Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

পদ্মে আস্থা বেড়েছে পুর এলাকায়

বর্ধমান ও গুসকরা দু’টি পুরসভার অধিকাংশ ওয়ার্ড গিয়েছে বিজেপির দখলে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সৌমেন দত্ত
শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০১৯ ০২:০৫
Share: Save:

প্রায় আট মাস আগে বর্ধমান ও গুসকরা পুরসভার মেয়াদ শেষ হয়েছে। লোকসভা নির্বাচনে ওয়ার্ড-ভিত্তিক ফল দেখে পুরভোটের কৌশল ঠিক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তৃণমূল। বর্ধমান দক্ষিণ বিধানসভার প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডে তৃণমূল প্রার্থী মমতাজ সংঘমিতাকে নিয়ে প্রচারেও গিয়েছিলেন স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। কিন্তু বৃহস্পতিবারের রাজ্য তো বটেই জেলার ফলাফলে দুশ্চিন্তায় শাসক শিবির। বর্ধমান ও গুসকরা দু’টি পুরসভার অধিকাংশ ওয়ার্ড গিয়েছে বিজেপির দখলে।

বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রের মধ্যে বর্ধমান দক্ষিণ বিধানসভা। বর্ধমান শহরের ৩৫টি আসন নিয়েই এই বিধানসভা। ফলাফলের হিসেবে, তৃণমূল ১৩৩৮ ভোটে এগিয়ে থাকলেও ওয়ার্ড ভিত্তিক ফলে অর্ধেকের বেশি জায়গাতেই তৃণমূল পিছিয়ে পড়েছে। যার মধ্যে বর্ধমানের বিদায়ী পুরপ্রধান স্বরূপ দত্তের ওয়ার্ড রয়েছে। রয়েছে বেশ কয়েকজন চেয়ারম্যান-ইন কাউন্সিলের ওয়ার্ডেও। তৃণমূলের একাংশের দাবি, শহরে প্রায় ১১ শতাংশ অবাঙালি ভোট রয়েছে। তার বেশির ভাগ গিয়েছে বিজেপিতে। এ ছাড়াও শহরের দু’একটি ওয়ার্ড ছাড়া সব ওয়ার্ডেই একাধিক গোষ্ঠী রয়েছে তৃণমূলের। ভোটের ফলে প্রভাব পড়েছে তারও। এ ছাড়াও গত বিধানসভায় সিপিএমের প্রার্থী আইনুল হক ভোটের আগে বিজেপিতে যোগ দেওয়ায় সিপিএমের নিচুতলার ভোটের একাংশ বিজেপির দিকে ঝুঁকেছে বলেও দাবি তৃণমূল নেতাদের।

যদিও বিজেপির দাবি, শহরের মানুষ তৃণমূলের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। এখন ভোট হলে তা তাঁদের পক্ষেই যাবে। বিজেপি নেতা আইনুল হকের দাবি, “বর্ধমান শহরে ২১টি ওয়ার্ডে আমরা জিতেছি। হেরে যাওয়ার ভয়ে তৃণমূল ভোট পিছিয়ে দিয়েছে। পুরভোটে আমরা আরও বেশি আসন জিতব।’’ শহরের নাগরিক পরিষেবা ও গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে দাবিতে পুরসভায় লড়াই হবে বলেও তাঁর মত।

তৃণমূল বিধায়ক রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “সব জায়গায় যে রকম গোলমাল হয়েছে, আমাদের এখানেও সেটাই হয়েছে। সবাই মিলে এক হয়ে আমাদের ভোট ব্যাঙ্ক ফিরিয়ে আনতে হবে। বর্ধমান গিয়ে সবার সঙ্গে যোগাযোগ করব।’’

গুসকরা শহরেও বিজেপি প্রায় সাড়ে চার হাজার ভোটে ‘লিড’ পেয়েছে। ১৬টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৪ ও ৫ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল জিতেছে। বাকি সব ওয়ার্ডে এগিয়ে বিজেপি। পুরপ্রধান বুর্ধেন্দু রায়ের ওয়ার্ডে তৃণমূল জিতলেও বহু দিনের দুই কাউন্সিলর নিত্যানন্দ চট্টোপাধ্যায় ও মল্লিকা চোংদারের ওয়ার্ডে পিছিয়ে তৃণমূল। এ অবস্থায় পুরনির্বাচনে বোর্ড গঠন করা যাবে কি না, সে নিয়েও সন্দিহান তৃণমূল নেতারা। বিদায়ী কাউন্সিলর নিত্যানন্দবাবুর দাবি, “এ বার লোকসভা ভোটে দল কাউন্সিলরদের কোনও দায়িত্ব দেয়নি। তার ফল ভুগতে হচ্ছে।’’

মেমারি পুরসভার ১৬টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৪টে ওয়ার্ডে পিছিয়েছে তৃণমূল। আরও ৫টিতেও লড়াই হয়েছে হাড্ডাহাড্ডি। পুর এলাকায় মোট ১,১১২ ভোটে জিতেছে তৃণমূল। বিজেপি নেতাদের দাবি, যত দিন যাবে মানুষ বুঝবেন তাঁর ভাল কিসে হবে। কাটোয়া, কালনাতেও পরিস্থিতি একই। কালনার ১৮টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১২টিতে এগিয়ে রয়েছে বিজেপি। পুরপ্রধান দেবপ্রসাদ বাগ নিজের ওয়ার্ডে মাত্র ৩৭ ভোটে এগিয়ে রয়েছেন। তাঁর দাবি, ‘‘ফল দেখে কোনও অঙ্ক মেলাতে পারছি না। তবে এটা ঠিক উন্নয়নের নিরিখে মানুষ ভোট দেননি। সেটা হলে চিত্রটা অন্যরকম হত।’’ যদিও বিজেপির জেলা সম্পাদক ধনঞ্জয় হালদারের দাবি, ‘‘তৃণমূল নেতাদের প্রতি শহরের সাধারণ মানুষের ক্ষোভ ছিল। ভোট বাক্সে তারই প্রতিফলন ঘটেছে।’’

জেলা বিজেপির সাংগঠনিক সভাপতি সন্দীপ নন্দী বলেন, “আমরা ফল নিয়ে বিশ্লেষণ করছি। শপথ গ্রহণের পরে রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’ তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথও বলেন, “বিচার-বিশ্লেষণ করে এগোতে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

BJP TMC Municipal Area
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE