জিটি রোডের উপরে ঝুঁকির যাত্রা। বর্ধমান শহরের কার্জন গেট চত্বরে। ছবি তুলেছেন উদিত সিংহ।
মাথায় না থাক, হাতে তো রয়েছে! হাতেও যা রয়েছে, তারও গুণগত মান কেমন তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। সম্প্রতি হেলমেট নিয়ে প্রশাসনের কড়াকড়ির পরে তেল নিতে গিয়ে বর্ধমানের বহু জায়গায় মোটরবাইক আরোহীদের হাতে উঠেছে হেলমেট। কিন্তু তা মাথায় দিতে ঘোর অনীহা তাঁদের।
সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মোটরবাইক দৌরাত্ম্যের বিষয়টি নিয়ে সরব হন। তিনিই নির্দেশ দেন ‘নো হেলমেট নো পেট্রোল’। তারপরেই নড়েচড়ে বসে বিভিন্ন জেলা প্রশাসন। দিন কয়েক আগেও বর্ধমান শহরে হেলমেট না থাকলেও তেল পেতে সমস্যা হচ্ছিল না। কিন্তু বিষয়টি বর্ধমান দক্ষিণের মহকুমাশাসক অনির্বাণ কোলের নজরে পড়তেই পাম্প-মালিকদের বিষয়টি নিয়ে সতর্ক করা হয়েছে। বর্ধমানের জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন বলেন, “প্রতিটি মহকুমায় বৈঠক করে পাম্প-মালিকদের হেলমেটহীন আরোহীদের তেল না দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। চলছে প্রচার অভিযান। বাড়ানো হবে পুলিশ নজরদারি।’’
প্রশাসনের কড়াকড়িতে পৌষমাস জেলার বিভিন্ন এলাকার মোটর পার্টস বিক্রেতাদের। মোটর পার্টস দোকানগুলিতে ঢুঁ মারলেই নজরে পড়বে রাশি রাশি হেলমেটের। আইন অনুযায়ী, আইএসআই ছাপ থাকা হেলমেটগুলিই বৈধ। কিন্তু বিক্রি বাড়লেও গেলমেটের গুণগত মান কেমন, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে প্রশাসনের কর্তাদের একাংশের মধ্যে। বিক্রেতারা অবশ্য সোজাসুজিই জানাচ্ছেন বেশির ভাগ কমদামী হেলমেটেরই গুণগত মান ভাল নয়। বর্ধমানের ভাঙাকুঠি এলাকার মোটরপার্টসের ব্যবসায়ী অমিত জেটলি বলেন, “পুলিশের চাপ, প্রশাসনের আবেদনে হেলমেট ছাড়া তেল দিচ্ছে না পাম্পগুলি। তার জেরে বিক্রি বেড়েছে ঠিকই। কিন্তু ভাল মানের হেলমেটের কদর নেই।” বাজার ঘুরে জানা গেল, ভাল মানের ‘বৈধ’ হেলমেটের দাম গড়ে ৮৫০ থেকে দু’হাজার টাকা। কিন্তু বাজারে চাহিদা ১৩০ থেকে আড়াইশো টাকার হেলমেটের। বিক্রেতারা জানান, ১৮ থেকে ৩৫ বছরের তরুণ-তরুণীরা এত কড়াকড়ির পরেও দোকান পা দিচ্ছেন না। হেলমেটের চাহিদা মূলত প্রৌঢ়দের মধ্যে। এই পরিস্থিতিতে ভাল হেলমেট এনে অনেক বিক্রেতাই এখন হাত কামড়াচ্ছেন। যেমন, ঢলদিঘির বিশ্বনাথ শীল, বড়নীলপুরের রোহন শর্মাদের কথায়, “বিক্রি বাড়ার আশায় হরিয়ানা, পঞ্জাব থেকে দামী হেলমেট এনেছিলাম। এখন দেখছি লোকসান হয়ে গেল!’’
শহর ঘুরে দেখা গেল, কমদামী হেলমেট কেনার পরে তা মাথায় দিতেও ঘোর অনীহা মোটরবাইক আরোহীদের একাংশের। বোনকে পিছনে বসিয়ে স্কুটি চালিয়ে যাচ্ছিলেন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তরের পড়ুয়া সুহেনা মিশ্র। ‘হেলমেট পরেননি?’— জিজ্ঞেস করতেই তাঁর সটান জবাব, ‘‘শহরের মধ্যেই তো রয়েছি। বোনের হাতে হেলমেট রয়েছে তো।” হাতে হেলমেটের দৃশ্যটা আরও বেশি করে দেখা গেল শহরের বিভিন্ন পেট্রোল পাম্পে। তেলের লাইনে দাঁড়ানো বেশির ভাগ মোটরবাইক আরোহীর হাতে কমদামী হেলমেট। একই ছবি নজরে পড়ে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের উপরে অনাময়ে দাঁড়ালেও। তবে হাতে হেলমেট রাখার যুক্তিও দিচ্ছেন মোটরবাইক আরোহীরা। এক আরোহী জানিয়ে দেন, বেশিক্ষণ হেলমেট মাথায় থাকলে নাকি অস্বস্তি হয়! এই পরিস্থিতিতে বর্ধমান, মেমারি ও গলসি থানার পুলিশকর্মীদের ক্ষোভ, দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে নিয়মিত মোটরবাইক-দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান আরোহীরা। তিনকোনিয়ার এক মোটরপার্টস ব্যবসায়ী অনন্ত শীলের ক্ষোভ, “৫০-৯০ হাজার টাকার মোটরবাইক কিনছেন। কিন্তু আইনের সঙ্গে নিজেদের সুরক্ষাকেও ফাঁকি দিচ্ছেন আরোহীরা।’’
তবে জেলার পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবাল জানিয়ে দেন, ‘‘সচেতন করার পরে ধীরে ধীরে আইনের পথে হাঁটবে পুলিশ। রাস্তার পাশাপাশি পেট্রোল পাম্পগুলোতেও নজরদারি চালানো হবে।” প্রতিটি পাম্পে সিভিক ভলান্টিয়ারও রাখার পরিকল্পনা করা হচ্ছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy