Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Education

পড়াশোনা চলছে কেমন, জানতে উঠোনে হাজির স্যরেরা

ইংরেজি  মাধ্যম স্কুল বা হাইস্কুলে অনলাইন ক্লাস হলেও শিক্ষকদের সংস্পর্শ থেকে দূরেই রয়েছে বহু প্রাথমিক স্কুলের পড়ুয়া।

বাড়িতে হাজির শিক্ষক। নিজস্ব চিত্র

বাড়িতে হাজির শিক্ষক। নিজস্ব চিত্র

সুপ্রকাশ চৌধুরী
বর্ধমান শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০২০ ০০:০১
Share: Save:

তিন মাস পরে চেনা গুরুগম্ভীর গলাটা শুনে হকচকিয়ে গিয়েছিল শৌভিক, সাইদুলেরা। দৌড়ে বাইরে এসে বাড়ির উঠোনে ‘স্যার’কে দেখে কেউ গড়গড়িয়ে কবিতা বলতে শুরু করে, কেউ আবার স্যরের প্রশ্নের উত্তর দেয় মাথা নেড়ে। তবে পড়া না পারার ভয় নয়, বরং খুশিই ছিল ওদের চোখে।

ইংরেজি মাধ্যম স্কুল বা হাইস্কুলে অনলাইন ক্লাস হলেও শিক্ষকদের সংস্পর্শ থেকে দূরেই রয়েছে বহু প্রাথমিক স্কুলের পড়ুয়া। সেই সব ছেলেমেয়েদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পড়াশোনার হাল হকিকত জানার চেষ্টায় নেমেছেন বর্ধমান ১ ব্লকের নতুনগ্রাম অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। সর্বশিক্ষা মিশনের জেলা প্রকল্প আধিকারিক মৌলি সান্যাল বলেন, ‘‘স্কুলের শিক্ষক ছাত্র সম্পর্ক অনেকটা পারিবারিক সম্পর্কের মতো। এই উদ্যোগ তাঁদের কাছ থেকে আশা করাটাই স্বাভাবিক। যে ভাবে শিক্ষকেরা বাড়ি গিয়ে ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনা, স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নিচ্ছেন তা এককথায় অনবদ্য।’’

নতুনগ্রামের ওই স্কুল সূত্রে জানা যায়, তিন জন শিক্ষক সপ্তাহে তিন দিন করে ছাত্রছাত্রীদের বাড়ি যাচ্ছেন। শনিবার থেকে এই কর্মসূচি শুরু হয়েছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক শেখ হাবিবুল্লাহ ছাড়াও সহ-শিক্ষক নীরেন্দু দাস এবং উত্তম খাড়া মঙ্গল, বৃহস্পতি ও শনি এই তিন দিন পালা করে গিয়ে খোঁজখবর করছেন। শনিবার নতুনগ্রাম এবং শিবপুর এলাকার প্রায় ৫০ জন পড়ুয়ার বাড়িতে যান তাঁরা। তারা কী পড়াশোনা করছে? কোথাও কিছু খামতি রয়েছে কি না, সেই সম্পর্কে খোঁজখবর করেন। পড়াশোনার বাইরে অন্য কোনও অসুবিধা হচ্ছে কি না সে সম্পর্কেও খোঁজ নেন তাঁরা। ওই স্কুলে মোট ১৬৬ জন পড়ুয়া রয়েছে। আগামী দিন বাড়িতে গিয়ে তাদের মডেল প্রশ্নও দেওয়ারও পরিকল্পনা করেছেন শিক্ষকেরা। নির্দিষ্ট বাড়িতে প্রশ্ন দিয়ে আসার পরে শিক্ষকেরাই গিয়ে খাতা সংগ্রহ করবেন ও মূল্যায়ণ করবেন। এতে স্কুলের সঙ্গে যোগাযোগটা থাকবে ছাত্রছাত্রীদের।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক শেখ হাবিবুল্লাহ বলেন, ‘‘বর্তমান পরিস্থিতিতে ছাত্রছাত্রীদের স্কুলে আনা সম্ভব হচ্ছে না। শিক্ষামন্ত্রীর কাছ থেকে অনুপ্রেরণা পেয়ে, আমরা ঠিক করি পড়ুয়াদের বাড়ি বাড়ি যাব। শহরের মধ্যে থাকেন এমন শিক্ষকদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।’’ তিনি জানান, শিক্ষকেরা বাড়িতে গেলে অভাব-অভিযোগের কথা জানাচ্ছেন অভিভাবকেরা। যতটা সম্ভব সমাধান করার সঙ্গে স্বাস্থ্য সম্পর্কেও সচেতন করা হচ্ছে।

অভিভাবকেরা জানান, অনেকেই স্কুল না থাকায় নিয়ম করে পড়াশোনা করতে চাইছিল না। অনেকে আবার নতুন পড়া না পেয়ে মনমরা হয়েছিল। কিন্তু শিক্ষকদের দেখে পড়ায় উৎসাহ পেয়েছে তারা। অভিভাবক শেখ মনিরুল, বাপ্পা মোল্লা, তাজ মল্লিকেরা বলেন, ‘‘এই ভাবে স্যারেরা বাড়িতে এসে ছেলেমেয়েদের খোঁজ নিচ্ছেন, ভাবতে পারছি না।’’ ‘‘শিক্ষণীয় দৃষ্টান্ত’’, বলেন বর্ধমান সদর উত্তর চক্র স্কুল পরিদর্শক সৌমেন মণ্ডলও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Education
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE