Advertisement
০৫ মে ২০২৪

সমবায়ে তালা, টাকা ফেরত চেয়ে বিক্ষোভ

প্রায় তিন মাস ধরে তালা ঝুলছে সমবায় সমিতিতে। জানা গিয়েছে, সংস্থার অ্যাকাউন্টে পড়ে রয়েছে মাত্র পাঁচ লক্ষ টাকা। অথচ মন্তেশ্বরের আসানপুর, সাহাপুর, রুইগোড়িয়া গ্রামের বহু মানুষের অভিযোগ, তাঁদের অন্তত ২৬ লক্ষ টাকা পাওয়া রয়েছে সমবায়ে।

মন্তেশ্বরের সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভের সামনে বিক্ষোভ। নিজস্ব চিত্র।

মন্তেশ্বরের সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভের সামনে বিক্ষোভ। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কালনা শেষ আপডেট: ১০ মে ২০১৬ ০৩:৩৪
Share: Save:

প্রায় তিন মাস ধরে তালা ঝুলছে সমবায় সমিতিতে। জানা গিয়েছে, সংস্থার অ্যাকাউন্টে পড়ে রয়েছে মাত্র পাঁচ লক্ষ টাকা। অথচ মন্তেশ্বরের আসানপুর, সাহাপুর, রুইগোড়িয়া গ্রামের বহু মানুষের অভিযোগ, তাঁদের অন্তত ২৬ লক্ষ টাকা পাওয়া রয়েছে সমবায়ে। সোমবার টাকা ফেরত চেয়ে মন্তেশ্বরের কো-অপারেটিভ ইন্সপেক্টরের কাছেও বিক্ষোভও দেখান তাঁরা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এলাকার চাষিদের উন্নয়নের জন্য ১৯৩০ সালে তৈরি হয় আসানপুর কৃষি সমবায় সমিতি। বর্তমানে এর সদস্য সংখ্যা হাজার খানেক। চাষিদের দাবি, সমবায় তৈরি হওয়ার পর থেকে চাষাবাদের জন্য ঋণ, চাষের সরঞ্জাম-সহ নানা সুবিধা পেয়েছেন তাঁরা। এমনকী ‘ব্যাঙ্কিং’ পরিষেবাও চালু হওয়ায় টাকা-পয়সা জমা রাখা, লেনদেনের পরিমাণও বাড়ে। কিন্তু গত পাঁচ বছরে সমবায় সমিতি ক্রমশ ধুঁকতে শুরু করে বলে চাষিদের অভিযোগ। অডিট বন্ধ হয়ে যায়। থমকে যায় নির্বাচন প্রক্রিয়াও। তার মধ্যেই এ বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি সমবায় সমিতির ম্যানেজার অমিয়কুমার দাঁ আত্মঘাতী হন। তালা ঝোলে সমবায় সমিতিতে। বর্তমানে এক জন মাত্র চুক্তিভিত্তিক কর্মী রয়েছেন। ফলে উপভোক্তারা পড়েছেন আতান্তরে। কোথা থেকে টাকা মিলবে, নথিপত্র কার কাছে কিছুই জানতে পারছেন না তাঁরা। আঁধারে ওঅ সমবায় সমিতির সদস্যেরাও।

মন্তেশ্বরের তিন গ্রামে ছড়িয়ে থাকা সমবায়ের সদস্যদের দাবি, সম্প্রতি তাঁরা জানতে পেরেছেন, সমিতির অ্যাকাউন্টে মাত্র পাঁচ লক্ষ টাকা রয়েছে। অথচ এলাকার মানুষের পাওনা প্রায় ২৬ লক্ষ টাকা। এদের মধ্যে বহু বিধবা এবং গরিব চাষিও রয়েছেন। পাওনা টাকার হিসেব মেটাতে সোমবার মন্তেশ্বর সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভে একটি বৈঠকে বসেন তাঁরা। হাজির ছিলেন মন্তেশ্বরের কো-অপারেটিভ ইন্সপেক্টর টুসু মণ্ডল। এ দিকে, বৈঠকের কথা জানতে পেরে মন্তেশ্বর পৌঁছে যান উপভোক্তারা। শুরু হয় বিক্ষোভ। তাঁদের অভিযোগ, কৃষি ঋণের অন্য পরিষেবা তো দূরঅস্ত, জমা টাকা পেতেও কালঘাম ছুটে যাচ্ছে। পাঁচ বছর ধরে যে সংস্থার অডিট বন্ধ তাদের এত টাকা তোলার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল কী ভাবে, সে প্রশ্নও তোলেন তাঁরা। অবিলম্বে টাকা ফেরত দেওয়ার দাবিও তোলেন।

বিক্ষোভে যোগ দেওয়া সমর ঘোষ বলেন, ‘‘ওই সমবায় সমিতিতে আমার ২ লক্ষ টাকা জমা রয়েছে। এভাবে টাকা রেখে বিপাকে পরতে হবে ভাবিনি। কবে টাকা পাব, কারও কাছে তার সদুত্তর নেই।’’ চন্দন ঘোষ, ভগবতী ঘোষ, ঝর্না মাঝি, প্রমিলা দাসদেরও বক্তব্য, দীর্ঘদিনের সমবায়। এ ভাবে টাকা রেখে বিপদে পড়তে হবে ভাবতে পারিনি। তাঁদের দাবি, এলাকার বেশ কিছু বিধবা মহিলা দূরের ব্যাঙ্কে যেতে না পেরে শেষ সম্বলটুকু গচ্ছিত রেখেছিল সমবায়ে। দরজায় তালা পড়ে যাওয়াই দুশ্চিন্তায় ঘুম উড়ে গিয়েছে তাঁদের।

কিন্তু কী কারণে সমবায়ের এমন হাল, সে উত্তর নেই কারও কাছে। বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেওয়া মন্তেশ্বর পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য তথা আসানপুর কৃষি সমবায় সমিতির প্রাক্তন সম্পাদক শিশির ঘোষ বলেন, ‘‘কে বা কারা এত টাকা সমবায় সমিতি থেকে তুলে নিল তা অডিট না হওয়া পর্যন্ত বলা কঠিন। তবে অডিট ছাড়া সমবায় এত টাকা কিভাবে তুলতে পারে সেটা ভেবেই আশ্চর্য হয়ে যাচ্ছি।’’ মন্তেশ্বরের কো-অপারেটিভ ইন্সপেক্টর টুসুদেবীর সঙ্গে এ নিয়ে যোগযোগ করা হলে তিনি জানান, তিন গ্রামের বাসিন্দারা এর সঙ্গে জড়িত। কাটোয়ার অ্যাসিস্ট্যান্ট রেজিস্টার অফ কো-অপারেটিভ সোসাইটির নজরে আনা হচ্ছে বিষয়টি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Co-operative society katwa Protest
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE