কারও দাবি, ধাক্কা সামলানো যায়নি। ব্যবসা ধুঁকছে। কারও বা আবার আশা, কিছু দিনের মধ্যেই হয়তো ঘুরে দাঁড়াবে বাজার। তবে মোটের উপরে গয়না হোক বা বৈদ্যুতিন জিনিসপত্রের ব্যবসায়ী, সকলেরই দাবি, নোট বাতিলের এক বছর পরেও এর ধাক্কা সামলাতে পারেনি বাজার।
দুর্গাপুরের নানা স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের দাবি, গত বারের তুলনায় এ বছর গয়নার বিক্রি গড়ে ৪০ শতাংশ কম। কারণ, তাঁদের একাংশের দাবি, কার্ডের বদলে নগদেই গয়না কেনার প্রবণতা বেশি থাকে ক্রেতাদের। বেনাচিতি বাজারের স্বর্ণ ব্যবসায়ী চন্দন দাস বলেন, ‘‘নোটবাতিলের ব্যাপক প্রভাব পড়েছিল স্বর্ণশিল্পে। এখন ধীরে ধীরে অবস্থা বদলাতে শুরু করলেও তার রেশ রয়েছে।’’ একই বক্তব্য আসানসোলের গয়নার ব্যবসায়ী সুদীপ রায়েরও। তবে তাঁর আশা, ‘‘নোটবন্দির পরে চার মাস একেবারেই বিক্রি হয়নি। কিন্তু দ্রুত অবস্থার বদল হতে পারে।’’
শিল্পাঞ্চলের অর্থনীতির অন্যতম ভরসা, বস্ত্র ব্যবসা। দুর্গাপুর, আসানসোলের ছোট ব্যবসায়ীরা জানান, নোট বাতিলের পরে প্রথম দু’-তিন মাস বিক্রি প্রায় হয়নি। এখনও সেই ধাক্কা পুরোপুরি সামলানো যায়নি বলেই তাঁদের মত। কারণ, তাঁরা জানান, প্রথমত, বাজারে নগদের অভাব রয়েছে। দ্বিতীয়ত, ছোট ব্যবসায়ীদের অধিকাংশই কার্ডে লেনদেনের ব্যবস্থা করতে পারেননি। এর ফলে বহু বস্ত্র ব্যবসায়ী কলকাতা থেকে জিনিসপত্রও আনতে পারেননি। তবে নোট বাতিলে বড় প্রতিষ্ঠিত বস্ত্র ব্যবসায়ীদের বিক্রিতে তেমন প্রভাব পড়েনি বলেই দাবি চণ্ডীদাস বাজারের বুলু পালের। তাঁর কথায়, ‘‘প্রথম দু’মাস নগদের অভাবে কেনাকাটা কমে। তবে বছর গড়াতে সেই ধাক্কা সামলাতে অসুবিধা হয়নি।’’
বেঙ্গল সুবার্বান চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সাধারণ সম্পাদক প্রফুল্ল ঘোষ বলেন, ‘‘নোট বাতিলে আপত্তি নেই। কিন্তু যে ভাবে, তাড়াহুড়ো করে গোটা বিষয়টা হয়, বাজারে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল।’’
তবে নোট বাতিলের জেরে বৈদ্যুতিন জিনিসপত্রের বাজারে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে বলে দাবি আসানসোলের ব্যবসায়ী স্বপন চৌধুরীর। তিনি বলেন, ‘‘এই সময়সীমাটা যদি ধরি, গত বছরের তুলনায় সামগ্রিক ভাবে ৬৫ শতাংশ কম বিক্রি হয়েছে। এমনকী এ বারের ধনতরেস গত বারের তুলনায় ৮০ শতাংশ কম ব্যবসা হয়েছে।’’
হোটেল ব্যবসায়ী সুব্রত দত্ত অবশ্য জানান, নোট বাতিলের ফলে প্রথম চার মাস ব্যাপক ধাক্কা লাগে। এ পর্যন্ত সেই ধাক্কা মোটেও কাটিয়ে ওঠা যায়নি বলে দাবি তাঁর। তাঁর দাবি, ‘‘এর থেকেই বোঝা যায়, পর্যটন শিল্পেও প্রভাব প়ড়েছে ভাল মতোই।’’ নোটবাতিলের পরে জিএসটি লাগু হওয়াটাও বাজার ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে বাধা দিয়েছে বলে দাবি পর্যটন ব্যবসায়ীদের একাংশের।
তবে আসানসোলের শিল্পপতি তথা বণিকসভার কর্ণধার রাজেন্দ্রপ্রসাদ খেতানের দাবি, ‘‘প্রথম চার মাসে ব্যবসায় যে ধাক্কা লাগে, তা সামলানোর জন্য সরকারকে আরও কিছু পদক্ষেপ করতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy