Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ঘর পেলেন শঙ্কর মাঝি, থাকার ‘মেয়াদ’ দেড় মাস

শুক্রবার দুপুরে শঙ্করবাবুর হাতে তাঁর নামে বরাদ্দ হওয়া টাকায় তৈরি নীল-সাদা রঙের ঘরের (এলাকায় তৃণমূলের কার্যালয় বলে পরিচিত) চাবি তুলে দেন জামালপুর ২ পঞ্চায়েতের কর্তারা।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
জামালপুর শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০১৯ ০৪:২২
Share: Save:

সরকারি প্রকল্পের ঘর জুটল। কিন্তু তাতে থাকার ‘মেয়াদ’ মাত্র দেড় মাস। পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের কাঠুরিয়াপাড়ার শঙ্কর মাঝির ভবিতব্য না কি এমনই! সৌজন্যে তৃণমূল পরিচালিত জামালপুর ২ পঞ্চায়েতের কর্তাদের ‘নিদান’।

শুক্রবার দুপুরে শঙ্করবাবুর হাতে তাঁর নামে বরাদ্দ হওয়া টাকায় তৈরি নীল-সাদা রঙের ঘরের (এলাকায় তৃণমূলের কার্যালয় বলে পরিচিত) চাবি তুলে দেন জামালপুর ২ পঞ্চায়েতের কর্তারা। সরকারি প্রকল্পের সেই ঘরে থাকার জন্যে এমন সময়সীমা কি দেওয়া যায়? জেলাশাসক বিজয় ভারতীর বক্তব্য, “বিশদে তদন্ত করে জামালপুরের বিডিওকে রিপোর্ট দিতে বলব। ওই রিপোর্ট পাওয়ার পরে, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

বিডিও (জামালপুর) শুভঙ্কর মজুমদার জানান, সরকারি প্রকল্পের উপভোক্তাকে এ ভাবে ঘরে থাকার মেয়াদ বেঁধে দেওয়া জানে না। তদন্ত করে দেখা হচ্ছে, ঠিক কী হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রের দাবি, ঘরে ঢুকে এ দিন দৃশ্যত চক্ষু চড়কগাছ হয়ে যায় এত দিন বাঁধের উপরে অস্থায়ী ছাউনিতে রাত কাটানো শঙ্করবাবুর। ভিতরে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র, টেলিভিশন— সবই মজুত। তাঁকে বলতে শোনা যায়, “এত মালপত্র থাকলে আমরা থাকব কোথায়?” তিনি জানান, পঞ্চায়েতের ‘কর্তারা’ তাঁকে বলেছেন, তাঁকে আপাতত মাস দেড়েক ওই ঘরে থাকতে দেওয়া হবে। সেই সময়ের মধ্যে তাঁকে জমি দিয়ে ‘বাংলার আবাস যোজনা’ প্রকল্পের মতো একটি এক কামরার বাড়ি তৈরি করে দেওয়া হবে। সেটি তৈরি হলেই তিনি নীল-সাদা বাড়িটি ছেড়ে দিতে বাধ্য থাকবেন।

পঞ্চায়েতের এক সূত্রের দাবি, এ দিনই পঞ্চায়েতের কর্তারা জানতে পেরেছেন, স্থানীয় বাসিন্দা প্রয়াত কালীপদ পালের ১০ কাঠা জমির উপরে ওই নীল-সাদা বাড়ি তৈরি হয়েছে। কালীপদবাবুর নাতি শুভময় পালের দাবি, “আমাদের অনুমতি ছাড়াই গায়ের জোরে জমিটি দখল করে পার্টি অফিস তৈরি করা হয়েছে। বাকি জমি বাঁচানোর ভয়ে কোথাও অভিযোগ করিনি। এ বার অভিযোগ করলে, নিশ্চয় কিছু হবে।’’

গত বুধবার সরকারি প্রকল্পের টাকায় বেআইনি ভাবে ওই জমিতে দলীয় কার্যালয় করার অভিযোগে সরব হয়েছিল বিজেপি। তার পরেই ওই ঘরটি ‘বাংলার আবাস যোজনা প্রকল্প-এর বলে লিখে দেওয়া হয়। উপভোক্তা হিসেবে লেখা হয় শঙ্করবাবুর নাম। সে দিনই পঞ্চায়েত শুক্রবার এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানিয়েছিল। এ দিন সকাল থেকেই পঞ্চায়েতের সামনে ধর্নায় বসেন বিজেপি কর্মীরা। প্রধান-উপপ্রধানেরা পঞ্চায়েতে আসতেই তাঁদের ঘিরে ধরে ‘শঙ্কর মাঝির ঘর ফেরত দিতে হবে’ বলে আওয়াজ তোলা হয়। এর কিছুক্ষণ পরেই পঞ্চায়েতের কর্তারা কাঠুরিয়াপাড়ার নীল-সাদা বাড়িটির উদ্দেশে দিকে রওনা হন। সেখানে প্রধান মনিকা মুর্মু চাবি তুলে দেন শঙ্করবাবুর হাতে।

পঞ্চায়েতের উপপ্রধান তৃণমূলের উদয় দাসের দাবি, “শঙ্করবাবুর ঘটনায় অভিযুক্তকে (স্থানীয় তৃণমূল নেতা রামরঞ্জন সাঁতরা ওরফে বুটে) খুঁজে বার করে তাঁকে শাস্তিস্বরূপ জমি-সহ ঘর তৈরির নিদান দেওয়া হয়েছে। দেড় মাসের মধ্যে তিনি নিজের খরচে ঘর তৈরি করে না-দিলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার চিন্তাভাবনা রয়েছে।’’ বৃহস্পতিবার ওই পঞ্চায়েত এলাকাতেই আরও দু’জনকে সরকারি প্রকল্পে ঘর না দিয়ে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে রামরঞ্জনবাবু বিরুদ্ধে। রামরঞ্জনবাবু অভিযোগ মানেননি। তবে বুঝি মাঝি ও সাহেব হাঁসদা নামে ওই দু’জনের ঘরও অভিযুক্ত নেতাকে গড়ে দিতে হবে বলে ‘নিদান’ দিয়েছে পঞ্চায়েত।

পঞ্চায়েত এ ভাবে ‘নিদান’ দিতে পারে কি না জানতে চাওয়া হলে উদয়বাবু মন্তব্য করতে চাননি। তবে তৃণমূলের স্থানীয় নেতাদের একাংশের বক্তব্য, প্রথমেই থানা-পুলিশ এবং প্রশাসনকে জড়িয়ে পদক্ষেপ করা হলে, ওই উপভোক্তাদের ঘর পাওয়ার বিষয়টি পিছিয়ে যেত। তাই আপাতত স্থানীয় ভাবে বিষয়টি দেখা হচ্ছে।

ঘটনায় দলের ভাবমূর্তি কি প্রশ্নের মুখে পড়ল না? তৃণমূলের জামালপুর ব্লক কার্যকরী সভাপতি প্রদীপ পাল বলেন, “প্রশাসন যা ভাল বোঝে, করুক। আমাদের কিছু বলার নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Fraud crime
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE