Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
‘এক ছিলিমে’/১

গাঁজার টানে বুঁদ, নালিশ জেলা জুড়ে 

ভিন্-রাজ্য থেকে ঢুকছে গাঁজার পুরিয়া, গাঁজার হাতবদল কী ভাবে, এলাকায় প্রভাব কী, পুলিশ-প্রশাসনের নজরদারি কেমন, কী অবস্থা নাগরিক সচেতনতার, খোঁজ নিল আনন্দবাজার পত্রিকা। সাম্প্রতিক সময়ে রেল পুলিশের লাগাতার অভিযানের ফলে এ-ও দেখা যাচ্ছে, সড়ক পথেও চলছে গাঁজা ‘আমদানি’, খবর পুলিশ সূত্রে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নীলোৎপল রায়চৌধুরী
রানিগঞ্জ শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০১৮ ০১:০৩
Share: Save:

মাঠের মধ্যে গোল হয়ে বসে কয়েক জন। একে একে হাতবদল হচ্ছে ছিলিমের। ধোঁয়ার গন্ধে চারপাশ ভারী। দৃশ্যটা চেনা জামুড়িয়ার এক এলাকার বাসিন্দাদের। শুধু ওই এলাকাই নয়, পশ্চিম বর্ধমান জু়ড়েই এ ভাবে গাঁজার ঠেক চলছে। ব্যক্তিগত ভাবে গাঁজা ব্যবহার, তা তো রয়েইছে। জেলার নানা প্রান্তের বাসিন্দাদের অভিযোগ এমনই।

এলাকাবাসীর একাংশের অভিযোগ, হাত বাড়ালেই মিলছে মিলছে গাঁজা। কিন্তু কী ভাবে তা ঢুকছে জেলায়? পুলিশ সূত্রের খবর, এই জেলায় গাঁজা ঢুকছে বিহার, মণিপুর, ওডিশা, কেরলের মতো নানা রাজ্য থেকে। এমনকি নেপাল থেকেও গাঁজা আসছে। আর তা আসছে ট্রেনে করে বা সড়ক-পথে।

ট্রেনে গাঁজা উদ্ধারের ঘটনাও নতুন নয় এই জেলায়। ২০১৫-য় হাওড়াগামী অমৃতসর এক্সপ্রেসের সংরক্ষিত কামরা থেকে ব্যাগভর্তি গাঁজা উদ্ধার করে চিত্তরঞ্জনের রেল পুলিশ। এ ছাড়াও গত এক দশকে জেলার নানা স্টেশনে গাঁজা উদ্ধারের ঘটনা ঘটেছে।

অবসরপ্রাপ্ত এক পুলিশকর্তার অভিজ্ঞতা সাধারণত দেখা যায়, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই শিলিগুড়ি এবং ভিন্-রাজ্য থেকে আসা ঘড়ি, ভিসিডি-সহ নানা জিনিসপত্রের সঙ্গে পাচার করা হত গাঁজা।

কী ভাবে কাজ করে গাঁজা-কারবারিদের ‘নেটওয়ার্ক’? ওই প্রবীণ আধিকারিক জানান, সাধারণত, ট্রেন সংশ্লিষ্ট স্টেশনে পৌঁছলে কারবারিদের ‘নিজস্ব নেটওয়ার্ক’ কাজ করে। বিশেষ সূত্রে জানা যায়, সাধারণ ভাবে এক পেটিতে দশ থেকে ৫০ কেজি গাঁজা থাকে। গাঁজার পেটি কোনও এক জন কারবারি যদি ট্রেনে করে আনে, তা হলে সে প্রথমে নির্দিষ্ট স্টেশনে নামে। তার পরে শহর বা গ্রামের কোনও নির্দিষ্ট জায়গায় গাঁজা নিয়ে সে পৌঁছে যায়। ওই ব্যক্তি সেই গাঁজা ভাগ করে দেয় ‘লোকাল এজেন্ট’-দের। তার পরে ওই ‘এজেন্ট’-দের মাধ্যমে তা ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়।

কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে রেল পুলিশের লাগাতার অভিযানের ফলে এ-ও দেখা যাচ্ছে, সড়ক পথেও চলছে গাঁজা ‘আমদানি’, খবর পুলিশ সূত্রে।

জানা গিয়েছে, দশ গ্রাম অর্থাৎ এক ভরি গাঁজার এক একটি পুরিয়ার দর এই মুহূর্তে, ১২০ টাকা থেকে ১৬০ টাকা।

এই পরিস্থিতিতে জেলার নানা প্রান্তে গাঁজার পুরিয়া ‘অত্যন্ত সহজলভ্য’, অন্তত তেমনটাই দাবি জেলার নানা প্রান্তের বাসিন্দাদের। স্থানীয় সূত্রে জানা গেল, রানিগঞ্জের জেকে নগর গাঁজার সব থেকে বড়় পাইকারি ‘বিপণনকেন্দ্র’। জেকে নগর বাজার থেকে জেকে নগর প্রজেক্ট এলাকা পর্যন্ত বেশ কয়েকটি গাঁজার দোকান রয়েছে। এ ছাড়া, নিমচা থেকে রানিসায়র মোড় যাওয়ার পথে, জামুড়িয়ার নিঘায়, নিউকেন্দা, পাণ্ডবেশ্বরের একটি পেট্রল পাম্প লাগোয়া হোটেলের কাছে, অণ্ডালের একটি ব্যাঙ্ক লাগোয়া গুমটি, তপসি রেলে গেট লাগোয়া এলাকায়, চুরুলিয়া হাটের বিশেষ কিছু দোকান-সহ নানা জায়াগায় গাঁজা মেলে বলে জানা গিয়েছে। এ ছাড়া আসানসোল শহর, বার্নপুর, ত্রিবেণী মোড়, পাণ্ডবেশ্বরের জোয়ালডাঙা, দুর্গাপুরের মেনগেট, ভিড়িঙ্গি, প্রান্তিকা লাগোয়া বস্তি, দুর্গাপুর স্টেশনের কাছাকাছি বেশ কিছু জায়গায় গাঁজা মিলছে।

কিন্তু এই কারবার রুখতে কী করছে পুলিশ-প্রশাসন, কী অবস্থা নাগরিক সচেতনতার, প্রশ্ন রয়েছে এ সব নিয়েও। (চলবে)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cannabis Smoking Weed
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE