সদরঘাট সেতুতে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে ট্রাক, বাস। নিজস্ব চিত্র
ভোরবেলা থেকেই রাস্তায় গাড়ি আটকে কালীপুজোর চাঁদা তুলছিলেন কয়েকজন যুবক। অভিযোগ, দাবি মত চাঁদা দিতে রাজি না হওয়ায় একটি ছোট মালবাহী গাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়। চালককে গাড়ি থেকে নামিয়ে মারধরও করা হয়। এরপরেই চাঁদার জুলুমের প্রতিবাদে দামোদরের সদরঘাট সেতুতে ওঠার মুখে রাস্তার উপর বাস-লরি-ম্যাটাডর রেখে পথ অবরোধ শুরু করেন চালকেরা। বর্ধমান-আরামবাগ রোডের ওই অবরোধ চলে আসে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে পর্যন্ত। প্রায় তিন ঘন্টা ধরে দু’টি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা বন্ধ থাকার পরে পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের উদ্যোগে অবরোধ তুলে নেন চালকরা।
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বর্ধমান সদর) প্রিয়ব্রত রায় বলেন, “কোথাও জোর করে চাঁদা তোলার অভিযোগ পেলেই পুলিশ ব্যবস্থা নিচ্ছে। সদরঘাটে এলাকায় ভোর থেকে রাস্তায় কারা চাঁদা তুলছিল, তাঁদের খোঁজ করা চলছে।’’
শুধু ওই এলাকা নয়, বর্ধমান শহরের বিভিন্ন রাস্তায় গাড়ি তো বটেই, টোটো আটকেও জোর চাঁদা তোলা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, কালীপুজোর সময় বিভিন্ন রাস্তায় চাঁদার উৎপাত প্রতি বছরের ব্যাপার। কিন্তু কোনও ঘটনা না ঘটলে প্রশাসন ব্যবস্থা নিতে গড়িমসি করে। লরি চালক সংগঠনগুলির দাবি, ফি বছরের এই উৎপাত থেকে বাঁচার জন্য প্রশাসনের উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। না হলে রাস্তায় গাড়ি বের মুশকিল।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ভোর সাড়ে পাঁচটা থেকে তেলিপুকুর থেকে সদরঘাট সেতু পর্যন্ত ৪-৫টি দল কালীপুজোর জন্য চাঁদা তুলছিল। বাজেপ্রতাপপুর থেকে মুড়িবোঝাই গাড়ি নিয়ে রায়নার দিকে যাচ্ছিলেন চালক শেখ সাহেব। তাঁর দাবি, “ডিভিসি সেচখাল পার হয়ে সদরঘাট সেতুতে উঠার মুখেই কয়েকজন যুবক গাড়ি আটকায়। কালীপুজোর নামে মোটা অঙ্কের চাঁদা চায়। আমি ১০ টাকা দিতে চাইলে তাঁরা নিতে চাননি। এ নিয়ে বচসা শুরু হয়। তারপরই লাঠি দিয়ে গাড়ির কাঁচ ভেঙে দেওয়া হয়। গাড়ি থেকে নামিয়ে আমাকেও মারধর করা হয়।’’ এরই প্রতিবাদে তিনি প্রথমে রাস্তার উপর শুয়ে পড়েন। পরে গাড়িটিকে রাস্তায় আড়াআড়ি ভাবে রেখে দেন। পিছনে থাকা অন্য গাড়ির চালকেরাও সরব হয়ে রাস্তায় গাড়ি রেখে অবরোধ শুরু করে দেন।
এই রাস্তা দিয়ে হুগলির আরামবাগ ও বাঁকুড়ার ইন্দাসে পৌঁছনো যায়। দুই মেদিনীপুর, পুরুলিয়ার বিভিন্ন রুটের বাসও চলে এই রাস্তায়। সকালে অবরোধের জেরে একের পর এক গাড়ি দাঁড়িয়ে যায়। গাড়ির জট পৌঁছে যায় দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতেও। দুর্গাপুরের দিকে রথতলা পর্যন্ত ও কলকাতার দিকে উল্লাস পর্যন্ত গাড়ি থমকে যায়। দক্ষিণবঙ্গ পরিবহণ সংস্থার কলকাতামুখী একটি বাসের চালক বলেন, “দু’ঘন্টার উপর যানজটে আটকে রয়েছি। অন্য বাসগুলি তেলিপুকুরে স্টপেজ না দিয়ে উড়ালপুল ধরে চলে যাচ্ছে।’’ খণ্ডঘোষ থেকে আসা এক অসুস্থ বৃদ্ধকে যানজট থেকে উদ্ধার করে পুলিশ বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পৌঁছে দেয়। তন্ময় সামন্ত নামে এক ছাত্রের কথায়, “দু’ঘন্টার উপর দাঁড়িয়েছিলাম। শেষে দেড়-দু’কিলোমিটার পথ হাঁটার পর একটি বাসে চাপতে পেরেছি।’’ অবরোধ তুলতে গেলে স্থানীয় মানুষজনের সঙ্গে বচসাও বেধে যায় গাড়ির চালকদের। পরে বর্ধমান থানার প্রচুর পুলিশ গিয়ে অবরোধ তুলে দেয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy