Advertisement
০৮ মে ২০২৪

নজরে পঞ্জাবি ভোট, জল্পনা দুই কেন্দ্রে

একটি লোকসভা কেন্দ্রে মোট ভোটারের প্রায় ১২ শতাংশ অবাঙালি। জেলার অন্য কেন্দ্রে সেই সংখ্যাটা ৫০ শতাংশের কাছাকাছি। প্রথমটি, বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্র। অন্যটি, আসানসোল।

দুর্গাপুরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভা। ছবি: বিকাশ মশান

দুর্গাপুরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভা। ছবি: বিকাশ মশান

সুব্রত সীট
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০১৯ ০০:৩৪
Share: Save:

একটি লোকসভা কেন্দ্রে মোট ভোটারের প্রায় ১২ শতাংশ অবাঙালি। জেলার অন্য কেন্দ্রে সেই সংখ্যাটা ৫০ শতাংশের কাছাকাছি। প্রথমটি, বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্র। অন্যটি, আসানসোল। বৃহস্পতিবার দুর্গাপুরের সভা থেকে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবাঙালিদের উদ্দেশ্য করে বেশ কিছু কথা বলেছেন। বক্তব্যের বেশ কিছু অংশ ছিল হিন্দিতে। তার মধ্যে আবার বিশেষ ভাবে উল্লেখ ছিল শিখ ধর্মাবলম্বী মানুষের কথা।
ওই সভা থেকে মমতা এ দিন বলেন, ‘‘পঞ্জাবি ভাইয়েরা বলুন তো, গুরু গোবিন্দ সিংহ, ভগৎ সিংহ, এঁদের অনুষ্ঠান হয় না?’’ পরে তিনি বলেন, ‘‘গুরু গোবিন্দ সিংহের মতো গুরু চাই।’’ এ ছাড়া নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে বিভাজনের রাজনীতির অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘‘চৌকিদার এত মিথ্যে কথা বলেন।’’
মমতার এমন ভাষণ নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে দুই এলাকায়। প্রশাসনের একটি সূত্রের মতে, আসানসোলের ওই ৫০ শতাংশের মধ্যে শিখ ধর্মাবলম্বী মানুষের সংখ্যা ২০ হাজারের কিছু বেশি। বর্ধমান-দুর্গাপুরের ওই ১২ শতাংশের বড় অংশই শিখ ধর্মাবলম্বী মানুষ। তা ছাড়া বর্ধমান-দুর্গাপুরের বিজেপি প্রার্থী সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া নিজেও শিখ ধর্মের মানুষ। বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, এই পরিস্থিতিতে সুরেন্দ্রবাবু এলাকার বহু শিখ ধর্মাবলম্বী মানুষের ভোট পাবেন। কিন্তু মমতার এই মন্তব্যের পরে সেই ভোট তৃণমূলের পালেই হাওয়া জোগাবে বলে মনে করছেন দলীয় নেতা, কর্মীদের একাংশ।
সম্প্রতি, বেনাচিতির গুরুদ্বারে ‘বৈশাখী উৎসবে’ যোগ দিয়ে সম্প্রীতির বার্তা দিতে দেখা গিয়েছিল বর্ধমান-দুর্গাপুরের তৃণমূল প্রার্থী মমতাজ সংঘমিতাকেও। সেখানে রীতি মেনে মাথায় রুমাল বেঁধে গুরুদ্বারে ঢোকেন মমতাজ। স্বাধীনতা আন্দোলনে শিখদের ভূমিকা, দেশভাগের সময়ে শিখ ধর্মাবলম্বী মানুষের দুর্ভোগ ইত্যাদি বিষয়ে বক্তব্য রাখেন মমতাজ। গুরুদ্বারে পঙ্‌ক্তি ভোজনেও যোগ দেন তিনি। শুধু তাই নয়, জনসংযোগ সারতে রানিগঞ্জে আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী মুনমুন সেন এবং জামুড়িয়ায় বিজেপি প্রার্থী বাবুল সুপ্রিয়কেও গুরুদ্বারে যেতে দেখা গিয়েছিল।
এ ছাড়া এ দিন হিন্দি বিশ্ববিদ্যালয়, ছট পুজোর প্রসঙ্গও উঠে আসে মমতার বক্তব্যে। গত বছরও জামুড়িয়ায় গিয়ে মমতা তাঁর বক্তব্যের একটা বড় অংশ হিন্দিতে বলেছিলেন। সম্প্রতি আসানসোল পুরসভার মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারিও তৃণমূল প্রার্থীকে হিন্দিভাষীরা কেন ভোট দেবেন, তা বোঝাতে গিয়ে বলেন, ‘‘আমি হিন্দিভাষী। অথচ, দিদি (মমতা) আমাকে আসানসোলের মেয়র করেছেন। এটা হিন্দিভাষীদের কাছে গর্বের।’’ ছট পুজোয় দু’দিন ছুটি, হিন্দি বিশ্ববিদ্যালয় তৈরির ঘোষণার কথা এ দিন বলেন মমতাও।
যদিও বিষয়টি নিয়ে বিজেপি নেতা অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া, ‘‘সমস্ত সম্প্রদায়ের মানুষই জানেন, তৃণমূল ভোটের জন্য এ সব করে।’’ অভিযোগ অস্বীকার করে দলের জেলা কার্যকরী সভাপতি উত্তম মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বিজেপি বিভাজনের রাজনীতি করে। আমরা সবার মাঝে, সবার পাশে আছি, সেটা বোঝাতেই মুখ্যমন্ত্রী এ কথা বলেছেন।’’
শিখদের একটি সংগঠনের তরফে মমতার সভায় এ দিন হাজির হয়েছিলেন দলবীর সিংহ। তিনি বলেন, ‘‘বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা আমাদের কাছে আসেন। মানুষ নিজের পছন্দ অনুসারে ভোট দেন। তবে এ দিন মুখ্যমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে বার বার আমাদের কথা বলেছেন। আমাদের ভাল লেগেছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE