Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

সম্মেলনের ঠেলায় যানজটের আশঙ্কা কালনায়

চায়ের দোকান থেকে পাড়ার মোড়, কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে, ‘জোর খাওয়া-দাওয়া’। তবে বিয়েবাড়ি বা উৎসবের নয়, এ আয়োজন তৃণমূলের জেলা সম্মেলনের।

চলছে রান্নার তোড়জোড়। নিজস্ব চিত্র।

চলছে রান্নার তোড়জোড়। নিজস্ব চিত্র।

কেদারনাথ ভট্টাচার্য
কালনা শেষ আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০১৬ ০১:০৩
Share: Save:

চায়ের দোকান থেকে পাড়ার মোড়, কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে, ‘জোর খাওয়া-দাওয়া’। তবে বিয়েবাড়ি বা উৎসবের নয়, এ আয়োজন তৃণমূলের জেলা সম্মেলনের।

১৯৭৭ সালের পরে এই প্রথম কোনও ডানপন্থী রাজনৈতিক দলের সম্মেলন হচ্ছে কালনায়। বৃহস্পতিবারের সম্মেলনে তৃণমূল নেতারা ৪০ হাজারেরও বেশি লোক আনার দাবি করেছেন। আর তাঁদের ভুরিভোজ করাতেই এই বন্দোবস্তো।

তবে নেতারা লোকের সংখ্যা নিয়ে ছাতি চওড়া করলে‌ও এত লোকের শহরে আসা-যাওয়া, থাকা-খাওয়া নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন শহরবাসী। তাঁদের আশঙ্কা, একেই শহরের রাস্তা সরু-ঘিঞ্জি, তারপরে সাতসকাল থেকে এত লোক ঢুকতে থাকলে যানজট অবধারিত। সঙ্গে টোটো, অটোর মতো ছোট যানবাহনের তো চলাই দায় হবে। ফলে বিপাকে পড়তে পারেন স্কুল-কলেজ-অফিস যাত্রীদের সঙ্গে নানা প্রয়োজনে শহরে আসা আরও মানুষজন।

প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গত দু’বছরে টোটো-অটোর সংখ্যা লাফ দিয়ে বেড়েছে। অভিয়ানের পরেও শহরের অধিকাংশ রাস্তা জবরদখল হয়ে রয়েছে। তারপর জলপ্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ায় রাস্তা খুঁড়ে পাইপ বসানোর কাজ চলছে। ফলে এমনিতেই যানজট, দুর্ঘটনা লেগে রয়েছে। তার উপর আরও ৪০ হাজার লোক শহরে ঢুকলে পরিস্থিতি নট নড়নচড়ন। তৃণমূল সূত্রে খবর, জেলার গ্রামীণ এলাকায় চার হাজারেরও বেশি বুথ রয়েছে। প্রত্যেক বুথ থেকে গড়ে দশ জন করে লোক আনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সকাল থেকেই কালনার নানা জায়গা তো বটেই, কাটোয়া এবং বর্ধমান সদর এলাকার বহু বাস এই নেতা-কর্মীদের নিয়ে ঢুকবে। এক টোটো চালকের কথায়, ‘‘তৃণমূলের নেতারা টোটো চালানো বন্ধ রাখার অনুরোধ করেছেন। ফলে বেশির ভাগ গাড়িই বিকেল পর্যন্ত রাস্তায় নামবে না।’’ ‘‘আর নামলেও গাড়ি চালানোর জায়গা থাকবে না’’, সংযোজন তাঁর।

যদিও শহরের তৃণমূল নেতাদের দাবি, যানজট রুখতে একাধিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যেমন, শহরের ভিতর বড় যানবাহন না রেখে বৈদ্যপুর মোড় এবং তেঁতুলতলা এলাকার বিভিন্ন চালকল, মিলের সামনে রাখা হবে। জেলা সভাপতি স্বপন দেবনাথের (গ্রামীণ) কথায়,‘‘দলের নেতা-কর্মীরা বিষয়টি নিয়ে সজাগ। ফলে যানজটের সমস্যা হবে না।’’

এর সঙ্গেই স্থানীয় হিমঘর, ইন্ডোর স্টেডিয়াম, সুইমিং পুল চত্বর, আরবান হাট এলাকায় প্রায় ৪৫ হাজার লোকের খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আরও অন্তত পাঁচ হাজার লোক খেতে পারে তার প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। বুধবার দুপুর থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে তিনটি ক্যাটারার সংস্থার প্রস্তুতি। যদিও তৃণমূলের দাবি, খাবার তৈরির গ্যাস-সহ যাবতীয় সরঞ্জাম জোগাচ্ছে দলই। দুপুরের মেনুতে থাকছে, ভাত, ডাল, বাঁধাকপি, ডিমের কালিয়া এবং খেজুর কিসমিস দিয়ে টম্যাটোর চাটনি। তৃণমূল সূত্রের খবর, সকাল দশটা থেকেই শুরু হবে খাওয়ানো। চলবে বেলা ১টা পর্যন্ত। খাওয়া দাওয়া মিটলে নেতা-কর্মীদের নিয়ে যাওয়া হবে অঘোরনাথ পার্কে। সেখানেই হবে সভা। সভায় দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সি, জেলার পর্যবেক্ষক অরূপ বিশ্বাসের সঙ্গে আরও কিছু নেতার থাকার কথা।

প্রশ্ন উঠছে এক দিকে, স্বপনবাবু নেতা-কর্মীদের জানিয়ে দিয়েছেন, বিল ছাপিয়ে টাকা তোলা যাবে না। জেলা থেকে সম্মেলনের টাকা দেওয়া হবে। যদিও দলের এক জেলা স্তরের নেতাই বলছেন, ‘‘বিধানসভা ভোটের আগে প্রকাশ্যে টাকা তুলে সম্মেলন করলে খারাপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে। কিন্তু টাকা তো আর আকাশ থেকে পড়বে না। তাই কিছু ব্যবসায়ী ও আরও কয়েকজনকে বিভিন্ন ভার দেওয়া হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

traffic kalna
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE