Advertisement
০৫ মে ২০২৪

অভাবের বাধা পার তিন কন্যার

বাবা দোকানের সামান্য কর্মী। কানে হেডফোন গুঁজে দিনের বেশির ভাগ সময়েই এই মেয়েকে দেখা যায় বই হাতে অথবা রং-তুলি নিয়ে ক্যানভাস রাঙাতে। ছাত্রীটি, রানিগঞ্জের বল্লভপুরের অনুশ্রী দাস।

বাঁ দিকে, শালপাতার থালা তৈরিতে ব্যস্ত দেবতি মুর্মু। মাঝে, দুর্গাপুরের অনন্যা মৈত্র। ডান দিকে, রানিগঞ্জের অনুশ্রী দাস। নিজস্ব চিত্র

বাঁ দিকে, শালপাতার থালা তৈরিতে ব্যস্ত দেবতি মুর্মু। মাঝে, দুর্গাপুরের অনন্যা মৈত্র। ডান দিকে, রানিগঞ্জের অনুশ্রী দাস। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০১৮ ০০:২৮
Share: Save:

সূর্যের আলো সবে উঁকিঝুঁকি মারছে জঙ্গলের আনাচেকানাচে। ততক্ষণে অবশ্য জেগে গিয়েছে মেয়েটি। দ্রুত চোখ বোলাচ্ছে বইয়ের পাতায়। কারণ খানিক বাদেই মায়ের সঙ্গে বসতে হবে শালপাতার থালা তৈরির কাজে। ছোট থেকে এটাই ‘রুটিন’ কাঁকসার পিয়ারিগঞ্জের দেবতি মুর্মুর।

বাবা দোকানের সামান্য কর্মী। কানে হেডফোন গুঁজে দিনের বেশির ভাগ সময়েই এই মেয়েকে দেখা যায় বই হাতে অথবা রং-তুলি নিয়ে ক্যানভাস রাঙাতে। ছাত্রীটি, রানিগঞ্জের বল্লভপুরের অনুশ্রী দাস।

বাবা যকৃতের জটিল সমস্যায় ভুগছেন দীর্ঘ দিন। রোজগার সামান্যই। কিন্তু তাঁরই মেয়ে দুর্গাপুরের টেটিখোলার অনন্যা মৈত্র।— বাড়িতে অভাব। কিন্তু সেই অভাবের পাহাড় ডিঙিয়ে এই তিন কন্যাই এ বারের মাধ্যমিকে খুশির ঝিলিক এনেছে পরিবারে। দেবতি, অনুশ্রী ও অনন্যার মাধ্যমিকের ফলে প্রাপ্ত নম্বর, শতাংশের বিচারে প্রায় ৭০, ৯২ ও সাড়ে ৯২ শতাংশ।

এক চিলতে বাড়ির দাওয়াই বসে পিয়ারিগঞ্জ চারুচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের মাধ্যমিকের সেরা ছাত্রী দেবতি বলে চলে তার কথা। বাবা বুধন ও মা রাসমণি, দু’জনেই পেশায় দিনমজুর। রাসমণিদেবী জানান, ভোর চারটেয় মেয়ে ঘুম থেকে উঠে পড়তে বসত। তার কয়েক ঘণ্টা বাদে লেগে প়়ড়া, শালপাতার থালা তৈরির কাজে। দুপুরে বা ছুটির দিনে জঙ্গলে গিয়ে শালপাতা সংগ্রহ, তা-ও করেছে সে, জানায় দেবতি। সে জানায়, ভবিষ্যতে শিক্ষক হতে চায়। ছাত্রীর ফলাফলে গর্বিত স্কুলের প্রধান শিক্ষক সত্যরঞ্জন ঘোষ বলেন, ‘‘আমরা চাই দেবতির দৃষ্টান্তে আরও অনেকে এলাকা থেকে উঠে আসুক।’’

বাড়ির অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে চিন্তা ছিল বল্লভপুর রামগোপাল সরাফ বিদ্যাপীঠের অনুশ্রী দাসেরও। বল্লভপুর বৈষ্ণবপাড়ার বাসিন্দা, অনুশ্রীর বাবা তরুণ দাস গ্যাসের দোকানে কাজ করেন। অনুশ্রীর মা রুমাদেবী বলেন, ‘‘মেয়ে ভবিষ্যতে বিজ্ঞান নিয়ে প়়ড়তে চায়। কিন্তু ওর বাবার মাসে আয় চার হাজার টাকা। কী হবে ভবিষ্যতে জানি না।’’ তবে নিজের এই ফলাফলের জন্য স্কুলের শিক্ষকদের ধন্যবাদ জানাচ্ছে অনুশ্রী।

পড়াশোনা করতে গিয়ে একই রকম প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়েছে টেটিখোলার অনন্যা মৈত্রকে। অনন্যার বাবা অমিতবাবু আঁকার শিক্ষক। মা তন্দ্রাদেবী গৃহবধূ। অনন্যা জানায়, ভবিষ্যতে সে চিকিৎসক হতে চায়। কিন্তু শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের গল্পের বইয়ের ভক্ত অনন্যার আশঙ্কা, এই স্বপ্নপূরণ বাড়ির আর্থিক অবস্থায় সম্ভব হবে কি না। অমিতবাবুও বলেন, ‘‘আর্থিক কারণে উচ্চশিক্ষা বন্ধ হয়ে যাবে কি না, তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছি।’’

তবে অনন্যাকে নিয়ে আশাবাদী স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা মৈত্রী ধর। তাঁর কথায়, ‘‘বরাবরের মেধাবী অনন্যা। ইংরেজি ও অঙ্কে নম্বর আরও একটু ভাল হতে পারত। উচ্চ মাধ্যমিকে এটা পুষিয়ে যাবে বলে আশা করছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE