Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
কুলটিতে প্রকাশ্যে তৃণমূলের দ্বন্দ্ব

সভা করে বিধায়ককে তোপ দলের নেতাদের

চাপানউতোর চলছিল অনেক দিন ধরেই। শেষমেশ তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দল প্রকাশ্যে এসে পড়ল কুলটিতে। কর্মী সম্মেলনের আয়োজন করে দলেরই বিধায়ক ও তাঁর অনুগামীদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগে সরব হলেন কুলটি পুরসভার প্রাক্তন উপ-প্রধান তথা তৃণমূল নেতা বাচ্চু রায় ও তাঁর ঘনিষ্ঠ নেতারা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কুলটি শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০১৫ ০১:১৩
Share: Save:

চাপানউতোর চলছিল অনেক দিন ধরেই। শেষমেশ তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দল প্রকাশ্যে এসে পড়ল কুলটিতে।

কর্মী সম্মেলনের আয়োজন করে দলেরই বিধায়ক ও তাঁর অনুগামীদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগে সরব হলেন কুলটি পুরসভার প্রাক্তন উপ-প্রধান তথা তৃণমূল নেতা বাচ্চু রায় ও তাঁর ঘনিষ্ঠ নেতারা। বিধায়কের নানা কাজকর্মে দলের ভাবমূর্তি খারাপ হচ্ছে বলে দাবি করেছেন তাঁরা। শিল্পাঞ্চলে তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত কুলটিতে দলের এমন অভ্যন্তরীণ বিবাদ সামনে এসে পড়ায় চিন্তায় পড়েছেন তৃণমূল নেতারা। যদিও দলের প্রয়োজনীয় অনুমতি না নিয়ে আয়োজন করা ওই কর্মী সম্মেলন বৈধ নয় বলে দাবি করেছেন দলের জেলা (শিল্পাঞ্চল) কার্যকরী সভাপতি ভি শিবদাসন। গোটা বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে চাননি স্থানীয় বিধায়ক উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়ও।

বছর দুয়েক আগে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন বাচ্চুবাবু। শনিবার কুলটির লছিপুরে ব্রহ্মচারী মাঠে ওই কর্মিসভার উদ্যোক্তা ছিলেন তিনিই। উচ্চ নেতৃত্বের অনুমতি নিয়েই সভা করা হয়েছে বলে আয়োজকদের দাবি। এই সভায় যোগ দেন তৃণমূলের প্রদেশ সদস্য রবিন লায়েক, দলের কৃষক সংগঠনের জেলা সভাপতি গোবিন্দ মাজি, প্রাক্তন উপপ্রধান মহম্মদ আখতার। ছিলেন হাজার দুয়েক কর্মী-সমর্থক। তাঁদের আক্রমণের মূল লক্ষ্য ছিলেন বিধায়ক উজ্জ্বলবাবু ও তাঁর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত দলের ব্লক সভাপতি মহেশ্বর মুখোপাধ্যায়।

সভার শুরুতেই রবিনবাবু দাবি করেন, ‘‘বিধায়কের চক্রান্তেই গত লোকসভা ভোটে কুলটি বিধানসভা এলাকা থেকে আমাদের প্রার্থী কম ভোট পেয়েছেন।’’ তাঁর আরও দাবি, বিধায়কের একতরফা সিদ্ধান্তেই কুলটিতে তৃণমুলের ভরাডুবি হচ্ছে। প্রদেশ সদস্য হওয়া সত্ত্বেও দলের নীতি-নির্ধারণে বিধায়ক তাঁকে কখনও ডাকেন না বলেও অভিযোগ তাঁর। গোবিন্দবাবুর আবার অভিযোগ, ‘‘সাধারণ কর্মী-সমর্থক তো বটেই, জেলা স্তরের পদাধিকারীদেরও অসম্মান করেন বিধায়ক।’’ এই ভাবে দল টিকিয়ে রাখা মুশকিল বলেই বিরোধিতায় নেমেছেন বলে দাবি করেন তাঁরা।

পুরসভার প্রাক্তন উপপ্রধান মহম্মদ আখতার আবার অভিযোগ করেন, পুরসভায় নানা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে আছেন উজ্জ্বলবাবু ও দলের কুলটি ব্লক সভাপতি মহেশ্বরবাবু। বিপিএল তালিকাভুক্তদের বাড়ি তৈরি, জমি কেলেঙ্কারি থেকে নানা উন্নয়নমূলক পরিকল্পনার টাকা নয়ছয় হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। তাঁর দাবি, কুলটির জলপ্রকল্প শেষ না হওয়ার জন্য দায়ী তৎকালীন পুরপ্রধান উজ্জ্বলবাবুই। মহম্মদ আখতারের অভিযোগ, ‘‘অবৈধ কয়লা কারবারে জড়িত মহেশ্বর মুখোপাধ্যায়কে সঙ্গে নিয়ে কুলটিতে তৃণমূলের সংগঠনকে কার্যত শেষ করে দিচ্ছেন উজ্জ্বলবাবু।’’ বাচ্চুবাবু তাঁর বক্তব্যে এক বারও উজ্জ্বলবাবুর নাম না করেও অভিযোগ করেন, ‘‘আমাদের এলাকার বিধায়ক বিজেপির হাতে তামাক খেয়ে দলকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যাচ্ছেন।’’ তাঁর দাবি, দলের সর্বস্তরের কর্মীরা মিলে তা রুখবেন।

তৃণমূল সূত্রের খবর, বাচ্চুবাবু কংগ্রেসে ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার সময়ে তাঁকে দলে নেওয়ার ব্যাপারে মত ছিল না উজ্জ্বলবাবুর। কিন্তু উচ্চ নেতৃত্বের হাত ধরে তৃণমূলে আসেন বাচ্চুবাবু। তার পর থেকেই কুলটিতে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে তৃণমূলে। তবে আগে কখনও এ ভাবে তা প্রকাশ্যে আসেনি। তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ প্রসঙ্গে তৃণমূলের ব্লক সভাপতি মহেশ্বরবাবু বলেন, ‘‘বললেই তো হয় না। আমি যে অবৈধ কয়লার কারবারে জড়িত তার প্রমাণ দিক।’’ বিধায়ক উজ্জ্বলবাবুর সাফ কথা, ‘‘অনেকেই অনেক কিছু বলে। আমি এই সব কথার গুরুত্ব দিতে চাই না। তাই কোনও মন্তব্য করব না।’’

তৃণমূলের বর্ধমান জেলা (শিল্পঞ্চল) কার্যকরী সভাপতি ভি শিবদাসন বলেন, ‘‘দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ব্লক সভাপতির অনুমতি না নিয়ে কোনও সভা করা যায় না। আমি খোঁজ নিয়ে দেখেছি, এ ক্ষেত্রে তা করা হয়নি। তাই ওই সভা অবৈধ। দল অনুমোদন করছে না। যাঁরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন তাঁদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE