Advertisement
১১ মে ২০২৪

পিকে-দলের নজরে ‘বন্দি’ বিধায়কেরা  

তৃণমূল সূত্রে জানা যায়, ভোট-কৌশলী প্রশান্ত কিশোরের দলের সদস্যেরা বিধায়কদের কোন গ্রামে যেতে হবে, কাদের সঙ্গে কথা বলতে হবে এমনকি, কোন বাড়িতে রাতের খাবার খাবেন সেটাও ঠিক করে দিচ্ছেন।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০১৯ ০০:০১
Share: Save:

পরিজন অসুস্থ, আদিবাসী পরিবারের সঙ্গে রাতের খাবার খেয়ে সাড়ে ৮টা নাগাদ বাড়ি চলে যাওয়ার কথা ‘ঘনিষ্ঠ’দের বলেছিলেন বিধায়ক। কর্মসূচি গোটানোও হচ্ছিল। তার মধ্যেই সওয়া ৮টা নাগাদ একটি ফোন আসে। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, মিনিটখানেক কথা বলার পরেই বাড়ি ফেরার তাড়া কমে যায় বিধায়কের।

তৃণমূল সূত্রের খবর, ফোনটি এসেছিল ‘পিকে টিমে’র (‌ভোট-কৌশলী প্রশান্ত কিশোরের দল) তরফে। বিধায়কের কাছে তাঁরা জানতে চান, রাতে না থাকতে চাওয়ার কথা ঠিক কি না। বিধায়ক জানান, বাড়িতে এক জন অসুস্থ। তাঁর থাকাটা জরুরি। ও প্রান্ত থেকে ‘নির্দেশ’ আসে, ‘এ রকম তো হতেই পারে। তবে রাত ১০টার আগে গ্রাম ছাড়বেন না।’ ফোন রেখেই বিধায়ক বলেন, ‘‘আমাদের মধ্যেই পিকে টিমের লোক রয়েছে। না হলে ভাবনার কথাটাও কলকাতায় পৌঁছে যায়!’’

তৃণমূল সূত্রে জানা যায়, ভোট-কৌশলী প্রশান্ত কিশোরের দলের সদস্যেরা বিধায়কদের কোন গ্রামে যেতে হবে, কাদের সঙ্গে কথা বলতে হবে এমনকি, কোন বাড়িতে রাতের খাবার খাবেন সেটাও ঠিক করে দিচ্ছেন। কর্মসূচির নানা তথ্য, ছবিও পাঠাতে হচ্ছে নির্দিষ্ট করে দেওয়া হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর বা অন্য কোনও মাধ্যমে। তার সঙ্গেই গ্রামের দু’জনকে বেছে নিয়ে বিধায়কদের গতিবিধির উপর ‘নজর’ রাখার নির্দেশ দিচ্ছেন। তাঁদের মাধ্যমেই খবর চলে যাচ্ছে প্রশান্ত কিশোরের দলের কাছে। বিধায়কদের সঙ্গে ব্লক সভাপতিদের মধ্যে এই কর্মসূচি নিয়ে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে কি না, সে ব্যাপারেও খোঁজখবর করছেন ওই দলের সদস্যরা। তৃণমূলের দাবি, এক ব্লক সভাপতিকে বলা হয়েছে, এই কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে মানুষের মনে উৎসাহ বাড়াতে হবে। বিধায়কের উপর রাগ করে বাড়িতে বসে থাকলে হবে না।

নজরদারির অভিজ্ঞতা হয়েছে জেলার আর এক বিধায়কেরও। তিনি জানান, যে বাড়িতে গিয়েছিলেন সেখানে রাতে খাটিয়ায় শুতে যাওয়ার আগে বাড়ির শিশুদের সঙ্গে গল্প করছিলেন। এই গল্প করা ও তার পরে ঘুমিয়ে পড়ার ছবি পাঠানোটা আগে-পরে হয়ে যায়। মাঝরাতে ফোন করে পিকে টিমের এক জন বলেন, ‘ঘুমিয়ে পড়েছেন, আমরা ভাবলাম শিশুদের সঙ্গে গল্প করছেন’। ওই বিধায়কের কথায়, ‘‘বুঝুন, আমরা কতটা নজর-বন্দি হয়ে রয়েছি।’’

আর এক বিধায়কের কথায়, “পিকের সদস্যেরা যে কোথায় লুকিয়ে রয়েছেন, বুঝতেই পারছি না! আমরা কী বলছি সেটাও জেনে যাচ্ছে। দিনে ২০-২৫ বার ওঁদেরই কৈফিয়ত দিতে হচ্ছে।’’ বিধায়করা গ্রামে পা রাখা ইস্তক নানা রকম ছবি পাঠাতে হচ্ছে। গ্রামের লোকের প্রতিক্রিয়াও জানাতে হচ্ছে পিকের সদস্যদের।

এক বিধায়কের সঙ্গী, পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য নিত্যানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ছবি পাঠাতে দেরি হলে কিংবা কোনও কর্মসূচির ছবি আগে, পরে হয়ে গেলেই ফোন আসছে। মারাত্মক জাল বিছিয়ে রেখেছে। ফাঁকি দেওয়ার কোনও উপায় নেই।’’

জেলা তৃণমূল সভাপতি স্বপন দেবনাথ বলেন, ‘‘ওঁরা খোঁজ নিচ্ছেন। যেমন নির্দেশ দিচ্ছেন তেমনই কাজ করছি আমরা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC MLA Prashant Kishor
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE