প্রতীকী ছবি।
গ্রাম থেকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দূরত্ব ৯ কিলোমিটার। ওঝার বাড়ি ১২ কিলোমিটার। রাতে বাড়িতেই সর্পদষ্ট হয়েছিল কিশোর। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে না নিয়ে গিয়ে বাড়ির লোকজন তাকে নিয়ে যায় ওঝার কাছে। ওঝা হাসপাতালে পাঠালেও সেখানে পৌঁছনোর আগেই মৃত্যু হয় ছেলেটির। ওঝার কাছে নিয়ে গিয়েও শেষরক্ষা না হওয়ার এমন অভিজ্ঞতা অবশ্য আগেও হয়েছে মঙ্গলকোটের গোতিষ্ঠার দ্বারসিনী গ্রামের ওই পরিবারের। বছরখানেক আগেই বাড়ির সাত বছরের একটি মেয়ে সর্পদষ্ট হলে ওঝার দ্বারস্থ হয়েছিল তারা।
মঙ্গলকোটে এ ভাবে মৃত্যু কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। সাপের ছোবলে অসুস্থকে ওঝার কাছে নিয়ে যাওয়ার প্রবণতা কমছে না, আক্ষেপ করেন চিকিৎসকেরা। তাঁরা জানান, সাপে কাটা রোগীকে সময়মতো হাসপাতালে আনা গেলে সুস্থ হয়ে যাওয়ার পুরো সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আনার আগে অধিকাংশ ক্ষেত্রে রোগীকে ওঝার কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। ওঝা খানিক ঝাড়ফুঁক করার পরে পরিস্থিতি বেগতিক বুঝলে হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। এর মাঝে পেরিয়ে যায় বেশ খানিকটা সময়। তার জেরে ঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু করা যায় না। মৃত্যু হয় রোগীর।
বারবার মৃত্যুর ঘটনার পরেও ওঝাদের উপরে কেন আস্থা রাখছেন গ্রামবাসী? চিকিৎসকদের মতে, কোনও কারণে কেটে গেলে সন্দেহের বশে ওঝার কাছে যান অনেকে। কিন্তু, যদি অন্য কোনও কিছুর জেরে কেটে যায় বা নির্বিষ সাপে ছোবল দেয় তবে কোনও সমস্যা হয় না। চিকিৎসক ও বিজ্ঞানমঞ্চের সদস্যেরা মনে করেন, এই বিশ্বাসেরই সুযোগ নেন অনেক ওঝা। তাঁরা দাবি করেন, রোগীকে সুস্থ করে দিয়েছেন। মানুষজনেরও ধারণা হয়, ওঝার ঝাড়ফুঁকে কাজ হয়েছে।
এই ভুল ধারণার জেরেই ওঝার কাছে যাওয়া আটকানো যাচ্ছে না বলে অভিযোগ। আউশগ্রামের এক ওঝার দাবি, তাঁর কাছে প্রতিদিন ৮-১০ জন সাপে কাটা রোগী আসেন। তাঁদের অধিকাংশই সুস্থ হয়ে ফিরে যান। ওঝার কাছে এত জন গেলেও তাঁদের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে দিনে গড়ে এক জন করে সাপে কাটা রোগী আসেন বলে জানান জঙ্গলমহল অধ্যুষিত আউশগ্রাম ১ ব্লকের স্বাস্থ্য আধিকারিক ধীমান মণ্ডল। অর্থাৎ, মাসে গড়ে ১০ জন রোগী ভর্তি হন এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। তার মধ্যে গড়ে দু’জনকে জেলা হাসপাতালে ‘রেফার’ করা হয়।
আউশগ্রামের ওই ওঝার দাবি, যাঁরা দেরি করে আসেন, তাঁদের তড়িঘড়ি হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন তিনি। চিকিৎসকদের দাবি, বিষধর সাপে ছোবল দেওয়ার ওঝার কাছে গিয়ে সময় নষ্ট করলে রোগীকে বাঁচানোর সুযোগ অনেকটা কমে যায়। অ্যান্টি ভেনম সিরাম সময়মতো না দেওয়া গেলে সর্পদষ্টকে বাঁচানো মুশকিল হয়ে যায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy