Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

টেন্ডার-দুর্নীতির নালিশ, ক্ষোভ

অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এসবিএসটিসি কর্তৃপক্ষ। কিন্তু আর কোনও সংস্থা যোগ না দেওয়ার টেন্ডার প্রক্রিয়া বাতিল হয়।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সুব্রত সীট
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০১:১৫
Share: Save:

টেন্ডার-প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির অভিযোগ গড়িয়েছিল আদালত পর্যন্ত। শেষমেশ দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থা (এসবিএসটিসি) টেন্ডার-প্রক্রিয়া বাতিল করে। কিন্তু বিভিন্ন কর্মী সংগঠন থেকে নানা পক্ষের অভিযোগ, সংস্থার কর্তাদের সঙ্গে ‘আঁতাঁতের’ জেরে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে আগের টেন্ডারে বরাত পাওয়া সংস্থাই! যদিও যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সংস্থার কর্তারা।

এসবিএসটিসি সূত্রে জানা যায়, ২০১৩-য় সংস্থার ধর্মতলা, দুর্গাপুর, আসানসোল, আরামবাগ, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, কালনা, সিউড়ি, বহরমপুরে তিন বছরের জন্য ‘ই-টিকিট বুকিং-এজেন্ট’ হিসেবে দুর্গাপুরের সিটি সেন্টারের একটি সংস্থা টেন্ডারে জিতে দায়িত্ব পায়।

কিন্তু এর পরবর্তী টেন্ডার নিয়েই শুরু হয় বিতর্ক। এসবিএসটিসি চলতি বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি নতুন টেন্ডার ডাকে। সেখানে বলা হয়, অন্তত পাঁচ বছর কোনও রাজ্য পরিবহণ সংস্থায় এই কাজের অভিজ্ঞতা এবং বার্ষিক ২০ কোটি টাকা টিকিট বিক্রির ‘যোগ্যতাসম্পন্ন’ কোনও সংস্থা টেন্ডার-প্রক্রিয়ায় যোগ দিতে পারবে। কিন্তু এমন ‘যোগ্যতাসম্পন্ন’ সিটি সেন্টারের ওই সংস্থাটিই শুধুমাত্র যোগ দেয় টেন্ডারে। অন্য কয়েকটি সংস্থা অভিযোগ করে, সিটি সেন্টারের সংস্থাটিকে বাড়তি সুবিধা পাইয়ে দিতেই এমন ‘কঠিন শর্ত’ রাখা হয়। অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এসবিএসটিসি কর্তৃপক্ষ। কিন্তু আর কোনও সংস্থা যোগ না দেওয়ার টেন্ডার প্রক্রিয়া বাতিল হয়।

কর্মী সংগঠন সূত্রে জানা যায়, এই পরিস্থিতিতে এসবিএসটিসি ফের গত ১৮ জুন নতুন করে টেন্ডার ডাকে। এ বার শর্ত ‘শিথিল’ হয়। বলা হয়, টেন্ডারে যোগদানকারী সংস্থার তিন বছরের অভিজ্ঞতা ও বার্ষিক পাঁচ কোটি টাকার টিকিট বিক্রির ‘যোগ্যতা’ থাকতে হবে। এ বার সিটি সেন্টারের ওই সংস্থা-সহ মোট পাঁচটি সংস্থা টেন্ডার প্রক্রিয়ায় যোগ দেয়। গত ৮ অগস্ট সিটি সেন্টারের ওই সংস্থাকে তাদের জয়ী হওয়ার খবর দিয়ে চিঠি দেয় এসবিএসটিসি।

কিন্তু গোটা টেন্ডার প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির অভিযোগ তুলে অন্য একটি সংস্থা কলকাতা হাইকোর্টে রিট পিটিশন দাখিল করে। হাইকোর্ট এসবিএসটিসি কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে রিপোর্ট জমা দিতে বলে। কর্তৃপক্ষ জানান, দুর্নীতির অভিযোগের পরে, নতুন করে সব কাগজপত্র খতিয়ে দেখা যায়, নিয়ম বহির্ভূত ভাবে টেন্ডারে যোগ দেওয়া অন্য তিনটি সংস্থার ‘ব্যাঙ্ক ড্রাফট’ কাটা হয়েছে সিটি সেন্টারের সংস্থাটির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকেই। এর জন্য ওই সংস্থাটিকে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু সংস্থার জবাবে ‘সন্তুষ্ট’ না হয়ে ২৯ অগস্ট চিঠি দিয়ে টেন্ডার বাতিলের কথা জানায় এসবিএসটিসি। এ বিষয়ে বহু চেষ্টা করা হলেও সিটি সেন্টারের ওই সংস্থার কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।

ইতিমধ্যে টেন্ডার প্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগ তুলে এসবিএসটিসি কর্তৃপক্ষকে আইনি নোটিস দেন অন্য এক বেসরকারি পরিবহণ সংস্থার কর্ণধার পারভেজ আলি খন্দকার। তিনি বলেন, ‘‘সিটি সেন্টারের সংস্থাটির বিরুদ্ধে আগেও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। তিনটি ভুয়ো সংস্থা নিয়ে এ বারের টেন্ডারে যোগ দেয় তারা। তার পরেও আগের মতোই টিকিট বিক্রি করছে সংস্থাটি। সংস্থাটিকে কালো তালিকাভুক্ত করা ও এসবিএসটিসি-র যে আধিকারিকেরা এর সঙ্গে যুক্ত, তাঁদের বিরুদ্ধে তদন্ত দাবি করছি।’’ আইএনটিইউসি অনুমোদিত ‘সাউথ বেঙ্গল স্টেট ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশন শ্রমিক ইউনিয়ন’-এর সম্পাদক হারাধন দত্তেরও অভিযোগ, ‘‘চরম দুর্নীতি চলছে। কর্তৃপক্ষের একাংশের সঙ্গে ওই সংস্থার আঁতাঁত রয়েছে। সংস্থাটিকে কালো তালিকাভুক্ত করা ও দুর্নীতির তদন্ত হোক।’’

দুর্নীতির অভিযোগ প্রসঙ্গে এসবিএসটিসি-র ম্যানেজিং‌ ডিরেক্টর গোদালা কিরণ কুমার অবশ্য বলেন, ‘‘পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখতে একটি কমিটি তৈরি করা হয়েছে। চলতি মাসের শেষে কমিটি রিপোর্ট জমা দেবে। তা খতিয়ে দেখে আইন অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।’’ সেই সঙ্গে তাঁর সংযোজন: ‘‘১৮ জুন নতুন করে টেন্ডার ডাকার আগেই আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সিটি সেন্টারের ওই সংস্থাটির মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছিল। সেই মেয়াদ শেষ হলে নিশ্চিত ভাবেই আর ওই সংস্থাটি দায়িত্ব পাবে না।’’ তিনি জানিয়েছেন, নতুন টেন্ডার ডাকা হবে, না অন্য জায়গায় দায়িত্বে থাকা কোনও সংস্থাকে দিয়ে কাজ চালানো হবে, সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Durgapur SBSTC Ticket Tender Corruption
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE