সালানপুরের জিতপুর গ্রামের এক প্রান্তে চলছে পাথর খাদান
গ্রামের শেষ প্রান্তে অজয়। তার আগে খানিকটা জঙ্গলে ঘেরা এলাকা। গ্রামের মানুষজনের বিশেষ যাতায়াত নেই সে দিকে। নির্জন সেই এলাকাতেই কাজে ব্যস্ত অনেকে। নামানো হয়েছে মাটি কাটার যন্ত্র-সহ বেশ কিছু যন্ত্রপাতি। যন্ত্রের সাহায্যে পাথর কেটে ট্রাকে করে পাচার করা হচ্ছে বেআইনি ভাবে, অভিযোগ সালানপুরের জিতপুর গ্রামের বাসিন্দাদের অনেকেরই। পাথর বোঝাই গাড়ি চলাচলে এলাকায় দূষণও ছড়াচ্ছে বলে অভিযোগ তাঁদের। যদিও প্রশাসনের দাবি, এলাকায় বেআইনি পাথর খাদান বন্ধ করা হয়েছে।
জিতপুর-উত্তররামপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ওই গ্রামে অজয়ের দিক থেকে মাঝে-মাঝেই ভেসে আসছিল বিস্ফোরণ আর যন্ত্র চালানোর আওয়াজ। কী হচ্ছে ও দিকে? প্রশ্ন শুনে এড়িয়ে গেলেন গ্রামের অনেকেই। দু’এক জন শুধু জানালেন, পাথর কাটা হচ্ছে। আর কথা বা়ড়াতে রাজি নন তাঁরা।
চয়নপুর থেকে চওড়া একটি পিচ রাস্তা সোজা চলে গিয়েছে চিত্তরঞ্জনে। জিতপুর মোড়ের কাছে এই রাস্তা থেকে অপেক্ষাকৃত সরু হয়ে বাঁ দিকে নদীর দিকে চলে গিয়েছে একটি পথ। সেটি ধরে এগোতেই মোড়ে বটগাছের তলায় আটকাল কয়েকজন যুবক। তাদের দাবি, ওই পথে যাওয়া যাবে না। বিপদ হতে পারে। কীসের বিপদ, পাল্টা সেই প্রশ্ন করতেই সরে পড়ে তারা।
মোড় থেকে নদীর দিকে এগিয়ে ডান দিকে চোখে পড়ে, জঙ্গল ঘেরা জায়গায় পরপর দু’টি জায়গা থেকে পাথর কাটা চলছে। বেশ কিছু লোকজন কাজ করছেন। ড্রিল করার যন্ত্রের সাহায্যে পাথড় ভাঙার শব্দ আসছে। আরও প্রায় শ’দুয়েক মিটার এগিয়ে দেখা যায়, মাটি দিয়ে অজয়ের মাঝে ও পাড়ের কিছুটা অংশে বাঁধ দেওয়া হয়েছে। এমনিতে জল রয়েছে সামান্য। তার উপরে বাঁধ দেওয়ায় বেশ কিছুটা অঞ্চল শুকিয়ে গিয়েছে। সেখানেই মাটি ফাটিয়ে পাথর তোলার কাজ চলছে। নদীবক্ষে নামানো হয়েছে মাটি কাটার বড় যন্ত্র।
এলাকাবাসীর একাংশের দাবি, ডিটোনেটর দিয়ে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পাথরের স্তর ভাঙা হচ্ছে সেখানে। যন্ত্রের সাহায্যে পাথর টুকরো করে ট্রাকে তুলে পাচার করা হচ্ছে। প্রতি ট্রাকে প্রায় তিনশো ঘনফুট করে পাথর পরিবহণ হয় বলে স্থানীয় সূত্রের খবর। বাসিন্দারা আরও দাবি করেন, আশপাশের এলাকায় ক্রাশারে ফাটিয়ে ওই পাথর থেকে নানা আকারের স্টোনচিপস তৈরি করা হয়। অভিযোগ, এই পাথর খাদানগুলির কোনওটিই বৈধ নয়। এলাকার কিছু মাফিয়া সেগুলি চালাচ্ছে। প্রতি দিন এই পাথরের ট্রাক যাতায়াতের ফলে এলাকায় দূষণ ছড়াচ্ছে।
বাসিন্দাদের এই অভিযোগ অবশ্য ঠিক নয় বলে দাবি ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের। দফতরের আধিকারিক রুদ্ররূপ ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ‘‘নদীতে পাথর তোলার কাজ বন্ধ করা হয়েছে। এখন এখানে কোনও অবৈধ পাথর খাদান নেই।’’ আসানসোলের মহকুমাশাসক (সদর) প্রলয় রায়চৌধুরী জানান, ওই এলাকায় নিয়মিত অভিযান চলছে। বেনিয়ম দেখলে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। যদিও প্রশাসনেরই একটি সূত্রের দাবি, অভিযান একটু শিথিল হলেই পাথর কেটে পাচারের রমরমা আবার শুরু হয়ে যায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy