Advertisement
০৫ মে ২০২৪

জুতো খুলে মেঝেয় বসেই ক্লাস খুদেদের

দুই বর্ধমান জেলার প্রায় সাড়ে চার হাজার প্রাথমিক স্কুলের মধ্যে অন্তত সাড়ে তিন হাজার স্কুল চেয়ার-বেঞ্চের অভাবে ভুগছে বলে প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের কাছে আবেদন করেছে।

মেঝেয় চলছে ক্লাস। নিজস্ব চিত্র

মেঝেয় চলছে ক্লাস। নিজস্ব চিত্র

সৌমেন দত্ত
বর্ধমান শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০১৮ ০১:১৭
Share: Save:

সরকারের তরফে খুদে পড়ুয়াদের জুতো দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। জুতো পরে ব্যাগ কাঁধে স্কুলে হাজির হচ্ছে পড়ুয়ারা। কিন্তু ক্লাসে পৌঁছে অনেককেই পা থেকে জুতো খুলে ফেলতে হচ্ছে। কারণ, চেয়ার-বেঞ্চ নেই। পড়াশোনা করতে হয় মেঝেতে বসেই। মেঝেতে জুতো পরে বসতে অসুবিধা হওয়ায় তা খুলে ফেলে বহু পড়ুয়াই। দুই বর্ধমান জেলার প্রায় সাড়ে চার হাজার প্রাথমিক স্কুলের মধ্যে অন্তত সাড়ে তিন হাজার স্কুল চেয়ার-বেঞ্চের অভাবে ভুগছে বলে প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের কাছে আবেদন করেছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ অবশ্য জানায়, পড়ুয়া অনুপাতে চেয়ার-বেঞ্চ কেনার জন্য টাকা দেওয়া হবে স্কুলগুলিকে। সংসদের সভাপতি অচিন্ত্য চক্রবর্তী বলেন, “৫ জন পড়ুয়া পিছু একটি করে চেয়ার-বেঞ্চ বরাদ্দ হবে স্কুলগুলিতে।” জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ সূত্রে জানা যায়, আবেদনকারী স্কুলগুলির মধ্যে চেয়ার-বেঞ্চ শূন্য স্কুলের সংখ্যা প্রায় দু’হাজার। বাকি স্কুলগুলি বিভিন্ন পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি, বিধায়ক তহবিল থেকে চেয়ার-বেঞ্চ পেয়েছে। এ ছাড়াও সড়ক বা রেলের বিভিন্ন ঠিকাদার সংস্থাও নানা স্কুলকে চেয়ার-বেঞ্চ কিনতে সাহায্য করছে।

মঙ্গলকোটের একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক সিদ্ধার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “চেয়ার-বেঞ্চ না থাকায় শীতকালে পড়ুয়াদের খুব অসুবিধা হয়। জুতো পরে মাটিতে বসতেও ওদের সমস্যা হয়। অনেক পড়ুয়াই জুতো আঁকড়ে বসে থাকে।” গোড়ার দিকে পড়ুয়াদের কেউ-কেউ জুতো খুলে ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখছে দেখে শিক্ষকেরা ক্লাসঘরের বাইরে জুতো খোলার কথাও বলেছেন। কিন্তু তাতে বিপদে পড়েছেন নানা স্কুলের শিক্ষকেরাই। জামুড়িয়ার এক প্রধান শিক্ষকের কথায়, “প্রতিদিনই জুতো পাল্টে গিয়েছে বলে কান্নাকাটি করছিল পড়ুয়ারা। সে জন্য অন্য ব্যবস্থা নিয়েছিলাম। দু’তিন দিন যাওয়ার পরে সেই ব্যবস্থাও বিফলে গিয়েছে!”

রায়নার একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষিকার কথায়, “অনেক পড়ুয়া নিজে জুতো ঠিক ভাবে পরতে পারে না। স্কুলে এসে খুলে রাখার পরে ফের জুতো পরতে সাহায্য করতে হয় শিক্ষক-শিক্ষিকাদের।” অভিভাবকদের অনেকে জানান, আগে স্কুলে পেন-পেনসিল হারিয়ে আসত ছাত্রছাত্রীরা। এখন জুতো পাল্টাপাল্টি করে ফেলছে। নিয়মিত এই সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।

সমস্যার কথা মানছে শিক্ষক সংগঠনগুলিও। বামপন্থী একটি সংগঠনের নেতা স্বপন মালিকের কথায়, “জুতো নিয়ে পড়ুয়ারা কোথায় রাখবে, বুঝতে পারে না। ক্লাসঘরের বাইরে রাখলে হারিয়ে যায়। ভিতরে নিয়ে গেলে বসতে পারে না।” তৃণমূলপন্থী প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠনের সভাপতি তপন পোড়েলের কথায়, “অসুবিধা দূর করতে আমরা স্কুলগুলিকে চেয়ার-বেঞ্চ দেওয়ার দাবি জানিয়েছি।” অচিন্ত্যবাবু বলেন, “চেয়ার-বেঞ্চ কেনার জন্য ১২ কোটি টাকা এসেছে। শীঘ্রই স্কুলগুলিকে টাকা দেওয়া হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Education School Floors Student
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE