Advertisement
১১ মে ২০২৪
Bardwan Medical college

‘সারি’ ওয়ার্ডে অবাধ যাতায়াত পরিজনদের

হাসপাতালের সুপার প্রবীর সেনগুপ্তের মতে, মানুষকে সচেতন হতে হবে। তবেই ‘সারি’ ওয়ার্ডে অবাধ প্রবেশ নিয়ন্ত্রণে আসবে।

অবাধেই চলে সারি ওয়ার্ডে যাতায়াত। ছবি: উদিত সিংহ

অবাধেই চলে সারি ওয়ার্ডে যাতায়াত। ছবি: উদিত সিংহ

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০২০ ০১:৪৫
Share: Save:

একই ভবনে উপরের নানা তলায় রয়েছে মেডিসিন, চোখ-নাক-গলার চিকিৎসা-সহ বিভিন্ন বিভাগ। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সেই ভবনেরই এক তলায় চলছে ‘সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ইলনেস’ বা ‘সারি’ ওয়ার্ড। অভিযোগ, ওই ওয়ার্ড পেরিয়েই উপরের বিভাগগুলিকে অকাতরে যাতায়াত করছেন লোকজন। ‘সারি’ ওয়ার্ডেও কোনও বাধা ছাড়াই রোগীর পাশে পরিজনেরা বসে থাকছেন। গোটা বিষয়টি নিয়ে ‘কোভিড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’-এর সদস্যেরা প্রশ্ন তুলেছেন।

হাসপাতালের সুপার প্রবীর সেনগুপ্তের মতে, মানুষকে সচেতন হতে হবে। তবেই ‘সারি’ ওয়ার্ডে অবাধ প্রবেশ নিয়ন্ত্রণে আসবে। তিনি বলেন, ‘‘রক্ষী রয়েছে। পুজোর সময়ে রক্ষী নিয়ে সমস্যা হয়েছিল, তাই পরিস্থিতি ঢিলেঢালা দেখাচ্ছিল।’’

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, এর আগে জরুরি বিভাগের সামনে আট তলা ভবনের ভিতরে ‘সারি’ ওয়ার্ড করা হয়েছিল। কিন্তু সেখানে লিফট্‌ ছাড়াই ‘সারি’ ওয়ার্ড চলছে বলে প্রশ্ন ওঠে। এক জুনিয়র চিকিৎসক সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিয়ো-বার্তা (সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার) দিয়ে ‘সারি’ ওয়ার্ডের পরিকাঠামো নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। তার পরেই ‘সারি’ ওয়ার্ড সরিয়ে ‘নিউ ব্লিডিং’-এ নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু অভিযোগ ওঠা বন্ধ হয়নি। বরং, ‘সারি’ ওয়ার্ডে অবাধ যাতায়াত করছেন রোগীর পরিজনের। তাঁদের অধিকাংশই স্বাস্থ্য-বিধি মানার ধার দিয়ে যাচ্ছেন না বলে অভিযোগ।

‘সারি’ ওয়ার্ডে চিকিৎসা পেতে সমস্যা হচ্ছে বলেও অভিযোগ রোগীর পরিজনদের একাংশের। বর্ধমান শহরের কালীবাজার থেকে খালাসিপাড়া, সুভাষপল্লি থেকে আলমগঞ্জ— নানা জায়গা থেকে ‘সারি’ ওয়ার্ডে ভর্তি হওয়া রোগীর পরিজনদের এমন অভিযোগ তুলেছেন। কালীবাজারের এক বাসিন্দার অভিযোগ, ‘‘চিকিৎসক পাওয়া তো দূর, অক্সিজেন দেওয়ার জন্য কাউকে পাওয়া যায়নি! অথচ, ওয়ার্ডের ভিতরে প্রচুর লোক ঘুরে বেড়াচ্ছে।’’ কয়েকদিন আগে বর্ধমানের খালাসিপাড়ার এক প্রবীণ তিন দিন ‘সারি’ ওয়ার্ডে ভর্তি ছিলেন। তাঁর অভিযোগ, ‘‘৫০টি শয্যা, সেখানে প্রায় ১৫০ জন রয়েছেন। শয্যায় রোগীর বাড়ির লোক শুয়ে থাকছেন। কেউ বলার নেই, দেখার নেই। অথচ, আমরা চিকিৎসার জন্য হাপিত্যেশ করে বসেছিলাম।’’ ‘সারি’ ওয়ার্ডে বিনা চিকিৎসায় তাঁদের পরিজন মারা গিয়েছেন বলে ‘সোশ্যাল মিডিয়া’য় অভিযোগও তুলেছিলেন কেউ-কেউ। এ ছাড়া, স্যাঁতসেঁতে ঘর, বাইরে আবর্জনা জমে থাকা, মশা-মাছির উৎপাতের অভিযোগ রয়েছেই।

দুই বর্ধমান জেলার জন্য গঠিত ‘কোভিড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’-এর সদস্যেরা ইতিমধ্যে দু’বার ‘সারি’ ওয়ার্ড পরিদর্শন করেছেন। সেখানকার ব্যবস্থা দেখে তাঁরা অসন্তোষও প্রকাশ করেছেন। স্বাস্থ্য ভবনে পাঠানো রিপোর্টে তাঁরা জানিয়েছেন, উপসর্গ রয়েছে, অথচ করোনা-নমুনার রিপোর্ট আসেনি, এমন রোগীদের একেবারে ‘আইসোলেশন’-এ রাখার জন্যই ‘সারি’ ওয়ার্ডের ভাবনা। অথচ, এই হাসপাতালের ‘সারি’ ওয়ার্ডে ‘অবাধে’ যাতায়াত করা যাচ্ছে। ওয়ার্ডের সামনে প্রচুর মানুষ বসে থাকেন। সংক্রমণ ছড়ানোর ভয় পদে-পদে। এ ছাড়া পরিকাঠামোর অভাবের কথাও তুলে ধরা হয়েছে। ওই কমিটির কো-অর্ডিনেটর, চিকিৎসক সমরেন্দ্র বসু বলেন, ‘‘পরিদর্শনের পরে খামতির কথা রিপোর্ট আকারে স্বাস্থ্য ভবনে জমা দিয়েছি।’’

হাসপাতালের সুপার প্রবীর সেনগুপ্ত অবশ্য দাবি করেন, ‘কোভিড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’-এর পরামর্শ মতো পরিকাঠামোর অনেকটাই উন্নতি করা হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE