আউশগ্রামের বীরেন মণ্ডল। নিজস্ব চিত্র
প্রথাগত চাষের বাইরে বেরিয়ে এবং আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করে এ বার জেলার সেরা কৃষক নির্বাচিত হলেন আউশগ্রামের অমরপুরের মঙ্গলপুর গ্রামের বীরেন মণ্ডল। মাটি উৎসবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে তাঁকে সম্মানিত করা হবে বলে জেলা প্রশাসন জানিয়েছে।
কৃষি আধিকারিকেরা জানান, উপযুক্ত পরিকল্পনা ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে যে চাষে লাভ করা যায়, তা হাতেকলমে করে দেখিয়েছেন বীরেনবাবু। তাঁর ১৮ বিঘা জমি রয়েছে। এ ছাড়াও এলাকার অন্য চাষিদের কাছে বেশ কিছু জমি চুক্তিতে নিয়ে মোট ২৬ বিঘা জমিতে চাষাবাদ করেন তিনি। মোট জমিকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে প্রতি মরসুমে নানা রকম ফসল ফলান। জমি যাতে খালি পড়ে না থাকে সে জন্য একটি ফসল ওঠার আগে অন্য চাষের প্রস্তুতি শুরু করে দেন। জমির উর্বরতা ধরে রাখতে নিজেই বাড়িতেই কেঁচো সার তৈরি করেন।
পটল, বেগুন, তরমুজ, করলা, সূর্যমুখী, ভুট্টা— নানা ফসল ফলান বীরেনবাবু। পটলের জমিতে সঙ্গী-ফসল হিসাবে কচু, আদা, হলুদ চাষ করেন। বিভিন্ন আনাজ ও ফল চাষের জন্য জমিতে মাচা তৈরি করতে হয়। কৃষিকর্তারা জানান, একটি মাচা থেকে যাতে বেশি ফসল পাওয়া যায়, বীরেনবাবু সেই চেষ্টা করেন। সে জন্য শসার মাচার নীচে তিনি তৈরি করেন করলার চারা। শসা চাষ শেষ হয়ে গেলে মাচা ভরে ওঠে করলা গাছে।
এ ছাড়া, কোন মরসুমে কোন চাষ লাভজনক হবে, সেটাও বিচার করেন মাঝবয়সী ওই চাষি। যেমন, ইদের সময় শসা বিক্রি করে বিঘা প্রতি প্রায় ৫০ হাজার টাকা করে লাভ করেছেন। রবি মরসুমে বড় জমিতে আলু চাষ করেন। তবে বিভিন্ন প্রজাতির আলু ফলান এক সঙ্গে। যেমন, এ বার ১৮ বিঘা জমিতে পোখরাজ, চন্দ্রমুখী, আটলান্টিক ও জ্যোতি— চার রকম আলু চাষ করেছেন। তিনি জানান, আলু তোলার পরে খড় দিয়ে জমির পাশে ঢেকে রাখেন। হিমঘর বন্ধ হলে বাজারে তা বিক্রি করেন। রবি মরসুমে সর্ষে চাষও করেন। সর্ষের বীজ উৎপাদন করেও লাভ করেন।
বাড়ির পাশে মাঠের ধারে সাতটি বাক্সে শীতে প্রতিবার মৌমাছি পালন করেন বীরেনবাবু। দশ দিন অন্তর মেলে কেজি দুয়েক করে মধু। মৌমাছির দল মধু সংগ্রহের জন্য ফসলের খেতে ঘুরে বেড়ানোয় চাষে সুবিধা হয় বলে জানান কৃষি বিশেষজ্ঞেরা। চাষে নানা প্রযুক্তিরও ব্যবহার করেন বীরেনবাবু। ধান চাষ করেন জিরো টিলেজ, শ্রী পদ্ধতিতে। ব্যবহার করেন ড্রামসিডার যন্ত্র। এ ছাড়া ট্রাক্টর-সহ নানা যন্ত্রও ব্যবহার করেন। চাষের পাশাপাশি পুকুরে মাছচাষ ও হাঁসপালনও করেন। বাড়িতে রয়েছে ছ’টি গরুও।
বীরেনবাবু বলেন, ‘‘পরিকল্পনা মাফিক চাষ করলে ভাল লাভ মেলে। কৃষি দফতর থেকে আমি নানা পরামর্শও পাই। সেরা কৃষকের সম্মান আমার কাছে গর্বের।’’ জেলার অন্যতম সহ-কৃষি আধিকারিক সুকান্ত মুখোপাধ্যায় জানান, সব পরামর্শ ঠিক ভাবে মেনে চলেন বীরেনবাবু। জেলার কৃষি আধিকারিক জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পূর্বস্থলী ১ ব্লকের এক চাষিও জেলার সেরার লড়াইয়ে কাছাকাছি ছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত আউশগ্রামের চাষিই বাজিমাত করেছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy