Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়

ঘেরাও না তোলায় ধৃত ৭ ছাত্র

দুই ছাত্রকে ভর্তির দাবিতে মাসখানেক ধরেই বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ, ঘেরাও চলছিল। বুধবারও শেখ সুখচাঁদ ও আলমগির মণ্ডল নামে ওই দুই ছাত্রের ভর্তির দাবিতে রাত পর্যন্ত বিক্ষোভ চলে। ঘেরাও করে রাখা হয় সহ-উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারকে। তারপর পুলিশ আধিকারিকদের বের করে নিয়ে গেলেও ছাত্রেরা অবরোধ চালিয়ে যান। তারপরে রাতেই রাজবাটি ক্যাম্পাসের নিরাপত্তারক্ষীদের মারধর, বেআইনি জমায়েত ইত্যাদি অভিযোগে ৭ পড়ুয়াকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০১৫ ০২:০৩
Share: Save:

দুই ছাত্রকে ভর্তির দাবিতে মাসখানেক ধরেই বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ, ঘেরাও চলছিল। বুধবারও শেখ সুখচাঁদ ও আলমগির মণ্ডল নামে ওই দুই ছাত্রের ভর্তির দাবিতে রাত পর্যন্ত বিক্ষোভ চলে। ঘেরাও করে রাখা হয় সহ-উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারকে। তারপর পুলিশ আধিকারিকদের বের করে নিয়ে গেলেও ছাত্রেরা অবরোধ চালিয়ে যান। তারপরে রাতেই রাজবাটি ক্যাম্পাসের নিরাপত্তারক্ষীদের মারধর, বেআইনি জমায়েত ইত্যাদি অভিযোগে ৭ পড়ুয়াকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

পরে বৃহস্পতিবার সকালে ওই সাতজনের মধ্যে পিন্টু খান, অনিমেষ উপাধ্যায়, শেখ রকি ও বিজয় দে নামে চার জনকে থানা থেকেই জামিনে ছেড়ে দেয় পুলিশ। শেখ সুখচাঁদ, সাদ্দাম হোসেন ও শুভাশিস ঘোষ নামে বাকি ৩ জনকে বৃহস্পতিবার সিজেএম আদালতে হাজির করানো হলে তাঁদের জামিন দেন বিচারক। সাদ্দামের দাবি, “আমি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক ও স্নাতকোত্তর বিভাগের পড়ুয়া। এ ভাবে উপাচার্যের নির্দেশ ছাড়া পুলিশ আমাদের গ্রেফতার করতে পারে না।” বিক্ষোভকারী ছাত্রদের দাবি, ক্যাম্পাস থেকে পড়ুয়াদের গ্রেফতারির ঘটনা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। পরে সুখচাঁদেরাও জানান, “ভর্তির দাবিতে আমাদের আন্দোলন চলবে। বৃহস্পতিবার রাত থেকেই তার প্রস্তুতি নেওয়া হবে।”

যাঁদের নিয়ে বিক্ষোভ সেই শেখ সুখচাঁদ ও আলমগির মণ্ডলের দাবি, ট্যুরিজম বিভাগের স্নাতকোত্তরে ভর্তির প্রথম তালিকায় তাঁদের নাম ছিল। কিন্তু চূড়ান্ত তালিকায় তা বাদ পড়ে যায়। এরপরেই ওই দু’জনকে ভর্তির দাবিতে জানুয়ারির শেষ থেকে আন্দোলন শুরু করেন পড়ুয়াদের একাংশ। সপ্তাহ খানেক আগেই ভর্তি নেওয়ার দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় ভবনের ছাদে চড়েও বসে শেখ সুখচাঁদ। রীতিমতো হুমকি দিয়ে সুখচাঁদ জানান, ভর্তি না নিলে তিনি আত্মঘাতী হবেন। পরে সুখচাঁদকে ছাদ থেকে নামানো গেলেও পড়ুয়াদের একাংশ দিন তিনেক ধরে অবস্থান, বিক্ষোভ চালিয়ে যেতে থাকেন।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যদিও প্রথম থেকেই সাফ জানিয়ে দেয়, চূড়ান্ত তালিকার কোনও বদল হবে না। টিএমসিপি-র রাজ্য সভাপতি অশোক রুদ্রেরও দাবি, শেখ সুখচাঁদকে নিয়ম বর্হিভূত কাজ করায় আগেই দল থেকে বাদ দেওয়া হয়। ঘটনার সঙ্গে টিএমসিপি-র কোনও যোগ নেই। ছাত্র সংসদের একাংশ পড়ুয়াও কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তকেই সমর্থন জানান।

বুধবারও শেখ সুখচাঁদ ও তাঁর সঙ্গী আলমগির মণ্ডলের ভর্তির দাবিতে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারকে ঘেরাও করেন টিএমসিপি সমর্থক পড়ুয়াদের একাংশ। ক্যাম্পাসে মোতায়েন করা হয় প্রচুর পুলিশ। নজরে পড়ে র্যাফের টহলও। প্রায় ঘন্টা ছয়েক অবস্থানের পর বিকেল চারটে নাগাদ জনা তিরিশেক ছাত্রছাত্রী উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারের দফতরে ঢোকার চেষ্টা করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তারক্ষী ও পুলিশ তাঁদের বাধা দেয়। পড়ুয়ারা জোর করে উপরে ওঠার চেষ্টা করলে পুলিশের সঙ্গে হাতাহাতিও বেঁধে যায়। ওই ঘটনার জেরে দুই নিরাপত্তারক্ষী ও এক ছাত্রী-সহ মোট ৩ জন বিক্ষোভকারী চোট পান। আহত ছাত্রীর অভিযোগ, ওপরে ওঠার সময় এক পুরুষ পুলিশকর্মী তাঁর হাতে লাঠি দিয়ে মারেন। তাঁকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ। এক ছাত্রকেও পুলিশ লাঠি চালিয়ে মাটিতে ফেলে দেয় বলে অভিযোগ। এরই প্রতিবাদে পড়ুয়ারা সহ-উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারের ঘরের সামনে শুয়ে পড়ে অবরোধ শুরু করেন। যদিও লাঠি চালানোর কথা অস্বীকার করে পুলিশ।

শেষ পর্যন্ত ওইদিন রাত সাড়ে আটটা নাগাদ পুলিশি পাহারায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়েন বিকেল থেকে ঘেরাও হয়ে থাকা সহ উপাচার্য ও রেজিস্ট্রার। কিন্তু তারপরেও পড়ুয়াদের জমায়েত চলতে থাকে রাজবাটি ক্যাম্পাসে। রাত একটা নাগাদ পুলিশ বিক্ষোভকারী পড়ুয়াদের বাইরে যেতে বললেও তাঁরা জানিয়ে দেন, দাবি না মেটা পর্যন্ত অবস্থান চলবে। তারপরেই পুলিশ মোট ৭ জনকে বেআইনি জমায়েত, সম্পত্তি নষ্ট, নিরাপত্তা কর্মীদের মারধর ও মানসিক নির্যাতনের দায়ে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আসে। পড়ুয়াদের একাংশও থানায় জমা হয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE