ছবি: এএফপি।
প্রচার চলছে জোরকদমে। পা মেলাচ্ছেন সব পক্ষের নেতারাই। পাশাপাশি বসে বৈঠকও করতে দেখা যাচ্ছে তাঁদের। তা দেখে দলের কর্মীদের দাবি, লোকসভা ভোটেই আবার জামালপুরের জমি পুনরুদ্ধার করবে তৃণমূল।
বিরোধীরা অবশ্য দাবি করছে, লড়াইটা এত সহজ হবে না। শাসকদলের ‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব’ তাঁদের বাড়তি সুবিধা করে দেবে, আশায় রয়েছেন বিজেপি এবং সিপিএম, দু’দলের নেতারাই।
২০১১ সালে ‘পরিবর্তনে’ পা মিলিয়েছিল জামালপুরও। দলের প্রার্থী উজ্জ্বল প্রামাণিক জয়ী হন প্রায় আড়াই হাজার ভোটে। ২০১৪ সালে এই অঞ্চলে আরও এগিয়ে যায় শাসকদল। ‘লিড’ ছিল প্রায় এগারো হাজার ভোটের। কিন্তু পাশা পাল্টে যায় দু’বছর পরে বিধানসভা নির্বাচনে। ১৪২৩ ভোটে হেরে যান তৃণমূল উজ্জ্বলবাবু। জেলার নানা প্রান্তে খারাপ ফলের মাঝেও এই কেন্দ্র পুনরুদ্ধার করে বামেরা।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
জামালপুর বিধানসভা
বর্ধমান পূর্ব লোকসভা
লোকসভা ২০১৪
• তৃণমূল ৮২১১১ (৪৫%)
• বিজেপি ২০৭৭৫ (১১%)
• কংগ্রেস ৩৬৭৩ (২%)
• বামফ্রন্ট ৭১২৯১ (৩৯%)
বিধানসভা ২০১৬
• তৃণমূল ৮৪০৬৮ (৪৪%)
• বিজেপি ১৫০৯৪ (৮%)
• কংগ্রেস *
• বামফ্রন্ট ৮৫৪৯১ (৪৫%)
*এই ভোটে বাম-কংগ্রেস আসন সমঝোতা করেছিল
তৃণমূলের অন্দরের হিসেবে, বিধানসভা ভোটে হারের পিছনে বড় কারণ ছিল গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। এ ছাড়া, বহুজন সমাজ পার্টির (বিএসপি) প্রার্থী বঙ্কিম সাঁতরা ১৯০২টি ভোট পাওয়াও অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। পঞ্চায়েত ভোটেও প্রকাশ্যে চলে আসে অন্তর্কলহ। বেশ কয়েকটি পঞ্চায়েতে ভোটাভুটি হয়। পঞ্চায়েত সমিতিতে সভাপতি পদের জন্য দলের তরফে ঘোষিত প্রার্থী ছিলেন মেহেমুদ খান। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে পড়েন প্রদীপ পাল। ভোটাভুটিতে ২০-১৯ ভোটে মেহেমুদ জেতেন। দলের জামালপুর ব্লক কার্যকরী সভাপতি প্রদীপবাবু পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ হন।
স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, তৃণমূলের অন্দরে এমন দ্বন্দ্বের সুযোগ নিয়ে এলাকায় প্রভাব বাড়িয়েছে বিজেপি। ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে এগারো শতাংশের বেশি ভোট পেয়েছিল বিজেপি। ২০১৬-র বিধানসভা ভোটে তা প্রায় সাড়ে তিন শতাংশ কমে যায়। এখন জৌগ্রাম থেকে জামালপুরের রাস্তা-সহ নানা জায়গায় গেরুয়া পতাকা দেখা যাচ্ছে। এলাকার কিছু মানুষজনের আবার দাবি, কয়েকটি জায়গায় পদ্মের পতাকা দেখা গেলেও ঘাসফুল নেই। বিজেপি কর্মীদের দাবি, এ বার তাঁদের ভোট হু-হু করে বাড়বে। বিশেষত দরিদ্র এলাকার মানুষজনের মধ্যে দলকে সমর্থনের প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিজেপি নেতা সন্তোষ রায় দাবি করেন, “তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বাড়তি সুবিধা করে দিচ্ছে।’’
গত লোকসভার থেকে বিধানসভা নির্বাচনে বামেদের ভোট বেড়েছিল ৬ শতাংশেরও বেশি। সারা রাজ্যে যেখানে আসন কমেছে, সেখানে জামালপুর বিধানসভা কেন্দ্র পুনর্দখলের পরে বাম নেতারা এ বারও ভাল ফলের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী। ভোটের অন্য রকম অঙ্কও কষছেন তাঁরা। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সমর ঘোষ দাবি করেন, “তৃণমূলের একটা অংশ বিজেপিতে গিয়েছে। রাজনৈতিক অঙ্কে এর সুবিধা আমরা পাব।’’
দ্বন্দ্বের কথা অবশ্য মানতে নারাজ তৃণমূল নেতারা। দলের ব্লক কার্য়করী সভাপতি প্রদীপবাবুর বক্তব্য, ‘‘আমাদের মধ্যে তো কোনও ঝামেলা নেই। কিন্তু নিচুতলার কর্মীরা মানবেন কি না, সেটাই বড় প্রশ্ন।’’ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মেহেমুদ খান আবার বলেন, “আমরা এক হয়ে ভোটের ময়দানে রয়েছি। প্রত্যেকের কাছে যাচ্ছি। দ্বন্দ্ব আছে কি নেই, সে নিয়ে কোনও কথা বলব না।’’
দামোদরের ভাঙনের সমস্যায় ভুগছেন এলাকার একাংশের বাসিন্দারা। অমরপুরে সেতুর সমস্যা নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে। এ ছাড়াও রয়েছে পানীয় জল থেকে বিদ্যুতের সমস্যা। ধান, আলুর দাম না পাওয়া নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে চাষিদের মধ্যে। এ সবের মধ্যেই হারানো মাটি ফিরিয়ে আনার লড়াইয়ে নেমেছেন তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। এলাকার এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্তে ছুটে বেড়াচ্ছেন প্রাক্তন বিধায়ক উজ্জ্বলবাবু। তাঁর কথায়, “দলের দায়িত্ব পালন করছি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, জামালপুরে আমাদের প্রার্থী এগিয়ে থাকবেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy