Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

বাড়ি থেকে বেরিয়ে বাঁচতে চেয়েছিল বোন

মেমারির কলেজ মাঠপাড়ার বাসিন্দাদের আফশোস, ‘‘আগুন লাগা অবস্থায় ঘর থেকে ছুটে বেরিয়ে কলের দিকে যেতে চাইছিল মেয়েটা। কিন্তু পুড়িয়েও রাগ মেটেনি বাবার। ওই অবস্থাতেও মেয়েটাকে লাথি মারছিল। এমনও লোক হয়!’’

ছোট বোনকে হারিয়ে কান্না। নিজস্ব চিত্র

ছোট বোনকে হারিয়ে কান্না। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেমারি শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৪:৩৭
Share: Save:

এ বার উচ্চ মাধ্যমিক দেওয়ার কথা ছিল মেয়েটার। অন্যের বাড়িতে, হিমঘরে কাজ করে নিজের পড়ার খরচ জোগাতেন তিনি। ভবিষ্যতের কথা ভেবে জমাতেনও কিছু কিছু। সেই টাকা বাবাকে মদ খাওয়ার জন্য না দেওয়ার ‘অপরাধে’ পুড়ে মরতে হল বছর উনিশের সরস্বতী ক্ষেত্রপালকে।

বুধবার ওই তরুণীর পড়শি, মেমারির কলেজ মাঠপাড়ার বাসিন্দাদের আফশোস, ‘‘আগুন লাগা অবস্থায় ঘর থেকে ছুটে বেরিয়ে কলের দিকে যেতে চাইছিল মেয়েটা। কিন্তু পুড়িয়েও রাগ মেটেনি বাবার। ওই অবস্থাতেও মেয়েটাকে লাথি মারছিল। এমনও লোক হয়!’’ পরে মা কল্পনাদেবীর অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ গ্রেফতার করে অভিযুক্ত বাবা, শঙ্কর ক্ষেত্রপালকে।

সরস্বতীরা তিন বোন। বাবা কোনও কাজ না করায় ছোট থেকেই মায়ের সঙ্গে পরিচারিকার কাজ, খেতমজুরের কাজ করে সংসার চালাতেন তিন বোন। সরস্বতী তার সঙ্গে লেখাপড়াটাও চালাচ্ছিলেন। দুই দিদির বিয়ের পরে মায়ের সঙ্গে সংসারের খরচ ভাগ করে নিতেন তিনিই। কিন্তু মেয়ের পড়া নিয়েও নিত্য অশান্তি হত। পড়শিরা জানান, দিনরাত টলতে টলতে বাড়ি ফিরত শঙ্কর। টাকা না দিলেই চলত মা, মেয়েকে মার। মদ খেতে মেয়ে প্রতিবাদ করলে চুলের মুঠি ধরে রাস্তাতেও মারধর করতে দেখা গিয়েছে। কেউ বাধা দেয়নি?

পড়শি সুজাতা ভূমিজ, লক্ষ্মী সূত্রধরদের দাবি, ‘‘ওই দৃশ্য দেখে কেউ কী চুপ করে বসে থাকতে পারে। আমরাও বারণ করেছি। কিন্তু মদ খেয়ে আমাদের বাড়ির সামনে গালিগালাজ করত। বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার হুমকি দিত। ভয়ে চুপ করে গিয়েছিলাম।’’ পড়শিরা জানান, পাড়ার ভিতর ‘অসভ্যতামি’ করার জন্য শঙ্করকে পুলিশ তিন-চারবার গ্রেফতারও করেছিল। সরস্বতীর দুই দিদি পিঙ্কি সাউ, পূর্ণিমা দে বলেন, ‘‘বাবা আমাদের কোনও দিন পেন-খাতা কিনে দেয়নি। বাড়ির বাসন, ছাগল সব বেচে নেশা করত। বোন লোকের বাড়িতে অতিরিক্ত কাজ করে টাকা পেত, সেই টাকায় পড়ত। তাতেও বাবার আপত্তি ছিল। এক বার মদের টাকা দেয়নি বলে বোনের সমস্ত মার্কশিট পুড়িয়ে দিয়েছিল। সেই রাগেই ১৮ বছর বয়স হতেই বিয়েতে মত দিয়েছিল বোন। বিয়ে করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে বাঁচতে চেয়েছিল। একেবারে মরে গিয়ে বাঁচল।’’

এই পাড়া থেকেই ঢিল ছোড়া দূরত্বে রয়েছে ডিভিসি সেচখালের বাঁধ। তাহলে কী সেখানেই বসত চোলাইয়ে ঠেক? মেমারির ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সামসুল হক মির্জা বলেন, ‘‘আমাদের এলাকায় কোনও চোলায়ের ভাটি বা ঠেক নেই।’’ স্থানীয় বাসিন্দাদেরও দাবি, এলাকার ত্রিসীমানায় কোনও মদের ঠেক নেই। সেই জিটি রোডের ধারে দেশি মদের দোকান রয়েছে। সেখান থেকেই মদ খেয়ে দিন-রাত টলতে টলতে বাড়ি ফিরত শঙ্কর। তারপরেই বাড়িতে এসে মা-মেয়েকে মারধর করত।

পড়শি চিনু সিংহ, রেখা সিংহরা বলেন, ‘‘নেশা মানুষকে কী ভাবে শেষ করে দেয়, তা চোখের সামনে দেখলাম।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Memari Burn
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE