Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

দুঃস্থ পরিবারের পড়ুয়াদের জন্য স্কুল পুলিশের

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১২ সালে চালু হয় স্কুলটি। নাম দেওয়া হয় ‘দৃষ্টি’। গোড়ায় শুধু পুলিশকর্মীরাই পড়াতেন। অস্থায়ী বাঁশ, খড়ের ঘরে ক্লাস হত। কিছু দিন আগে পাকা তিনটি ঘর হয়েছে।

কচিকাঁচাদের পড়া বুঝিয়ে দিচ্ছেন পুলিশকর্মী। নিজস্ব চিত্র

কচিকাঁচাদের পড়া বুঝিয়ে দিচ্ছেন পুলিশকর্মী। নিজস্ব চিত্র

অর্পিতা মজুমদার
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০১৯ ০০:৪৩
Share: Save:

শুধু আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখা বা অপরাধের তদন্ত নয়, সময় পেলে কচিকাঁচাদের ক্লাসও নেয় পুলিশ। গত বছর সাতেক ধরে দুর্গাপুরের ওয়ারিয়ার বাসিন্দাদের অভিজ্ঞতাটা সে রকমই। এলাকার দুঃস্থ পরিবারের ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার সুযোগ করে দিতে স্কুল খুলেছেন ওয়ারিয়া ফাঁড়ির পুলিশকর্মীরা। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত সেখানে পড়াশোনা করার সুযোগ পাচ্ছে অনেক খুদে। পুলিশ কমিশনারেটের ডিসি (পূর্ব) অভিষেক গুপ্ত বলেন, ‘‘এলাকার দুঃস্থ পরিবারের পড়ুয়াদের কাছে পড়াশোনার সুযোগ পৌঁছে দিতেই এই উদ্যোগ।’’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১২ সালে চালু হয় স্কুলটি। নাম দেওয়া হয় ‘দৃষ্টি’। গোড়ায় শুধু পুলিশকর্মীরাই পড়াতেন। অস্থায়ী বাঁশ, খড়ের ঘরে ক্লাস হত। কিছু দিন আগে পাকা তিনটি ঘর হয়েছে। বাংলা ও হিন্দি মাধ্যমে পড়াশোনা করানো হয়। প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মোট পড়ুয়া সংখ্যা ১২০ জন। কাদা রোড, গ্যামন কলোনি, মেনগেটের মতো নানা এলাকা থেকে পড়ুয়ারা আসে। অভিভাবকদের কেউ দিনমজুর, কেউ ভ্যান চালান, কেউ কোনও দোকানে বা কারও বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করেন। কাজে বেরনোর আগে তাঁরা ছেলেমেয়েদের স্কুলে পৌঁছে দিয়ে যান।

প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত স্কুল চলে। বই-খাতা থেকে শুরু করে স্কুলের পোশাক, সবেরই ব্যবস্থা করেন পুলিশকর্মীরা। স্কুল চালানোর যাবতীয় খরচও দেয় পুলিশ। এখন এক জন শিক্ষক ও দু’জন শিক্ষিকা রয়েছেন স্কুলে। সময়-সুযোগ পেলে পুলিশকর্মীরাও পড়ান। ওই ফাঁড়ির আধিকারিক রাজশেখর মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এলাকার দুঃস্থ পরিবারের ছেলেমেয়েরা যাতে পড়াশোনার সুযোগ থেকে বঞ্চিত না হয়, সে জন্যই এই উদ্যোগ। সময় পেলে আমরাও পড়াই ওদের।’’ তিনি জানান, পুলিশকর্মীরা বাড়ি-বাড়ি ঘুরে পড়ুয়াদের স্কুলে নিয়ে আসেন।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, আপাতত তিনটি ঘরেই সব ক্লাসের ব্যবস্থা করতে হচ্ছে। আরও ঘর দরকার। সে জন্য সামাজিক উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দের আর্জি জানানো হয়েছে একাধিক সংস্থাকে। পরে সম্ভব হলে স্কুলটিকে অষ্টম শ্রেণিতে উন্নীত করার পরিকল্পনাও রয়েছে বলে জানান রাজশেখরবাবু। এক অভিভাবক বাবলু সাউ বলেন, ‘‘মেয়েকে পড়ানোর মতো আর্থিক সঙ্গতি আমার নেই। এই স্কুলের জন্যই মেয়ে পড়াশোনার সুযোগ পেয়েছে।’’

স্কুলের পড়ুয়ারা সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে অবশ্য এখনও বঞ্চিত রয়ে গিয়েছে। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই স্কুলে মিড-ডে মিল কী ভাবে চালু করা যায়, সে ব্যাপারে চিন্তাভাবনা চলছে। ইতিমধ্যে স্কুলটি পরিদর্শন করে এসেছেন মেয়র পারিষদ (শিক্ষা) অঙ্কিতা চৌধুরী। স্কুলে পুরসভার তরফে শিক্ষক নিয়োগের ব্যাপারে চিন্তাভাবনার আশ্বাস দিয়েছেন স্থানীয় কাউন্সিলর ধর্মেন্দ্র যাদব। ফাঁড়ির আধিকারিক রাজশেখরবাবু বলেন, ‘‘শিক্ষকের সংখ্যা বাড়লে পড়ুয়াদের উপকার হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Police School Durgapur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE