প্রতীকী ছবি।
পুজোর পাঁচ দিনের মধ্যে তিন দিনই ‘সেঞ্চুরি’। মঙ্গলবার, একাদশীতে পূর্ব বর্ধমান জেলায় করোনা-আক্রান্তের সংখ্যা পঁচাশি। এ দিনই জেলায় মোট করোনা আক্রান্ত সাত হাজার পেরিয়ে গেল। মৃত্যুর সংখ্যাও সেঞ্চুরির দোরগোড়ায়। তবে স্বাস্থ্য-কর্তাদের কাছে আশার কথা, পুজোর সময়ে সামান্য হলেও সুস্থতার হার বেড়েছে। জেলা স্বাস্থ্য-কর্তারা জানান, উৎসবের মরসুমে করোনার হার বাড়বে, এটা ধরে নিয়েই মঙ্গলবার থেকে বর্ধমানের নির্মীয়মাণ কৃষি ভবনে জেলার আরও একটি কোভিড হাসপাতাল শুরু হয়েছে। সেখানে নভেম্বর থেকে আইসিসিইউ পরিষেবা দেওয়া হবে।
জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের রিপোর্ট অনুযায়ী, বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে আরটি-পিসিআর যন্ত্রে পুজোর পাঁচ দিনে নমুনা পরীক্ষার পরে এক, এক, পাঁচ, শূন্য ও একটির ফল মিলেছে। সেখানে অ্যান্টিজেন পরীক্ষার ফল এসেছে ৮৩৪, ১০০৩, ১০০০, ১০০৪ ও ৯৭৫টির। ষষ্ঠী থেকে দশমী, এই পাঁচ দিনে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন যথাক্রমে ১০৮, ৯৩, ১১৫, ১০৯ ও ৬১ জন। সোমবারের রিপোর্ট অনুযায়ী, জেলায় আক্রান্তদের মধ্যে এখনও পর্যন্ত উপসর্গ রয়েছে ১,১৯৫ জনের। পুজোর মধ্যে জেলা পরিষদের দুই সদস্য এবং জেলা তৃণমূলের এক নেত্রীও করোনা আক্রান্ত হয়েছেন।
স্বাস্থ্য দফতরের আশঙ্কা, পুজো ক’দিন রাস্তায় ভাল ভিড় ছিল। ঘাটে-ঘাটে নিরঞ্জনেও ভিড় হচ্ছে। আরটি-পিসিআর যন্ত্রের রিপোর্ট এলে সংক্রমণ আরও বাড়তে পারে। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ সূত্রে জানা যায়, সেখানে করোনার মোট নমুনা পরীক্ষা এক লক্ষ অতিক্রম করেছে সোমবার। মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ সুহৃতা পাল বলেন, ‘‘প্রতিদিন সাড়ে ছ’শোরও বেশি নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে। রিপোর্ট পেতে ৩৬ ঘণ্টা সময় লাগে। সে জন্য ২৪ ঘণ্টার রিপোর্টে তার প্রতিফলন হয়নি।’’
স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা জানান, পুজোর সময়েও বর্ধমান শহরে করোনা-আক্রান্তের খোঁজ বেশি পাওয়া গিয়েছে। এই সময়ে বর্ধমান শহরে আক্রান্ত ১০০ জনেরও বেশি আক্রান্ত হয়েছেন। অনেকটা পিছনে রয়েছে কালনা শহর ও ভাতার ব্লক। জেলার সব ক’টি ব্লক ও শহরে পুজোর পাঁচ দিনই করোনা আক্রান্ত মিলেছে। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘পুজোর সময়েও গ্রামে-গ্রামে আক্রান্তের খোঁজে ব্লক স্বাস্থ্য দফতর শিবির করেছিল। কিন্তু সে সব শিবিরে লোকজন আসেননি। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের দাবি, অনেক গ্রাম থেকেই শিবির গুটিয়ে নিতে হয়েছে। ওই শিবির করা গেলে করোনা আক্রান্তের খোঁজ মেলার সম্ভাবনা রয়েছে।
এর মধ্যে জেলা স্বাস্থ্য দফতর করোনা চিকিৎসায় কৃষি ভবনে ৬০টি সাধারণ শয্যা ও ৪০টি আইসিসিইউ সুবিধাযুক্ত কোভিড হাসপাতাল চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মঙ্গলবার থেকে প্রথম ধাপে ২০টি সাধারণ শয্যা দিয়ে হাসপাতাল চালু করা হয়েছে। চিকিৎসক ও নার্সের ২৬ জনের একটি ইউনিট গঠন করা হয়েছে। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে বিশেষজ্ঞ ও জরুরি পরিষেবার সহায়তা নেবে স্বাস্থ্য দফতর। সিএমওএইচ প্রণব রায় বলেন, ‘‘ধাপে-ধাপে শয্যা বাড়ানো হবে। নভেম্বর থেকে আইসিসিইউ পরিষেবা চালু হয়ে যাবে। সব দিক থেকেই আমরা তৈরি রয়েছি। বেসরকারি কোভিড হাসপাতালেও পরিষেবার উন্নতি করা হয়েছে।’’
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা যায়, করোনা-যুদ্ধে একমাত্র স্বস্তির জায়গা সুস্থতার হার বৃদ্ধি। গত সপ্তাহে জেলায় সুস্থতার হার ছিল ৮৮%-এর সামান্য বেশি। পুজোর পাঁচ দিনে করোনা-আক্রান্তের হার বাড়লেও সুস্থতার হার কমেনি। বরং, তা ৯০ শতাংশের দোরগোড়ায় পৌঁছেছে। পূর্ব বর্ধমান জেলায় সংক্রমণের হার নিয়ে চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলেন প্রশাসনের কর্তারা। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের দাবি, এখন সে হার প্রায় ৩.৬৮ শতাংশ, যা রাজ্যের তুলনায় প্রায় অর্ধেক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy