Advertisement
১১ মে ২০২৪

দুই দুর্গাপুরের ‘সাফল্যে’ই আসন জয়

দুর্গাপুর পশ্চিম বিধানসভা এলাকাটি তৈরি হয়েছে পুরসভার ১১ থেকে ২২ এবং ২৯ থেকে ৪৩, মোট ২৭টি ওয়ার্ড নিয়ে।

ছবি: এএফপি।

ছবি: এএফপি।

সুব্রত সীট
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০১৯ ০২:৩০
Share: Save:

এই লোকসভা কেন্দ্রের সাতটি বিধানসভার তিনটিতে বিজেপির কাছে কার্যত ধূলিস্যাৎ হয়েছে তৃণমূল। কিন্তু তৃণমূলের সব থেকে শোচনীয় অবস্থা দুর্গাপুর পশ্চিম বিধানসভা এলাকায়। শুধুমাত্র এই এলাকা থেকেই বিজেপির ‘লিড’ ৪৯,৫১১ ভোটে। কেন এই অবস্থা, তা নিয়ে দলের অন্দরে শুরু হয়েছে কাটাছেঁড়া, খবর তৃণমূল সূত্রে।

এই বিধানসভা এলাকায় ২০১৪-য় তৃণমূল ও বিজেপির প্রাপ্ত ভোট ছিল যথাক্রমে, ৬৩,৮১৮ এবং ৫৫,৫৩১। এ বার তা হয়েছে যথাক্রমে, ৫৯,৬৪২টি ও ১,০৯,১৫৩টি ভোট। তৃণমূলের কেন এই পরিস্থিতি, তা নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে এলাকার রাজনৈতিক মহলের একাংশ মূলত ২০১৭-য় দুর্গাপুর পুরসভা নির্বাচনে ‘ভোট না দিতে দেওয়া’র অভিযোগটিই প্রধান কারণ বলে মনে করছেন। যদিও সেই অভিযোগ অস্বীকার করেন তৃণমূল নেতৃত্ব।

দুর্গাপুর পশ্চিম বিধানসভা এলাকাটি তৈরি হয়েছে পুরসভার ১১ থেকে ২২ এবং ২৯ থেকে ৪৩, মোট ২৭টি ওয়ার্ড নিয়ে। ২০১৬-র বিধানসভা ভোটে এই কেন্দ্রটি হাতছাড়া হয় তৃণমূলের। বামেদের সমর্থনে ৫৬ শতাংশ ভোট পেয়ে জেতে কংগ্রেস। কিন্তু এক বছর বাদে পুরভোটে দুর্গাপুরের ৪৩টি ওয়ার্ডেই জেতে তৃণমূল!

এই পরিস্থিতিতে ব্যাপক সন্ত্রাসের অভিযোগ তোলে বিজেপি ও সিপিএম, দু’পক্ষই। কিন্তু রাজনৈতিক নেতা, কর্মীদের মতে ওই ভোটের দিন ‘সন্ত্রাসের’ অভিযোগ তুললেও কার্যত মাঠে দেখা যায়নি সিপিএম-কে। যদিও বিজেপি ভোটের শেষ পর্বে বেশ কিছু জায়গায় প্রতিরোধ তৈরি করে। এমনকি, পুরসভা ভোটেই ১৪ শতাংশের কিছু বেশি ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসে বিজেপি। বিজেপি যে ওয়ার্ডগুলিতে সবথেকে ভালো ফল করে সেই ১৩, ৩০, ৩৪, ৩৫, ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডগুলি দুর্গাপুর পশ্চিম কেন্দ্রেই।

তা ছাড়া এ বারের লোকসভা নির্বাচনে দুর্গাপুর পূর্ব বিধানসভা কেন্দ্র, যেখান থেকে ২৬,৫৯১ ভোটে এগিয়ে রয়েছে বিজেপি, সেই এলাকাতেও রয়েছে পুরসভার ১ থেকে ১০ নম্বর ওয়ার্ড। দুর্গাপুরের শহর এলাকা তো বটেই, এই কেন্দ্রের অন্তর্গত কাঁকসার গ্রামীণ এলাকাতেও ব্যাপক হারে পিছিয়ে পড়েছে তৃণমূল। ২০১৬-র বিধানসভা ভোটের নিরিখে এ বার দুর্গাপুর পশ্চিম ও পূর্ব, এই দুই বিধানসভা এলাকায় মোটের উপরে যথাক্রমে ১২ ও ৯ শতাংশ ভোট কমেছে তৃণমূলের।

শুধু পুরসভায় ‘ভোট না দিতে দেওয়ার’ অভিযোগটিকে সামনে এনেই কেল্লা ফতে হয়েছে, এমনটা মনে করছেন না বিজেপি নেতৃত্ব। তাঁদের একাংশের মতে, দুর্গাপুরের সগড়ভাঙার সভায় প্রশাসনকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়া, কাঁকসায় দলীয় কর্মী খুনের পরবর্তী ঘটনা প্রবাহ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দুর্গাপুরের সভা— এই সব কারণকে কাজে লাগিয়েই দুর্গাপুর পূর্ব ও পশ্চিমে নজরকাড়া সাফল্য মিলেছে। সেই সঙ্গে বিজেপির প্রার্থী দেরিতে ঘোষণা হলেও প্রচারপর্বে দলীয় কর্মীদের অনেক আগেভাগে নেমে পড়া, এলাকায় তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের দ্বন্দ্বও বিজেপির ভোট বাড়তে কাজে লেগেছে বলে রাজনৈতিক নেতা, কর্মীদের একাংশের ধারণা। আরও ধারণা, দুর্গাপুরে সংগঠনের এই ‘প্রভাব’ এবং শাসক দলের গোষ্ঠীকোন্দলের কারণে গলসিতেও বিজেপি সাফল্য পেয়েছে। যদিও দ্বন্দ্বের অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল।

এই পরিস্থিতিতে অন্য চারটি বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূল এগিয়ে থেকেও শেষ মুহূর্তে তিনটি এলাকায় বিজেপি-কে জেতাল বলে ধারণা রাজনৈতিক নেতা, কর্মীদের। শহরের বিজেপি নেতা অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘তৃণমূলের স্থানীয় নেতাদের দুর্নীতি, উদ্ধত আচরণ, দুর্গাপুর পুরভোটে ও পঞ্চায়েতে মানুষকে তৃণমূলের ভোট দিতে না দেওয়া, আমাদের সংগঠন ইত্যাদি নানা কারণে এই ফল।’’ বিজেপির তোলা অভিযোগ অস্বীকার করেও কেন এই ফল, সে বিষয়ে পর্যালোচনা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি ভি শিবদাসন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE