Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

প্রায় দু’বছর আগে প্রয়াত ডাক্তার, তবুও খোঁজে আসেন রোগীরা

ফাউন্ডেশন সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত তিনটি ও শিশুদের একটি বিভাগ ছিল। ক, খ ও গ বিভাগে প্রথম হয়েছে যথাক্রমে নীলাঞ্জন গড়াই, আলিশা ইসলাম, অর্ক পাল।

 চিকিৎসকের স্মৃতিতে আঁকা প্রতিযোগিতা। ছবি: বিশ্বনাথ মশান

চিকিৎসকের স্মৃতিতে আঁকা প্রতিযোগিতা। ছবি: বিশ্বনাথ মশান

অর্পিতা মজুমদার
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৯ ০১:৩৪
Share: Save:

দারিদ্র ছিল তাঁর নিত্য সঙ্গী। তবে তার কাছে এক বারের জন্য হার মানেননি দুর্গাপুরের বেনাচিতির মহিষ্কাপুর প্লটের বাসিন্দা প্রয়াত চিকিৎসক মধুসূদন সাহা। তিনি সব সময় নিজেকে নিয়োজিত রাখতেন গরিব মানুষের সেবায়। শুধু চিকিৎসক হিসেবে নিজেকে মেলে ধরাতেই নয়, শিক্ষার প্রসারেও জীবনভর সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন মধুসূদনবাবু। তাই তাঁর নানা কর্মকাণ্ডকে তুলে ধরতে রবিবার বেনাচিতি হাইস্কুলে আঁকা প্রতিযোগিতার আয়োজন করে তাঁরই নামে গঠিত সংস্থা ‘ডাঃ মধুসূদন সাহা ফাউন্ডেশন’। প্রয়াত চিকিৎসকের ৯৩তম জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত এই প্রতিযোগিতায় প্রায় আড়াইশো ছাত্রছাত্রী যোগ দেয়। সেরাদেরও পুরস্কৃত করা হয়।

ফাউন্ডেশন সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত তিনটি ও শিশুদের একটি বিভাগ ছিল। ক, খ ও গ বিভাগে প্রথম হয়েছে যথাক্রমে নীলাঞ্জন গড়াই, আলিশা ইসলাম, অর্ক পাল। দ্বিতীয় হয়েছে যথাক্রমে সূর্য পট্টনায়ক, পায়েল চক্রবর্তী, তনু কর্মকার। তৃতীয় হয়েছে দেবার্ঘ্য রায়, শুভ্রজ্যোতি কোনার, ইন্দ্রজিৎ রায়। আর শিশু বিভাগে প্রথম হয়েছে রীতজিৎ রায়।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মধুসূদনবাবুর জন্ম বাংলাদেশের পাবনায়। শৈশবে তিনি বাবাকে হারান। শরিকি বিবাদের জেরে পারিবারিক সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হন তিনি। চরম আর্থিক প্রতিকূলতার মধ্যেও পড়াশোনা চালিয়ে যান মধুসূদনবাবু। এমবিবিএস পাশ করার পরে প্রথমে বুদবুদ ও পরে দুর্গাপুরে চিকিৎসা শুরু করেন। চিকিৎসক হিসেবে বরাবর দুঃস্থ রোগীদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। বাঁকুড়া, বীরভূম, পুরুলিয়া এমনকি ঝাড়খণ্ড থেকেও দুঃস্থ রোগীরা তাঁর কাছে চিকিৎসার জন্য আসতেন। কেউ খালি হাতে ফিরে যাননি। ২০১৭ সালের জুলাই মাসে তাঁর মৃত্যু হয়। অথচ এখনও রোগীদের কেউ কেউ বাড়িতে আসেন তাঁর খোঁজে। বাড়ির ছাদের উপরে নানা ধরনের গাছের বাগান তৈরির নেশাও ছিল তাঁর।

স্থানীয় বাসিন্দাদের কথা বলে জানা গিয়েছে, নিজে প্রতিকূলতার মধ্যে বড় হয়েছিলেন। তাই জীবনভর বিভিন্ন স্কুলের উন্নয়নে অর্থদান করেছেন। কেউ বিপদ পড়লে সব সময় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন তিনি। বেনাচিতি হাইস্কুল, ভিড়িঙ্গি টিএন হাইস্কুল, পারুলিয়া শিশু শিক্ষা নিকেতন, ভিড়িঙ্গি গার্লস স্কুল-সহ নানা স্কুলে আর্থিক সাহায্য করেছেন। প্রতাপপুর-কালীকাপুর তপোবন বিদ্যাপীঠের খেলার মাঠের জন্য জায়গা দিয়েছেন। নদিয়ার বেথুয়াডহরিতে তাঁর দান করা জমিতে গড়ে উঠেছে ‘ডাঃ মধুসূদন সাহা প্রাথমিক বিদ্যালয়’। এ ছাড়াও দুঃস্থ পড়ুয়াদের দিকে বারবার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত শিক্ষক সুশীল ভট্টাচার্য জানান, অত্যন্ত সাদামাটা জীবনযাপন করতেন। যা রোজগার করেছেন, অধিকাংশই দান করে গিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘মধুসূদনবাবু দুর্গাপুরের গর্ব। বহু ছেলেমেয়েকে বইখাতাও দিয়েছেন।’’

মধুসূদনবাবুর ছয় মেয়ে। সকলেই প্রতিষ্ঠিত। প্রয়াণের পরে তাঁর ছয় মেয়েরাই উদ্যোগী হয়ে বাবার নামে ফাউন্ডেশন গড়েছেন। এ বারই প্রথম তাঁর জন্মদিনে আঁকা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। মধুসূদনবাবুর মেয়ে রত্না সাহা বলেন, ‘‘বাবার আদর্শের কথা যাতে কচি-কাঁচারা জানতে পারে, তারা যেন সেই আদর্শে বড় হতে পারে, সে কথা মাথায় রেখেই এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে।’’ বেনাচিতির বাসিন্দা তপন চক্রবর্তীও বলেন, ‘‘তাঁর মতো (মধুসূদন সাহা) চিকিৎসক পাওয়া ভাগ্যের। তিনি বন্ধুবৎসলও ছিলেন। এখনও তাঁর খোঁজে দূরদূরান্ত থেকে মানুষজন আসেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Drawing Competition Doctor
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE