Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

‘প্রতিবাদ করতে গিয়েই মরতে হল’

গোটা গ্রামে কোনও রাজনৈতিক দলের পতাকা নেই। ভোটের প্রচার বলতে কয়েকটা দেওয়ালে বিষ্ণুপুর লোকসভার তৃণমূলের প্রার্থীর পোস্টার, আর গোটা পাঁচেক দেওয়ালে তৃণমূলের লেখা। ত্রিসীমানায় নেই বিরোধীরা।

ঘটনার বিবরণ দিচ্ছেন গ্রামেরই এক প্রবীণ। ছবি: উদিত সিংহ

ঘটনার বিবরণ দিচ্ছেন গ্রামেরই এক প্রবীণ। ছবি: উদিত সিংহ

সৌমেন দত্ত 
খণ্ডঘোষ শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০১৯ ০২:২১
Share: Save:

গোটা গ্রামে কোনও রাজনৈতিক দলের পতাকা নেই। ভোটের প্রচার বলতে কয়েকটা দেওয়ালে বিষ্ণুপুর লোকসভার তৃণমূলের প্রার্থীর পোস্টার, আর গোটা পাঁচেক দেওয়ালে তৃণমূলের লেখা। ত্রিসীমানায় নেই বিরোধীরা। সোমবার শেখ কামরুলের মৃত্যুর খবর পৌঁছতেই গ্রামের বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, “বিরোধী না, তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর ভুল বোঝাবুঝির জন্যেই এই ঘটনা ঘটল।’’

যে চায়ের দোকানের সামনে থেকে এই ‘ভুল বোঝাবুঝি’, সেই দোকানের মালিক শেখ জাহেরের দাবি, “কামরুল শেখ-সহ তিন জন আমাদের দোকানে প্রতিদিন আসতেন। এ দিনও এসেছিলেন। হঠাৎ কয়েকজন এসে এক জনকে মারতে মারতে তৃণমূলের অফিস কৈসরে নিয়ে যায়। প্রতিবাদ করায় কামরুলকে পিটিয়ে খুন করা হয়।’’

নিহত কামরুল ভাঙা লোহার কারবার রয়েছে। তার আগে বাসের কর্মী ছিলেন তিনি। এ দিন মাটির বাড়ির দাওয়ায় বসে তাঁর স্ত্রী পিয়ারি বেগম বলেন, “আমার স্বামীকে এ ভাবে পিটিয়ে খুন করবে ভাবতেও পারিনি। জানি না আমাদের কী হবে?” তাঁর দাবি, রবিবার খেজুরহাটি বাজার থেকে সাইকেল নিয়ে ফিরে অভ্যাস বশে মঈনের চায়ের দোকানের সামনে দাঁড়তেই কামরুল দেখেন, তাঁর দলের এক গোষ্ঠীর লোকেরা তাঁরই এক সঙ্গীকে মারধর করছে। প্রতিবাদ করতেই ‘বলি’ হতে হয় তাঁকে।

চার ছেলে, দুই বৌমা, চার নাতি-নাতনি নিয়ে ভরা সংসার নিহতের। বড় ছেলে শেখ কামালউদ্দিন রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। মেজ টোটো চালান। সেজ ছেলে শেখ মিনাজউদ্দিন চাষবাস করেন। আর ছোট কুতুবউদ্দিন এ বছরই পদার্থবিদ্যায় অনার্স নিয়ে স্থানীয় শ্যামসুন্দর কলেজ থেকে পাশ করেছেন। তাঁর কথায়, “ব্যাঙ্কের চাকরির জন্যে বর্ধমানে থেকে পড়াশোনো করছি। যা হল তারপর কী করব ভেবে উঠতে পারছি না।’’

একই দলে ‘ভুল বোঝাবুঝি’ কেন? স্থানীয় বাসিন্দারাই জানান, গ্রামে মোস্তাফা শেখ ও টুটুল শেখের দুটি গোষ্ঠী রয়েছে। মোস্তাফা শেখের বৌমা রুবি বেগম একটি সংসদে (১৩ নম্বর) পঞ্চায়েত সদস্য। ১৪ নম্বর সংসদে আবার টুটুলের আত্মীয় সদস্য। এ বার ব্লকের নেতারা টুটুলের হাতেই লোকসভা নির্বাচন করার দায়িত্ব দিয়েছেন। রুবিদেবীর স্বামী শেখ মুস্তাকিমের দাবি, “টুটুলের লোক অন্য সংসদে এসে দাদাগিরি করছে। তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকদেরই বুথে যেতে নিষেধ করছে। তার প্রতিবাদ করায় লোকজন নিয়ে এসে অতর্কিতে হামলা চালানো হয়েছে।’’ পুলিশ এ দিন গলসির উচ্চগ্রাম থেকে টুটুলকে গ্রেফতারও করেছে। তাঁর ঘনিষ্ঠদের দাবি, গ্রামের তৃণমূলের একাংশ দলকে হারানোর জন্যে বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে, সে প্রমাণ সোমবারই জেলার নেতাদের হাতে দেওয়া হয়েছে।

বিষ্ণুপুর লোকসভার বিজেপি প্রার্থী সৌমিত্র খাঁ বলেন, “বুথে আটকানোর জন্যে হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। তার প্রতিবাদ করাতেই এই হামলা।’’ সিপিএমের কৃষকসভার রাজ্যের সম্পাদক অমল হালদার ও জেলা সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য উদয় সরকার মৃত ও আহতদের পরিজনদের সঙ্গে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দেখা করেন। উদয়বাবুর দাবি, “মৃত আমাদের সমর্থক। তাঁর দাদা শেখ নাসের আলি আমাদের দলের শাখা কমিটির সম্পাদক। সম্ভবত তাঁকেই আক্রমণের লক্ষ্য করেছিল। তাঁকে না পেয়ে ভাইকে পিটিয়ে খুন করেছে।’’

যদিও ওই ব্লকের তৃণমূলের সভাপতি অপার্থিব ইসলামের দাবি, “এলাকায় কোনও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নেই। সিপিএম আক্রমণ করতে এলে দু’পক্ষের মধ্যে গোলমাল হয়। তখনই একটি দুর্ঘটনা ঘটে গিয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Lok Sabha Election 2019 DEath Murder Congress
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE