বালিবোঝাই ট্রাকে আগুন। নিজস্ব চিত্র
বালিবোঝাই ট্রাকের ধাক্কায় এক যুবকের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে রবিবার রাতে তেতে উঠল ফরিদপুর (লাউদোহা) থানার গৌরবাজার এলাকা। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, পরপর আটটি বালির ট্রাক, ডাম্পারে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ধরায় জনতা। মৃত বিশ্বজিৎ ধারা (২৬) গৌরবাজারেরই বাসিন্দা। এই ঘটনায় এলাকায় বালির অবৈধ কারবারিরা জড়িত বলে অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসীর একাংশ।
পেশায় সোনার দোকানের কর্মী বিশ্বজিৎ প্রতিদিনের মতো রবিবারও রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ বনগ্রাম থেকে দোকান মালিকের সঙ্গে মোটরবাইকে করে বাড়ি ফিরছিলেন। মাধাইগঞ্জের কাছে বালিবোঝাই ট্রাক মোটরবাইকে ধাক্কা মারে। পিছনে বসে থাকা বিশ্বজিৎ ছিটকে রাস্তায় পড়ে ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হন। দুর্ঘটনার পরে ট্রাকটি ফেলে চম্পট দেয় চালক ও খালাসি।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে চলে আসেন এলাকাবাসীর একাংশ। শুরু হয় রাস্তা অবরোধ। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জনতার একাংশ আচমকা দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রাকটিতে ভাঙচুর চালায়। কয়েকজনকে সেটিতে আগুনও ধরিয়ে দিতে দেখা যায়। ইতিমধ্যে এলাকায় দলে দলে আসতে থাকেন বাসিন্দারা। উত্তেজনা বাড়তে থাকে। রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা বালিবোঝাই আটটি ট্রাক, ডাম্পারে পরপর ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ধরানো হয় বলে অভিযোগ। পুলিশের বড় বাহিনী, কমব্যাট ফোর্স এলাকায় আসে। খবর দেওয়া হয় দমকলে। দমকলের দু’টি ইঞ্জিন এসে আগুন নেভাতে শুরু করে।
বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে বালির অবৈধ কারবার চলছে। অবৈধ বালি কেটে তা নিয়ে বেপরোয়া ভাবে ট্রাক, ডাম্পারগুলি যাতায়াত করে। বারবার চালকদের সতর্ক করে, প্রশাসনের কাছে পথ নিরাপত্তায় ব্যবস্থার দাবি জানিয়েও লাভ হয়নি। উল্টে, বেপরোয়া ট্রাক, ডাম্পারের জন্য প্রায়ই ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে বলে অভিযোগ। জনতা দ্রুত অবৈধ বালিঘাটগুলি বন্ধ এবং কঠোর হাতে যান নিয়ন্ত্রণের দাবি তোলে। মৃতের আত্মীয় আনন্দময় পাত্র, গৌতম পাত্রেরা বলেন, ‘‘কতবার চালকদের বলা হয়েছে একটু আস্তে চালান। হেলদোল নেই। বেপরোয়া গতির জন্য মাঝেসাঝে দুর্ঘটনা ঘটছে। প্রাণহানির ঘটনার পরেও পথের পরিস্থিতি বদলায় কি না, সেটাই দেখার।’’
আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট জানায়, অবৈধ বালিঘাট বন্ধ ও যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে। পুলিশের হস্তক্ষেপে প্রায় চার ঘণ্টা পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। অপ্রীতিকর অবস্থা এড়াতে এলাকায় পুলিশের টহল রয়েছে।
সোমবার সকালে পুলিশকে ঘিরে ক্ষোভপ্রকাশ করেন স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ। তাঁদের অভিযোগ, পুলিশ ও শাসক দলের স্থানীয় নেতাদের যোগসাজসে অবৈধ বালিঘাটগুলি চলছে। সে জন্যই এমন ‘বেপরোয়া’ মনোভাব চালকদের। পুলিশ অবশ্য অভিযোগ মানেনি। এ দিন মৃত যুবকের বাড়ি গিয়ে পরিবারটির পাশে থাকার আশ্বাস দেন এলাকার বিধায়ক তথা আসানসোলের মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারি। এলাকাবাসীর অভিযোগ প্রসঙ্গে তৃণমূলের জেলা সভাপতি জিতেন্দ্রবাবু বলেন, ‘‘অবৈধ বালির কারবারে আমাদের দলের কেউ জড়িত নন। পুলিশ তদন্ত করে উপযুক্ত পদক্ষেপ করুক। তবে যান নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy