Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

বার্নপুরকে দেখে বুক বাঁধছে কাটোয়া

ইস্কোর আধুনীকিকরণের সঙ্গে শিল্পাঞ্চলের বদলে যাওয়া চেহারা ভরসা জাগাচ্ছে কাটোয়াবাসীর মনেও। রবিবার আসানসোলের পোলো গ্রাউন্ডের জনসভায় মোদী-মমতা একসঙ্গে যে উন্নয়নের বার্তা দিলেন তাতে দশ বছরের ফাঁস খুলে কাটোয়ায় প্রস্তাবিত তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পও এ বার বাস্তব আকার নেবে বলে আশা করছেন জমিদাতা থেকে গ্রামবাসী সকলেই।

এনটিপিসি প্রকল্প চত্বরে তোলা নিজস্ব চিত্র।

এনটিপিসি প্রকল্প চত্বরে তোলা নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কাটোয়া শেষ আপডেট: ১১ মে ২০১৫ ০১:৫১
Share: Save:

ইস্কোর আধুনীকিকরণের সঙ্গে শিল্পাঞ্চলের বদলে যাওয়া চেহারা ভরসা জাগাচ্ছে কাটোয়াবাসীর মনেও।

রবিবার আসানসোলের পোলো গ্রাউন্ডের জনসভায় মোদী-মমতা একসঙ্গে যে উন্নয়নের বার্তা দিলেন তাতে দশ বছরের ফাঁস খুলে কাটোয়ায় প্রস্তাবিত তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পও এ বার বাস্তব আকার নেবে বলে আশা করছেন জমিদাতা থেকে গ্রামবাসী সকলেই। তাঁদের আশা, শীঘ্রই এনটিপিসির প্রস্তাবিত তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প চালু হয়ে যাবে। ইতিমধ্যে এনটিপিসির দেওয়া টাকাতে কাটোয়া থেকে বলগোনা পর্যন্ত গেজ পরিবর্তনের কাজ শুরু করে দিয়েছে রেল।

এ দিন টিভিতে মোদী-মমতার সৌজন্য, সাক্ষাৎ দেখে জমির মালিক সোমেশ দে, সাগর বন্দ্যোপাধ্যায়রা বলেন, “সেই ২০০৫ সাল থেকে শুনছি এই প্রকল্প শীঘ্র চালু হবে। কিন্তু দশ বছর পরেও নির্মাণের কাজই শুরু হয়নি। বার্নপুরের মতো কাটোয়ার ক্ষেত্রেও মোদী-মমতা এক হলে তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়ে যাবে।” এ দিন মঞ্চে প্রধানমন্ত্রীর সামনে বাংলার উন্নয়নের, শিল্পায়নের ফিরিস্তি দিতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও পানাগড় ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের পরেই কাটোয়া তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের নাম করেন। তাতে এই প্রকল্প শীঘ্র চালু হওয়ার আশা আরও বাড়ে তাঁদের। জমিদাতা দোলগোবিন্দ দে, পরেশনাথ গুপ্তরাও মনে করেন, “নির্মাণ কাজ শুরু হতে যত দেরি হচ্ছে, তত আমাদের এলাকার উন্নয়ন পিছিয়ে পড়ছে। মোদী-মমতা এক হয়ে ইস্কোর আধুনিকীকরণের সূচনা হল, তেমনি ওঁরা এক হয়ে আমাদের এলাকাকেও আধুনিক করে তুলুন।” সংস্থার কাটোয়া প্রকল্পের জেনারেল ম্যানেজার অভিজিৎ সেনেরও আশ্বাস, “আমরা খুব দ্রুত প্রকল্পের কাজ শুরু করব।”

২০০৫ সালের অগস্ট থেকে কাটোয়াতে তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য চেষ্টা চালায় রাজ্য বিদ্যুৎ উন্নয়ন বা পিডিসিএল। ২০১০ সালে, বিগত বাম সরকারের আমলেই পিডিসিএল কাটোয়া প্রকল্প থেকে হাত গুটিয়ে নেয়। তার জায়গায় এনটিপিসি এই তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প গড়তে রাজি হয়। রাজ্য সরকারের সঙ্গে মৌ চুক্তি হওয়ার পরে ২০১১ সালের ডিসেম্বরে এনটিপিসি কাটোয়াতে আসে। দীর্ঘ চার বছরে ভাগীরথী দিয়ে অনেক জল বয়ে গিয়েছে। মমতার নীতি মেনে বিগত বাম সরকারের অধিগৃহীত ৫৫৬ একরের বাইরে আরও ১৫০ একর জমি কিনতে রাজি হয় এনটিপিসি। এ ছাড়াও রাজ্য সরকার এই তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য ১০০ একর জমি এনটিপিসির হাতে তুলে দেয়। তারপরেও এই প্রকল্পের জন্য দীর্ঘসূত্রতা কেন? এনটিপিসি সূত্রে জানা যায়, এই প্রকল্পের জন্য প্রথম থেকেই চাষিরা নানা ভাবে পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। প্রথমে সংস্থার পরিচালন পর্ষদের নির্দেশ মতো ওই ১৫০ একরের ৯৮ শতাংশের উপর জমির মালিক প্রস্তাবিত তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য জমি দিতে ‘ইচ্ছুক’ বলে লিখিত ভাবে এনটিপিসি কর্তৃপক্ষকে জানান। পরবর্তী সময়ে পরিচালন পর্ষদ অন্তত ৫০ শতাংশ চাষিদের সঙ্গে চুক্তি করার কথা বলে। এনটিপিসির আইনজীবী পরাগ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “পঞ্চাশ শতাংশের উপর চাষি এনটিপিসির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন।” এনটিপিসি সূত্রে জানা গিয়েছে, জমি কেনার অনুমতি পাওয়ার জন্য পরিচালন পর্ষদের নথিপত্র জমা দিয়েছেন কাটোয়ার এনটিপিসি কর্তারা।

ঠিক ছিল, ২০১৪ সালের শেষ থেকে প্রস্তাবিত কাটোয়া তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। নির্মাণ সংস্থা বাছাইয়ের জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্রও ডেকেছিল এনটিপিসি। নির্মাণ সংস্থা বাছাইয়ের কাজও শেষ করেছিল ওই কেন্দ্রীয় সংস্থা। কিন্তু গত ১০ জানুয়ারি কাটোয়ায় এসে এনটিপিসির চেয়ারম্যান অরূপ রায়চৌধুরী জানিয়ে দেন, কিছু সমস্যার জন্য নির্মাণের কাজ পিছিয়ে দিতে হচ্ছে। আন্তর্জাতিক দরপত্রও বাতিল করা হয়েছে। তবে তাঁর আশা, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাস থেকে নির্মাণ কাজ শুরু হতে পারে।

কিন্তু এখনও জমি কেনার কাজ শুরু হয়নি, আবার নতুন করে কাটোয়া তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের নির্মাণের জন্য দরপত্রও ডাকেনি এনটিপিসি। এই অবস্থায় পুজোর আগে অধিগৃহীত জমিতে নির্মাণ কাজ কী আদৌ শুরু হবে, প্রশ্ন জাগছে জমিদাতাদের। তাই তাঁরা চান, ইস্কোর মডেলে কাটোয়ার ক্ষেত্রেও কেন্দ্র-রাজ্য এক হয়ে প্রস্তাবিত তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে তুলুক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE