Advertisement
০৭ মে ২০২৪
Coronavirus Lockdown

ক্ষতিপূরণ পেতে সমস্যা মেটানোর আর্জি বৈঠকে

বৈঠক সূত্রে জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বিমার জন্যে আবেদন করতে হয়।

বর্ধমানে মন্ত্রীর বৈঠক। নিজস্ব চিত্র

বর্ধমানে মন্ত্রীর বৈঠক। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০২০ ০১:৫৮
Share: Save:

এক দিকে, বারবার প্রাকৃতিক বিপর্যয়। অন্য দিকে, বিনামূল্যে বিমা করানোর সুযোগ। এই দু’টির যোগফলে জেলায় ফসলবিমা করানোর আগ্রহ আগের থেকে অনেকটা বেড়েছে। কিন্তু বিমার ক্ষতিপূরণ পেতে নানা টালবাহানার মধ্যে পড়তে হচ্ছে, টাকা পেতে বছর পেরিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ চাষিদের। কৃষি দফতরের কর্তাদের একাংশের দাবি, তাঁদেরও নানা প্রশ্নের মুখে ফেলছে বিমা সংস্থা। মঙ্গলবার পূর্ব বর্ধমানের সার্কিট হাউসে রাজ্যের কৃষি-কর্তাদের কাছে এই বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুললেন পূর্ব বর্ধমান জেলা কৃষি দফতরের কর্তারা।

বৈঠক শেষে রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে, তার সুরাহা করতে বেশি সময় লাগবে না। চাষিদের স্বার্থে যা করণীয়, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে তার সবই আমরা করব।’’ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদার বলেন, ‘‘আগের বিমা সংস্থাগুলি বাতিল করা হয়েছে। নতুন সংস্থা নিয়োগ করা হয়েছে। চাষিদের ক্ষতিপূরণ পেতে অসুবিধা হলে, ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে মামলা করা হবে বলে জানানো হয়েছে। আমরা বিষয়টির সমাধানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’’ বৈঠক সূত্রে জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বিমার জন্যে আবেদন করতে হয়। ঘূর্ণিঝড় আমপানের ধাক্কায় এখনও অনেক জায়গায় ইন্টারনেটের পরিষেবা ঠিক হয়নি। সে জন্য সেই সময়সীমা কতটা বাড়ানো যায়, তা নিয়ে রাজ্য স্তরে আলোচনা হবে।

জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা যায়, গত বছর বোরো ও আলু চাষে প্রাকৃতিক বিপর্যয় হয়েছিল। নিয়ম মেনে চাষিদের অনেকে অনলাইনে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বিমার ক্ষতিপূরণ চেয়ে আবেদন করেন। ক্ষতির পরিমাণ দেখার জন্যে বিমা সংস্থার কর্তাদের নিয়ে একটি যৌথ কমিটি গড়া হয়েছিল। সেই কমিটি চাষির নাম, জমির খতিয়ান, মৌজা ধরে রিপোর্ট জমা দিয়েছিল। সেই রিপোর্ট জমা পড়ার প্রায় বছরখানেক পরে ধাপে-ধাপে ক্ষতিপূরণের টাকা চাষির অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয়। প্রায় ১২ হাজার চাষিকে ৩১ কোটি টাকা দেওয়ার পরে ক্ষতিপূরণের টাকা দেওয়া বন্ধ করে বিমা সংস্থা। চাষিরা জেলা জুড়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। বিভিন্ন ব্লকের সহ-কৃষি আধিকারিকদের ঘেরাও করে। জেলা থেকে বারবার বিমা সংস্থাকে চিঠি দেওয়া হলেও জবাব মিলছিল না। রাজ্য স্তরে বিমা সংস্থার অসহযোগিতার অভিযোগ জানায় জেলা কৃষি দফতর।

পূর্ব বর্ধমানের উপ-কৃষি অধিকর্তা জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কৃষি দফতরের সচিব বিমা সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। সেখানে সাফ জানানো হয়, ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সময় কোনও টালবাহানা শোনা হবে না। ক্ষতিপূরণের সব টাকা দিতে হবে। প্রায় দু’বছর পরে গত এপ্রিলে চাষিরা বোরো-আলুর ক্ষতিপূরণের টাকা পেলেন।’’ কৃষি দফতর সূত্রে জানা যায়, ছ’হাজার চাষির অ্যাকাউন্টে ১৮ কোটি টাকা এসেছে। কৃষি দফতরের দাবি, গত বারের অভিজ্ঞতার পরে ধারণা হয়েছিল, বিমা সংস্থা আর টালবাহানা করবে না। কিন্তু আমপানের আগে ‘ক্রপ কাটিং’-এর রিপোর্ট জমা পড়ার পর দেখা যায়, কালনা ও বর্ধমান সদর মহকুমার বেশ কিছু মৌজা-পঞ্চায়েতে ধানের ফলন হেক্টর প্রতি দু’আড়াই টন। এ নিয়েও বিমা সংস্থা বারবার চিঠি দিয়ে ‘ক্রপ কাটিং’-এর রিপোর্ট নিয়ে আপত্তি তোলে।

জগন্নাথবাবু বলেন, ‘‘ক্রপ কাটিংয়ের সময়ে বিমা সংস্থার লোকজন থাকেন। সে জন্য ওই দাবিও ধোপে টেকেনি। কিন্তু প্রতি বার বিমা সংস্থা নানা ভাবে অসহযোগিতা করছে বলেই বৈঠকে জানানো হয়েছে।’’

পূর্ব বর্ধমান কৃষি দফতর সূত্রে জানা যায়, জেলায় ৮২ শতাংশ চাষি ফসল বিমা করিয়েছেন। প্রদীপবাবু বলেন, ‘‘বিমার ক্ষতিপূরণের বিষয়টি আমরা দেখব। সব চাষি যাতে বিমার আওতায় আসেন, সে জন্য জোর প্রচার করতে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Lockdown Cyclone Amphan Cyclone
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE