া বিসিডিএন উচ্চ বিদ্যালয়ের এই ছাত্র এ বছর মাধ্যমিকে ৬৫০ নম্বর পেয়েছে। তার বাবা সঞ্জয় ভক্ত রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। সামান্য আয়েই মেটাতে হয় সংসারের সব খরচ। তিনি বলেন, ‘‘ছেলে ছোট থেকেই মহাকাশ বিজ্ঞানের ওপর বিভিন্ন বই পড়তে ভালবাসে। বাবা হিসাবে ছেলের ইচ্ছাপূরণের সাধ থাকলেও, সাধ্য হবে কি না জানি না।’’

ভাতারের মাধব পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ৬৬৩ নম্বর পেয়ে নজর কেড়েছে প্রসন্ন বৈরাগ্য। বর্ধমান কাটোয়া রাস্তার ধারে একটা ভাঙাচোরা ভাড়া ঘরে মনোহারি ব্যবসা রয়েছে তাঁর বাবা পার্থসারথী বৈরাগ্যের। বৃদ্ধ বাবা মা, স্ত্রী এবং দুই সন্তানকে নিয়ে ছ’জনের সংসার পার্থসারথীবাবুর। তিনি জানান, ছোট থেকেই প্রসন্নের শরীরে নানা রোগ রয়েছে। শারীরিক সমস্যার জেরে পড়াশোনাতেও অসুবিধা হয়। তার পরেও লড়াই চালিয়ে গিয়েছে ছেলে। প্রসন্ন বলেন, ‘‘বাবা-মা আমার পাশে আছে। আমি ভবিষ্যতে চিকিৎসক হতে চাই।’’

বর্ধমান ২ ব্লকের ছোট্ট গ্রাম টোটপাড়ার আদিবাসী পরিবারের ছেলে অরিন্দম মান্ডি। ছোটবেলায় মা স্বপ্না মান্ডিকে হারায় সে। টোটপাড়া অবৈতনিক বিদ্যালয়ে প্রাথমিকের পাঠ শেষ করে ভর্তি হয় বাড়ি থেকে তিন কিলোমিটার দূরে বড়শুল সিডিপি উচ্চ বিদ্যালয়ে। সেখান থেকেই মাধ্যমিকে ৬৩৮ পেয়েছে সে। বাবা গৌতম মান্ডি খেতমজুর। দাদু অনন্ত মান্ডি বরাবর নাতির পাশে থেকে যতটা পারেন সাহায্য করেছেন, আগলে রেখেছেন। ওই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কমলেশ মণ্ডল জানান, ‘‘শান্ত, মেধাবী অরিন্দম স্কুলের ইতিহাসে আদিবাসী ছাত্র হিসাবে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছে। আমরা গর্বিত।’’

বর্ধমান উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক নিশীথকুমার মালিক অরিন্দমের উচ্চশিক্ষায় পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন। ওই কিশোর বলে, ‘‘দিনের বেশির ভাগ সময় পড়তাম। পড়ার বই না হলে গল্পের বই। আগামী দিনে ডাক্তার হতে চাই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Panuhat Madhyamik Examination
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE