আমডিহা মোড়ে অশান্তি। রয়েছেন আসানসোলের সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়। ছবি: পাপন চৌধুরী।
এক দিকে বিজেপির সদস্য, সমর্থকেরা। অন্য দিকে দাঁড়িয়ে পুলিশ। মুখোমুখি হতেই গোলমাল, বচসা, মারধরের অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগ। রবিবার বিজেপির ‘সঙ্কল্প যাত্রাকে’ কেন্দ্র করে এ ভাবেই দফায় দফায় তেতে উঠল পশ্চিম বর্ধমানের নানা প্রান্ত।
এ দিন সকালে মোটরবাইকে সওয়ার বিজেপি নেতা, কর্মীরা দুর্গাপুরের রাজীব গাঁধী ময়দানে জড়ো হন। ছিলেন, বিজেপির জেলা সভাপতি লক্ষ্মণ ঘোড়ুই-সহ অন্য নেতৃত্বও। মোতায়েন ছিল পুলিশ। আসে কমব্যাট ফোর্সও। বিজেপি কর্মীরা মোটরবাইক নিয়ে মিছিলের জন্য প্রস্তুত হতেই পুলিশ বাধা দেয়। শুরু হয় বচসা। লক্ষণবাবু সহ প্রায় ৪০ জনকে আটক করে নিয়ে যায় পুলিশ। খানিক বাদে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ এলাকায় এসে পতাকা নাড়িয়ে যাত্রা শুরু করে দাবি করেন, ‘মিছিল হবেই।’ বিজেপির অভিযোগ, দিলীপবাবুকেও পুলিশ বাধা দেয়। এমএএমসি টাউনশিপ-সহ দুর্গাপুরের নানা প্রান্তে বিজেপির মিছিল আটকায় পুলিশ, খবর স্থানীয় সূত্রে। লক্ষ্মণবাবুর দাবি, ‘‘বিজেপি কর্মীরা রাজীব গাঁধী ময়দানে যাতে পৌঁছতে না পারেন, তার জন্য বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে পুলিশ আমাদের কর্মীদের আটকে দিয়েছে।’’ আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসি (পূর্ব) অভিষেক মোদী বলেন, ‘‘দুর্গাপুর মহকুমায় মোট ১০৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ৬০টি মোটরবাইক আটক করা হয়েছে।’’
রবিবার ২ নম্বর জাতীয় সড়কে আখলপুর সেতু লাগোয়া এলাকায়, রানিগঞ্জ স্টেশন চত্বর, অণ্ডালের লোকোগেট, উখড়া, ডায়মন্ড মোড়, পাণ্ডবেশ্বরেও বিজেপির বাইক মিছিল আটকায় পুলিশ। রানিগঞ্জে বাইক আটকানো হলে বিজেপি কর্মীরা হেঁটে মিছিল করেন। অবরোধ করা হয় রানিগঞ্জের নেতাজি সুভাষ বসু রাস্তাও। পুলিশ পাঁচ মিনিটের মধ্যেই অবরোধ তুলে দেয়।
গোলমাল হয়েছে আসানসোলেও। এ দিন সকাল ১১টা নাগাদ বারাবনির নুনি গ্রাম লাগোয়া বিজেপির দলীয় কার্যালয়ে মোটরবাইকে সওয়ার হয়ে জমায়েত হন শ’দুয়েক সদস্য, সমর্থক। পুলিশ সূত্রেই জানা যায়, নিষেধ সত্ত্বেও আসানসোলের বিজেপি সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়ের নেতৃত্বে শুরু হয় মোটরবাইক মিছিল। আমডিহা মোড়ে মিছিল আটকায় পুলিশের একটি বড় বাহিনী। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের এডিসিপি (সেন্ট্রাল) সায়ক দাসের নিষেধ সত্ত্বেও মিছিল চলে। এর পরেই পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি বাধে বিজেপি কর্মীদের। এই পরিস্থিতিতেও বাবুল-সহ কয়েক জন এগিয়ে যান।
এর পরে পুলিশ একাধিক মোটরবাইকের চাবি নিয়ে নেয় বলে বিজেপি সূত্রে জানা যায়। স্থানীয় সূত্রে খবর, এই পরিস্থিতিতে দলীয় পতাকার সঙ্গে থাকা লাঠি হাতে বিজেপির কয়েকজন পুলিশের উপরে হামলা চালান। মাথায় লাঠির বাড়ি মারা হয় আসানসোল উত্তর থানার অফিসার ইনচার্জ শান্তনু অধিকারীকে। বিজেপির অবশ্য পাল্টা অভিযোগ, ব্যাপক লাঠি চালিয়েছে পুলিশ।
এমন নানা ঘটনার পরে পুলিশ ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব। দুর্গাপুরে দিলীপবাবু বলেন, ‘‘গণতন্ত্র বাঁচাও কর্মসূচি করতে দেওয়া হয়নি। এখন সঙ্কল্প যাত্রাও আটকানোর চেষ্টা হচ্ছে। রাজ্যে গণতন্ত্র বিপন্ন।’’ বাবুলের অভিযোগ, ‘‘বিনা প্ররোচনায় মিছিলে হামলা চালিয়েছে পুলিশ।’’ যদিও আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের তরফে জানানো হয়েছে, জেলার কোথাও এই কর্মসূচির অনুমতি ছিল না।
দিলীপবাবুদের আরও অভিযোগ, ‘‘পুলিশ দিয়ে বাধা দিয়েছে তৃণমূল।’’ যদিও তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি উত্তম মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বিনা অনুমতিতে মোটরবাইক র্যালি করতে গেলে পুলিশ তো আটকাবেই।’’ এ দিন, তৃণমূলের বারাবনি ব্লক সভাপতি অসিত সিংহ অভিযোগ করেন, বিজেপির মোটরবাইক মিছিল থেকে মদনপুরে তাঁদের দলীয় কার্যালয়ে ভাঙচুর চালানো হয়। যদিও বাবুলের দাবি, ‘‘মদনপুরে তৃণমূলই আমাদের আক্রমণ করে। তৃণমূলের দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর চালানোর কোনও খবর আমার কাছে নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy