Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ভোট আসে যায়, রয়ে যায় পর্যটনের আশ্বাস

প্রতি বার পুরভোট এলেই ভেসে ওঠে শহরকে পর্যটনকেন্দ্র করার আশ্বাস। ক্ষমতাশালী দল দাবি করে , পাঁচ বছরে তারা কী কী করেছে। আর বিরোধীরা গলা ফাটায় যে সবই ফাঁকা বুলি। এ বারও এই দড়ি টানাটানিই দেখছেন কালনার বাসিন্দারা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কালনা শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০১৫ ০০:২০
Share: Save:

প্রতি বার পুরভোট এলেই ভেসে ওঠে শহরকে পর্যটনকেন্দ্র করার আশ্বাস। ক্ষমতাশালী দল দাবি করে , পাঁচ বছরে তারা কী কী করেছে। আর বিরোধীরা গলা ফাটায় যে সবই ফাঁকা বুলি। এ বারও এই দড়ি টানাটানিই দেখছেন কালনার বাসিন্দারা। শাসকদলের কাজের ফিরিস্তি দেখে প্রশ্ন উঠছে, পর্যটনকেন্দ্রই যদি হবে, তাহলে পর্যটক নেই কেন?

গত পুরভোটে তৃণমূল-কংগ্রেস জোট গড়ে এই পুরসভায় লড়েছিল। পর্যটনকেন্দ্র হিসাবে শহরকে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি ছিল তাদের অন্যতম হাতিয়ার। তবে এ বার আর জোট নয় একাই লড়ছে দু’দল। তৃণমূলের দেওয়াল লিখনে অবশ্য জ্বলজ্বল করছে কালনাকে পর্যটননগরী হিসাবে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি। শাসকদলের মিছিল, মিটিঙেও আওয়াজ রয়েছে পর্যটননগরী গড়ে শহরের ভোল পাল্টে দেওয়ার। তবে সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন উঠছে, সত্যিই কী চেহারা বদলেছে এ শহরের? পর্যটকদের নজর কাড়ছে কি শহর?

পর্যটক টানার উপকরণ অবশ্য যথেষ্টই রয়েছে। ১০৮ শিবমন্দির, প্রতাপেশ্বর মন্দির, লালজি মন্দির, কৃষ্ণচন্দ্র মন্দির, মহাপ্রভু বাড়ি, দাঁতনকাঠি তলার মসজিদ-সহ অজস্র পুরকীর্তি রয়েছে এ শহরে। টেরাকোটার কারুকাজে মুগ্ধ হয়েছেন মার্কিন কনসুলেট জেনারেল থেকে শুরু করে অভিনেত্রী শর্মিলা ঠাকুর। শহরবাসীদের দাবি, ঠিকঠাক ভাবে শহরের সম্পদ তুলে ধরা হলে সারা বছরই পর্যটকদের আনাগোনা লেগে থাকবে এ শহরে। তাঁরাই জানান, প্রতিবারই ভোটের সময় কালনাকে পর্যটনকেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলার ডাক দেওয়া হয়। দেওয়াল লিখন, ব্যানার, ফেস্টুনে শহর ছেয়ে যায় এই দাবিতে। অথচ ভোট মিটলেই যে কে সেই। শীতকাল ছাড়া বাইরের লোকজন দেখাও যায় না, ফলে পর্যটনকেন্দ্র ঘিরে ব্যবসা-বাণিজ্যও বাড়ে নি সেভাবে। যদিও পুরসভার দাবি, পর্যটকদের ভিড় অনেকটাই বেড়েছে শহরে।

আর বিরোধীদের বক্তব্য, শহর যে তিমিরে ছিল সেখানেই রয়েছে। সকাল হলেই রাস্তাঘাটে তীব্র যানজট, অবৈধ ভাবে ফুটপাত দখল হয়ে যাওয়া, পদে পদে পথচারীদের বিপদ— কিছুই বিশেষ বদলায়নি। শহরবাসীরও অভিযোগ, শহরে এমন অজস্র নালা রয়েছে যা নিয়মিত সাফাই হয়না। ফলে দুর্গন্ধে টেকা দায় হয়ে পড়ে। এ ছাড়া আশ্বাস দেওয়া হলেও ভাগীরথীতে কংক্রিটের সেতু আজও তৈরি হয়নি। ফলে নদিয়ার মায়াপুরে আসা হাজার হাজার পর্যটকরা এ শহরে আসার উৎসাহ পান না। অনেকেরই দাবি, শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ভাগীরথীর পাড় আলোয়-মালায় সাজিয়ে পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় করে তোলা যেতে পারত। তবে সে কাজও হয়নি। পাশাপাশি, ভাগীরথীর বহু ঘাট সাজানোর দাবিও রয়েছে বহুদিন।

অবহেলায় পড়ে রয়েছে বেশ কিছু পুরাতাত্ত্বিক নির্দশনও। দাঁতনকাঠি তলার ৬০০ বছরেরও বেশি পুরনো মসজিদ, জগন্নাথতলার টেরাকোটার কারুকাজ করা জোড়া শিবমন্দিরের মতো বহু স্থাপত্যেই অবহেলার ঘুণ ধরেছে। কিছু কিছু নষ্টও হয়ে গিয়েছে। শহর সাজাতে ত্রিফলা বাতি লাগানো হয়েছে ঠিকই, তবে তা সামান্য কয়েকটি রাস্তাতেই। এ ছাড়া দর্শনীয় স্থান লাগোয়া এলাকায় পর্যটকদের থকার তেমন ব্যবস্থা নেই। ফলে দিনে এসে ঘুরে গেলেও রাতে থাকতে চান না অনেকেই। সিপিএমের কালনা জোনাল কমিটির সদস্য স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, গত পাঁচ বছরে পুরসভা পর্যটনকে ঘিরে কোনও সামগ্রিক পরিকল্পনা করেনি। ফলে কালনা এগোয় নি। তাঁর আরও দাবি, শহরের পর্যটন ব্যবস্থার যদি উন্নতি হতো, তাহলে তৃণমূলকে দেওয়াল লিখন করে পর্যটননগরী গড়ার প্রতিশ্রুতি দিতে হতো না। বিষয়টি নিয়ে সরব বিজেপিও। দলের বর্ধমান পূর্ব কেন্দ্রের সভাপতি রাজীব ভৌমিক জানান, পর্যটনকে ঘিরে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ছাড়াই এগিয়েছে পুরসভা। তার ফল যা হওয়ার হয়েছে।

তৃণমূল অবশ্য বিরোধীদের অভিযোগ মানতে নারাজ। পুরপ্রধান তথা তৃণমূল বিধায়ক বিশ্বজিৎ কুণ্ডু বলেন, ‘‘পুরসভা এ ব্যাপারে অনেক কিছু করেছে। শহরে পর্যটক গেট তৈরি হয়েছে। রাজবাড়ি কমপ্লেক্সে ‘লাইট অ্যান্ড শ্যাডো’ প্রকল্প চালু হয়েছে। ভাগীরথীর পাড় ঘিরে সৌন্দর্য্যায়ন হয়েছে। পর্যটকের আসাযাওয়ায় বেড়েছে।’’ তাহলে এ বারেও পর্যটননগরী গড়ার প্রতিশ্রুতি কেন? বিশ্বজিৎবাবুর দাবি, ‘‘পর্যটনকেন্দ্র রাতারাতি হয়না। এটা একটা ধারাবাহিক প্রচেষ্টা। তাই এ বারও প্রচারে রয়েছে পর্যটন।’’

কার দাবিতে জোর বেশি, জবাব দেবে ব্যালটই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE